বাংলা

কোভিড-১৯ মহামারী এবং একটি সমাজতান্ত্রিক কৌশল প্রয়োজনীয়তা (এম দেবরাজ  বলতে শুরু করেন)   

এসইপি (শ্রীলঙ্কা) রাজনৈতিক কমিটির সদস্য এম. তেভারাজা এসইপি (শ্রীলঙ্কা) আয়োজিত একটি সভায় নিম্নলিখিত বক্তব্যটি দিয়েছিলেন, 'কোভিড -১৯ মহামারী  এবং সমাজতান্ত্রিক কৌশলের প্রয়োজনীয়তা।' শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে শ্রমিক ও যুবকদের উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই বৈঠকটি ৩০ শে মে অনুষ্ঠিত   হয়েছিল।

কোভিড-১৯ মহামারী এবং একটি সমাজতান্ত্রিক কৌশল প্রয়োজনীয়তা (এম দেবরাজ  বলতে শুরু করেন)   

কমরেডস,

মহামারী এবং সমাজতান্ত্রিক কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই   সভা যা পুঁজিবাদের কারণে  বিধ্বস্ত আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

COVID-19 মহামারীটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং আরো অনেক যায়গায় কর্পোরেশন এবং সরকারগুলিকে প্রতিরোধ করার জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে যা  মানব জীবনের আগে মুনাফার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অপরাধমূলক নীতি অনুসরণ করেছে।

র‌্যাঙ্ক-এন্ড ফাইল কমিটিগুলির একটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক জোটের জন্য মে দিবসে চতুর্থ আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটির ডাকা সমাবেশে করা আহ্বান এই পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত। 

প্রতিটি দেশে কর্মক্ষেত্রে র‌্যাঙ্ক-ফাইল ফাইল কমিটি গঠন এবং তাদের আন্তর্জাতিক জোট শ্রমিক শ্রেণীকে পুঁজিবাদী শ্রেণীর দ্বারা চালিত হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ গড়ে  তোলার পথ প্রস্তুত করবে।

অর্থপিপাসু আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের লাভের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতে ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার গর্জন করা মহামারীতে শ্রমিকদের জীবন উৎসর্গ করছে। এই বেপরোয়া ও হত্যাকারী নীতির বিরুদ্ধে ভারতের বহু মিলিয়ন শ্রমিকদের্ সামাজিক বিরোধীতা দ্রুত বাড়ছে।

গত সপ্তাহে, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরুম্বুদুর-ওরাগাদম শিল্প তালুকে হুন্ডাই  মোটর এবং রেনল্ট-নিসান বহুজাতিক সংস্থাগুলির শ্রমিকদের অশান্তি শুরু হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা COVID-19 সুরক্ষার অভাবে অনিরাপদ বিপজ্জনক অবস্থায় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, কারণ কয়েক শত সংক্রামিত   হয়েছিল এবং প্রায় ২০ জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে।

অন্য একটি শিল্প তালুক গুডগাঁওয়ে কোভিড -১৯ সংক্রমণের সাম্প্রতিক প্রবাহের সময় ২০ জনেরও বেশি শ্রমিক মারা গেছেন। এর মধ্যে গুড়গাঁওয়ের মারুতি সুজুকির প্লান্টে পাঁচ জন শ্রমিক,  হোন্ডা প্লান্টে দু'জন শ্রমিক এবং টাটা মোটর এর একজন শ্রমিক রয়েছে।

মোদী সরকার এপ্রিলের শেষের দিকে থেকে অর্থনীতি পুনরায় চালু করতে শুরু করেছে এবংমহামারীটিকে দ্রুত ব্যবহার করেছে ক্ষমতাসীন শ্রেণীর বিনিয়োগকারী সমর্থক কর্মসূচির  মাধ্যমে। গত অক্টোবরে তাঁর সরকার প্রতিটি সেক্টরে ঠিকাদারি শ্রমিক ব্যাবহার  করার জন্য আইন পাস করেছেন। বিশাল কৃষিক্ষেত্রে আন্তদেশীয় কৃষি সংস্থাগুলির ব্যাবসার জন্য কৃষি বিলগুলি পাস করা হয়েছিল।    

যদিও কোনও রেকর্ড উপলভ্য নয়, প্রতিবেদনগুলিতে দেখা যায় যে শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক হাজারের মৃত্যু ঘটেছে এবং কয়েকশো হাজার সংক্রামিত হয়েছে। আরও কয়েক'শ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাদের স্থায়ী চাকরি না থাকায় । 

তবে মোদী জীবন বাঁচাতে অপ্রয়োজনীয় শিল্প ও কাজ বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়। শ্রমিকদের  কাছ থেকে লাভ আহরণের জন্য সর্বোত্তম শর্ত তৈরি করতে তার নীতিটি হ'ল 'লকডাউন থেকে ভারতকে বাঁচান'।

ভয়াবহ কাজের পরিস্থিতি, দারিদ্র্য-স্তরের মজুরি, চাকরি হ্রাস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে ভারতজুড়ে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছরের ২৬শে  নভেম্বর লক্ষ লক্ষ শ্রমিক নতুন শ্রম আইনের বিরোধিতা করতে এবং মহামারীজনিত কারণে যাদের আয়ের ক্ষতি হয়েছে তাদের সামাজিক সমর্থনের দাবিতে একদিনের জাতীয় ধর্মঘটে  যোগ দিয়েছিলেন। গত নভেম্বর মাসে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করা কৃষকরা  তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

তবে, প্রতিটি দেশের মতোই শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়নগুলির মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের সংগ্রামকে বাধা দিচ্ছে। ভারতে স্ট্যালিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া-মার্কসবাদী (সিপিএম) এর নেতৃত্বে সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন সহ পুঁজিবাদী সমর্থক ইউনিয়নগুলি সকল শ্রমিকদের সংগ্রামকে পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যে রেখে দমন ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

