বাংলা

ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর সামাজিক দূর্দশার মধ্যে মোদির সহায়তায়, গৌতম আদানি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যাক্তি

গত মাসে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি, আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, ১৬ই সেপ্টেম্বর ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ার র‌্যাঙ্কিং-এ LVMH চেয়ারম্যান এবং সিইও বার্নার্ড আর্নল্টকে ছাড়িয়ে $১৫৫.৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সাথে অল্প সময়ের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হন।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্তর আকাশে আদানির আরোহণ ভারতীয় মিডিয়াতে বিজয়ী প্রতিবেদনের সূচনা করেছে। এটি ভারতের পুঁজিবাদী 'উত্থানের' আরও প্রমাণ হিসাবে আদানির ব্যক্তিগত সম্পদের অশ্লীল সঞ্চয়কে উদযাপন করেছে। এটি এমন একটি দেশে যেখানে কোটি কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে এবং জনসংখ্যার অন্তত এক চতুর্থাংশ নিরক্ষর।

আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ভারতের গান্ধীনগরে ৯তম ভাইব্রেন্ট গুজরাট গ্লোবাল সামিট (VGGS) এর উদ্বোধনের সময়, বক্তব্য রাখছেন। শুক্রবার, ১৮ই জানুয়ারী, ২০১৯ [AP Photo/Ajit Solanki]

আদানি গ্রুপের শেয়ারের মূল্য তখন থেকে কমে যাবার ফলে আদানির সম্পদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফোর্বস বর্তমানে অনুমান করেছে যে তার এবং তার পরিবারের $১৩১.৮ বিলিয়ন (১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশী) সম্পদ রয়েছে, যা তার বিলিয়নেয়ার তালিকায় চতুর্থ স্থানের জন্য যথেষ্ট, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ($১৪৪ বিলিয়ন), আর্নল্ট এবং ইলন মাস্ক ($২৩০ বিলিয়ন) এর পরেই।

ভারতের জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিধ্বংসী সামাজিক বাস্তবতার মুখোমুখি, যা আদানি এবং অন্যান্য ভারতীয় বিলিয়নেয়ারদের দ্বারা ভোগ করা বিপুল সম্পদের একেবারে বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে, আদানির সংক্ষিপ্ত সময়ের বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হিসাবে অবস্থানে উত্থানের ঠিক একদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনায় এটা খুব স্পষ্ট ছিল। ১৫ই সেপ্টেম্বর, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে একজন গর্ভবতী মহিলাকে একটি ঋণ 'পুনরুদ্ধারকারী এজেন্ট' নির্মমভাবে হত্যা করে, যিনি তার উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে দিয়েছিলেন কারণ তার প্রতিবন্ধী কৃষক পিতা $১৬০০ ডলার পরিমাণ ঋণ শোধ করতে অক্ষম ছিলেন৷

আদানি এবং অন্যান্য শীর্ষ ভারতীয় ধনকুবেররা গত দুই বছরে ক্রমাগতভাবে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে, এমনকি ব্যাপক জনগণ যখণ মারাত্মক COVID-19 মহামারী দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে মাত্র ৫,২৯,০০০ COVID-19 মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা - যেমন অতিরিক্ত মৃত্যুর গবেষণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে - তা ৫০ লক্ষেরও বেশি। তদুপরি, ভারতীয় শাসক শ্রেণীর বিপর্যয়মূলক মহামারীর প্রতিক্রিয়া, যা মানুষের জীবনের চেয়ে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, এর ফলস্বরূপ শুধুমাত্র গণ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর একাধিক তরঙ্গই নয় বরং ব্যাপক বেকারত্ব এবং ক্ষুধার মহামারীতেও পরিণত হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, এটি অনুমান করা হয়েছিল যে আদানির সম্পদ আগের বছরের থেকে প্রতিটি দিন $১৯৮.৬ মিলিয়ন (১৬০০ কোটিরও বেশী) বেড়েছে, যা তার মোট সম্পদের সাথে প্রায় $৭০ বিলিয়ন যোগ করেছে। অপরদিকে মুকেশ আম্বানি, যিনি ২০২২ সালের শুরুতে ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার এর তালিকায় আদানির থেকে এগিয়ে ছিলেন এবং বর্তমানে বিশ্বের ১০ তম ধনী ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হন, গত ১২ মাসে 'শুধুমাত্র' প্রতিদিন অতিরিক্ত $ ২৫.৮ মিলিয়ন ডলার (২১০ কোটি) উপার্জন করেছিলেন।

আদানি, মুকেশ আম্বানি, তার ভাই অনিল আম্বানি এবং অন্যান্য বিলিয়নিয়ার অভিজাতরা ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু আধিপত্যবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করেছিল যাতে শ্রমিক শ্রেণীর উপর শ্রেণীযুদ্ধের আক্রমণ তীব্রতর হয় এবং আরও আক্রমণাত্মকভাবে ভারতীয় বুর্জুয়ারা ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনুসরণ করে, বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক-কৌশলগত সম্পর্কের মাধ্যমে।

মোদি এবং আম্বানিদের মতো, আদানিও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাট থেকে এসেছেন, যেখানে তিনি মোদি এবং তার ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন প্রধান সমর্থক ছিলেন যখন তারা জাতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করছে। আদানি প্লাস্টিক শিল্পে তার সূচনা করেছিল, কিন্তু তার প্রথম বড় উত্থান আসে ১৯৯০ এর দশকে, যখন গুজরাট রাজ্য সরকার মুন্দ্রা বন্দরের ব্যবস্থাপনা আউটসোর্স করে, যা আজকে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বন্দর। আদানি সরকারী চুক্তি পেয়েছিলেন, যা তাকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং প্লাস্টিক এবং ধাতু রপ্তানির মাধ্যমে লাভের অনুমতি দেয়। মধ্যবর্তী কয়েক দশক ধরে, তার ব্যবসায় সরকারী সহায়তা থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বেসরকারীকরণ এবং গ্রিন এনার্জি ভর্তুকি দখল করা।

আদানি ছিলেন মোদির প্রথম দিকের সমর্থক, যিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরপরই ২০০২ সালে গুজরাটে -মুসলিম বিরোধী গণহত্যাকে প্ররোচিত ও সহায়তায় তার ভূমিকার জন্য প্রথম জাতীয় খ্যাতি পেয়েছিলেন, যাতে ২,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং আরও কয়েক লক্ষ গৃহহীন হয়েছিল।

মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আট বছরে আদানির ভাগ্য চমত্কারভাবে বেড়েছে। তাঁর এবং মুকেশ আম্বানির সম্পদ এখন ভারতের শীর্ষ ১০ জন ধনী ব্যক্তির মোট সম্পদের প্রায় ৬০ শতাংশ।

গত বছর, আদানি এই দাবিগুলি খারিজ করার চেষ্টা করেছিলেন যে তিনি মোদীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে উপকৃত হয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে ১৯৯৩ সালে অবকাঠামো প্রকল্পগুলির জন্য একটি অনুর্বর বর্জ্য ভূমি ছাড়া ভারত বা গুজরাটের সরকারের প্রধান হিসাবে 'মোদীর কাছ থেকে তিনি বিশেষ কোনো অনুগ্রহ পাননি' বা তার পূর্বসূরিদের কারো কাছ থেকেও।

বাস্তবে, আদানি, ভারতের অন্যান্য শীর্ষ ধনকুবেরদের মতো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এবং শ্রমিক শ্রেণীর শোষণ-বেসরকারীকরণ, কর কমানো, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ভূমি অনুদান এবং অন্যান্য ভর্তুকি এবং শ্রমিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ব্যবহার করেছে।

মোদি এবং তার সরকার শুধু মুম্বাই বিমানবন্দরের মতো সম্পদ বিক্রয় এবং ব্যবস্থাপনা চুক্তিই আদানি গ্রুপের কাছে দেয়নি। তারা এর পক্ষে বিদেশী সরকার এর সাথে শক্তিশালীভাবে তদবির করেছে। জানুয়ারিতে, শ্রীলঙ্কার সরকারী মালিকানাধীন সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান, এম.এম.সি. ফার্দিনান্দো, একটি সংসদীয় কমিটির কাছে এটা প্রকাশ করার পরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাক্ষে তাকে বলেছিলেন যে মোদি বলেছেন যে শ্রীলংকার অর্থনীতির পতনের জন্য জরুরি ভারতীয় সরকারের সমর্থন শ্রীলঙ্কায় বায়ু ও সৌর প্রকল্পের উন্নয়নের আদানি গ্রীন এনার্জির চুক্তি পাওয়ার শর্তসাপেক্ষে।