শ্রমিকদের চাকরি, মজুরি এবং সর্বোপরি মহামারী দ্বারা সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞকে চ্যালেঞ্জ করার পরিবর্তে ইউনিয়নগুলি প্রকৃতপক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার এবং পুঁজিবাদী শ্রেণীর নীতি সমর্থন করে।

এই বিষয়টি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে সত্য। এই বিষয়ে, আমি শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতে চাই।

রাষ্ট্রপতি গোটাভায়া রাজাপাকসে বৃহস্পতিবার বন্দর, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ, কেন্দ্রীয়  ব্যাংক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, বাস ও রেলপথ পরিবহণ সহ প্রায় সকল রাষ্ট্রীয় আবশ্যক পরিষেবাগুলির জন্য একটি কঠোর পরিষেবা আদেশ জারি করেছেন। তাত্ক্ষণিক কারণটি ছিল ১২,০০০ সরকারী গ্রাম কর্মকর্তাদের টিকা দেওয়ার দাবিতে  ধর্মঘট। তবে সরকার আশঙ্কা করছে যে এর ফলে অবনতিশীল জীবনযাপনের পরিস্থিতি এবং মহামারীটির বোঝার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হতে পারে।

একটিও ট্রেড ইউনিয়ন এই প্রয়োজনীয় পরিষেবা আদেশের বিরোধিতা করেনি, যা শিল্প  ব্যবস্থাতে যে কোনো বাধায় কঠোর শাস্তির আদেশ দিয়েছে।   

ইউনিয়নগুলি অর্থনীতি পুনরায় চালু করতে সরকার এবং নিয়োগকারীদের নীতিকে সরাসরি সহযোগিতা করছে। কর্মক্ষেত্রগুলি, বিশেষত গার্মেন্টস কারখানাগুলি COVID-19 সংক্রমণের মূলক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কয়েক হাজার শ্রমিক সংক্রামিত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার ফ্রি ট্রেড জোন এবং জেনারেল সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতা অ্যান্টনি মার্কাস ঘোষণা করেছেন যে তাঁর ইউনিয়ন অসুস্থ কর্মীদের জন্য অন্তর্বর্তী হাসপাতাল স্থাপনে সমর্থন করে এবং বাকিরা কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দেয়।

সিলন ওয়ার্কাস কংগ্রেস এর নেতা জীবন থন্ডম্যান, যিনি রাজাপাকসে সরকারের মন্ত্রী  ছিলেন, গত সপ্তাহে বাগান কর্মীদের বলেছিলেন: “কোভিড -১৯ সম্পর্কে ভয় পাবেন না।  আপনার দু'হাত ব্যবহার করা উচিত এবং চা পাতা তোলা উচিত। আপনি যদি  আয়  বাড়ান তবে আপনি উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। ইউনিয়নগুলি এভাবেই সংস্থাগুলির টাকার থলি মোটা করার জন্য নিবেদিত।

এই বছরের গোড়ার দিকে তার ইউনিয়ন কয়েকশ শ্রমিককে ফাঁসানোর জন্য এবং ৩৮ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করার জন্য সরাসরি অল্টন এস্টেট সংস্থা এবং পুলিশের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিল। কেবল সমাজতান্ত্রিক সমতা পার্টি শ্রমিকদের মধ্যে এই ডাইনি খোজার বিরোধিতা করেছিল এবং তাদের রক্ষার জন্য লড়াই করছে, যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তাদের মুক্তি এবং বরখাস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন দাবি করেছে।

মহামারীটি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে যে এই ইউনিয়নগুলি প্রকৃতভাবে পুঁজিবাদী শ্রেণী এবং তার রাষ্ট্রের সাথে আবদ্ধ।

শ্রমিকরা কেবল তাদের স্বাস্থ্য এবং তাদের জীবন সহ অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে,  যদি তারা ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, যা পুঁজিবাদী লাভ ব্যবস্থার প্রতিরক্ষায় নিবেদিত। তাদের ট্রেড ইউনিয়নগুলির থেকে পৃথক, প্রতিটি কারখানা ও কর্মক্ষেত্রে র‌্যাঙ্ক এবং ফাইল কমিটি তৈরি করতে হবে। তারপরেই শ্রমিকরা তাদের স্বাধীন শক্তি জোগাড় করে সরকারের এবং বড় ব্যবসায়ীদের নীতিগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে    পারবে।

মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই কেবলমাত্র বিশ্ব জুড়ে চালানো যেতে পারে। চতুর্থ  আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটি’র হিসাবে, এর সমাজতান্ত্রিক সমতা দল এবং ওয়ার্ল্ড  সোশালিস্ট ওয়েব সাইট ব্যাখ্যা করেছে, মহামারীটি কোনও জাতীয় সীমানা জানে না।

শ্রমিকরা পুঁজিবাদের সাধারণ হুমকির মুখোমুখি, পুঁজিবাদ যা তার মৃত্যুর যন্ত্রণায়, শ্রমিকদের আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। এটি করার জন্য, শ্রমিকদের অবশ্যই প্রতিটি ধরণের সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে যা শ্রমিক শ্রেণিকে বিভক্ত ও পঙ্গু করার জন্য পুঁজিবাদী শ্রেণী এবং তাদের সরকার ব্যাবহার করে।

আমরা ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং এই অঞ্চলজুড়ে শ্রমিকদেরকে র‌্যাঙ্ক-অ্যান্ড-ফাইল কমিটির  আন্তর্জাতিক শ্রমিক জোট গঠনের সংগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। এটি আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচির লড়াই এবং চতুর্থ আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটি  গঠনের সাথে সম্পূর্ণ আবদ্ধ।

Loading