১৯৯১ সাল থেকে কংগ্রেস পার্টি এবং বিজেপি উভয়ের নেতৃত্বে পরপর ভারতীয় সরকার দ্বারা সম্পাদিত প্রো-বিনিয়োগকারী অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর থেকে মোদী সরকারের দ্বারা তীব্রতর হয়েছে, যা সামাজিক বৈষম্যকে আরও গভীর করেছে, আদানির মতো বিলিয়নেয়ারদের হাতে সম্পদকে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং গ্রামীণ পরিশ্রমী মানুষকে দারিদ্র্যের গভীরে ঠেলে দিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২২ এর বিশ্ব বৈষম্য প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে অসম দেশগুলির মধ্যে একটি।

ভারতীয় জনসংখ্যার শীর্ষ ১০ শতাংশের কাছে মোট জাতীয় সম্পদের ৭৭ শতাংশ রয়েছে এবং সমস্ত আয়ের ৫৭ শতাংশ বরাদ্দ৷ ২১.৭ শতাংশ, শুধুমাত্র শীর্ষ থাকা ১ শতাংশের আয়ের অংশ সবচেয়ে দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ ভারতীয়ের ক্ষুদ্রকায় (১৩.১০ শতাংশ।)

ব্রিটিশ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের মতে, মহামারী চলাকালীন ভারতীয় ধনকুবেরের সংখ্যা বিস্ফোরিত হয়েছে — ২০২০ সালে ১০২ জন থেকে বেড়ে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ১৪২ জন হয়েছে৷ ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে, ভারত প্রতি দিন ৭০ জন নতুন কোটিপতি তৈরি করেছে বলে অনুমান করা হয়েছে৷

সামাজিক বিভাজনের অপর দিকে রয়েছে অবর্ণনীয় দারিদ্র্য ও বঞ্চনা

ভারত সরকার ২০১১ সালের পর থেকে সরকারীভাবে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী আনুমানিক মানুষের সংখ্যা প্রদান করতে অস্বীকার করেছে। তবে ২০১৯ সালে-যা মহামারীর আগে-দুইজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অনুমান করেছেন, সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে, যে জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ, ৩৪.৬ কোটি মানুষ প্রতিদিন ২৯ টাকায় (ইউএস ৪২ সেন্ট) বা তার কম আয়ে জীবনযাপন করে।

নীতি আয়োগ, ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া, ভারতীয় সরকারি পরিকল্পনাকারীরা, স্বীকার করেছে যে তার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই- আয়ের পাশাপাশি শিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক সামাজিক অবকাঠামোতে প্রবেশাধিকার বিবেচনা করে দারিদ্র্যের একটি পরিমাপ) ভারতে প্রতি চারজনে একজন বহুমাত্রিকভাবে দরিদ্র।

অনেক সাধারণ ভারতীয় তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে সক্ষম হয় না। তাদের মধ্যে ৬.৩ কোটি মানুষকে প্রতি বছর স্বাস্থ্যসেবায় খরচ করার কারণে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয় - যা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দুইজন। যদিও দেশটি চিকিৎসা পর্যটনের জন্য একটি শীর্ষ গন্তব্য, ভারতের দরিদ্রতম রাজ্যগুলিতে শিশুমৃত্যুর হার সাব-সাহারান আফ্রিকার তুলনায় বেশি। বিশ্বব্যাপী মায়েদের মৃত্যুর ১৭ শতাংশ ভারতে এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ২১ শতাংশ।

COVID-19 মহামারী এবং তারপরে ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার সাথে ইউএস-ন্যাটো যুদ্ধের প্ররোচনা করার ফলে গত আড়াই বছরে এই সবগুলিই উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে।

গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানি এবং অন্যান্য ভারতীয় ধনকুবেরদের সম্পদ বৃদ্ধি পেলেও জনসাধারণকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারী এবং ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে, মোদি সরকার COVID-19-এর ক্রমবর্ধমান হুমকির জন্য ব্যাপকভাবে স্বল্প অর্থায়নে চলা জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা প্রস্তুত করার জন্য কিছুই করেনি, তারপরে একটি স্বল্পস্থায়ী এবং অপ্রস্তুত লকডাউন আরোপ করেছিল। অসংগঠিত খাতে কর্মরত কয়েক কোটি মানুষ যারা রাতারাতি তাদের চাকরি হারিয়েছে তাদেরকে দুর্ভিক্ষ-লাগার মত সামান্য রেশন দেওয়া হয়েছে।

সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি'স (CMIE's) কনজিউমার পিরামিড হাউসহোল্ড সার্ভে অনুসারে, ভারতে কর্মসংস্থান ২০১৯-২০ সালে ৪০.৮৯ কোটি থেকে ২০২০-২১ সালে ৩৮.৭২ কোটিতে নেমে এসেছে। যদিও ২০২১-২২ সালে এই সংখ্যাটি ৪০.১৮ কোটিতে পৌছেছে, তবুও এটি প্রাক-মহামারী স্তরের নীচে রয়ে গেছে। ২০২১-২২ সালে, বেকার যারা সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছিলেন কিন্তু কোন কাজ খুঁজে পাননি তাদের আনুমানিক সংখ্যা ৩.৩ কোটি।

২০২০ সালে, জনসংখ্যার মধ্যে অপুষ্টি, শিশু অপুষ্টি, শিশুদের না বেড়ে ওঠা এবং শিশুমৃত্যুর উপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪ তম স্থানে ছিল। ২০২১ সালে এটির অবস্থান ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১-এ নেমে এসেছে।

২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দৈনিক মজুরি শ্রমিকদের মধ্যে আত্মহত্যা ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে।

শাসক শ্রেণী এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি মহামারী চলাকালীন শ্রমজীবী ​​শ্রেণী এবং গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জীবনমানে বিজেপি সরকার দ্বারা প্রয়োগকৃত পতনকে 'জাতীয় স্বার্থে' এবং একটি যৌথ ত্যাগ হিসাবে ন্যায্যতা দিয়েছে। যেমণ ফোর্বসের ধনীদের তালিকা প্রমাণ করে, একমাত্র 'ত্যাগ' শুধুমাত্র শ্রমজীবী ​​মানুষের জন্য এবং সমাজের একটি অতি-ধনী ভগ্নাংশের 'স্বার্থে' হয়েছে।

১৯৩০-এর দশকের পর থেকে সবচেয়ে বড় সংকটের মধ্যে আর্থিক অভিজাততন্ত্রের অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি, কয়েক দশক ধরে চলে আসা চাকরি ছাঁটাই এবং সামাজিক কর্মসূচির ধ্বংসের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য যে যুক্তিগুলি তৈরি করা হয়েছিল তা উন্মোচিত করেছে।

সামাজিক বৈষম্যের ব্যাপক মাত্রা এবং আর্থিক শেয়ার বাজারে অর্থ ক্রমাগত ঢালার ফলে মুদ্রাস্ফীতির দ্রুত বৃদ্ধি করেছে যা আন্তর্জাতিকভাবে সমস্ত মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আদানির দ্রুত উত্থান হল একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূর্ত প্রতীক, তা হল পুঁজিবাদ, যা সমাজের চাহিদা থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যে 'এটিকে অবশ্যই সামাজিক প্রতিবাদ এবং আপসহীন রাজনৈতিক বিরোধিতাকে উস্কে দিতে হবে,' যেমনটি World Socialist Web Site পূর্বে ব্যাখ্যা করেছে৷

ক্ষুধা ও সকল প্রকার সামাজিক বঞ্চনার অবসানের জন্য প্রয়োজন সমগ্র পুঁজিবাদী শ্রেণী এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম। এই সংগ্রাম সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে বন্ধ না করে জয়ী হতে পারে না, যা মানবতার প্রযুক্তিগত প্রতিভা এবং শিল্প শক্তিকে নিঃশেষ করে দেয়, এটিকে মৃত্যু এবং ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে যখন সর্বত্র এটির অত্যন্ত প্রয়োজন জীবন বাঁচাতে ও উন্নত করার জন্য। এর জন্য প্রয়োজন ধনীদের সম্পদের বৈপ্লবিক দখল এবং বিশ্বের উৎপাদন শক্তিগুলিতে শ্রমিক শ্রেণীর গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে স্থাপন করা—সমাজতন্ত্র।

Loading