বাংলা

শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের আইএমএফের ব্যয় হ্রাস কঠোরতা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অ্যাকশন কমিটির দরকার

এই সপ্তাহে, ট্রেড ইউনিয়নগুলি চাকরি, সামাজিক অবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলির উপর শ্রীলঙ্কা সরকারের বাজেটে নির্মমভাবে আক্রমণের জন্য শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রশমিত করতে সীমিত এবং বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

দুটি ট্রেড ইউনিয়ন গোষ্ঠী - ট্রেড ইউনিয়ন সমন্বয় কেন্দ্র (TUCC) এবং ট্রেড ইউনিয়ন এবং গণ সংস্থা কালেক্টিভ (TUMOC)-এর পাশাপাশি সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড (CEB), শ্রীলঙ্কা রেলওয়ে, কলম্বো পোর্ট এবং দুটি প্রধান মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল কাতুনায়েকে এবং বিয়াগামা ৫, ৬ এবং ৮ই ডিসেম্বর বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

২০শে ডিসেম্বর ২০২১, বকেয়া ভাতার দাবিতে এসকুয়েল গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে

দুপুরের খাবারের সময় বা কাজের সময়ের পরে বিক্ষোভের সময়সূচী করে, ইউনিয়নগুলি সরকার এবং নিয়োগকর্তাদের কাছে একটি স্পষ্ট সংকেত দিয়েছে যে তারা কর্মক্ষেত্র এবং কারখানায় ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করার জন্য কিছুই করবে না। একই সময়ে, ইউনিয়নগুলি পুঁজিবাদী বিরোধী দলগুলির মধ্যে বিভ্রম পোষণ করছে—সমগী জনা বালাওয়েগয়া (এসজেবি) এবং জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি)-এর সবকটিই আইএমএফের দাবি সমর্থন করে৷

সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি পার্টি (এসইপি) শ্রমিকদেরকে তাদের গণতান্ত্রিক ও সামাজিক অধিকারের পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে, কারখানায় এবং আশেপাশে সমস্ত পুঁজিবাদী দল এবং ট্রেড ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র অ্যাকশন কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়গুলিকে তাদের নিজের হাতে নেওয়ার আহ্বান জানায়। আমরা গ্রামীণ শ্রমজীবীদেরও এই একই কাজ করতে বলছি।

সরকারের ব্যয় হ্রাস কঠোরতা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমজীবী জনগণের ওপর ভারী কর এবং বিদ্যুৎ, জল, জ্বালানি ও সারের মূল্যতে ভর্তুকি শেষ করা। শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বিক্রমাসিংহে তার বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করেছেন যে শ্রীলঙ্কা টেলিকম, শ্রীলঙ্কা ইন্স্যুরেন্স, শ্রীলঙ্কা এয়ার লাইনস এবং সরকারী মালিকানাধীন ট্যুরিস্ট হোটেলগুলিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা পেতে বিক্রি করা হবে। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভা সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডকে ১৫টি কোম্পানিতে বিভক্ত করার অনুমোদন দিয়েছে, এটি বিক্রির সুবিধার্থে।

বেসরকারীকরণ হল শ্রমজীবী জনগণের উপর একটি দ্বিমুখী আক্রমণ। একদিকে বেসরকারি মুনাফা নিশ্চিত করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার দাম আরও বাড়ানো হবে। অন্যদিকে, শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে এবং বাকি শ্রমিকদের উপর কাজের চাপ বাড়ানো হবে, আবারও মুনাফা বাড়ানোর জন্য।

সরকারের বাজেটের প্রভাব সম্পর্কে নীরব থাকার পরে, ইউনিয়নগুলি চাকরি ও শর্তের উদ্বেগের কারণে নয়, শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের কারণে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। সর্বোপরি তারা আশংকা করছে শ্রমিক শ্রেণীর আরেকটি অভ্যুত্থান যেমন এপ্রিলের শুরু থেকে সংঘটিত হয়েছিল যা রাষ্ট্রপতি গোতাভায়া রাজাপাক্ষের পূর্ববর্তী সরকারের পতন ঘটায়।

এই ইউনিয়নগুলি, বিশেষ করে দুটি প্রধান ইউনিয়ন ফ্রন্ট - TUCC এবং TUMOC - ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টি (FSP) এর মতো ছদ্ম-বাম সংগঠনগুলির দ্বারা সমর্থিত, রাজাপাক্ষের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদিও তারা ২৮শে এপ্রিল এবং ৬ই মে সাধারণ ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছিল, ইউনিয়নগুলি এই কর্মগুলি একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছিল। ইউনিয়নগুলি মিথ্যাভাবে দাবি করেছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিরোধী দলগুলির আহ্বান শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করবে।

এখন এই একই ইউনিয়নগুলি সীমিত প্রতিবাদ ডেকে দাবি করছে যে সরকারকে চাপ দিয়ে তার কঠোর ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। বুর্জোয়া বিরোধী দল এবং সমগ্র সংসদীয় কাঠামোর প্রতি তার অভিযোজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৮ই ডিসেম্বর TUMOC তার প্রতিবাদ ডেকেছে, যেদিন সংসদে বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং বুর্জোয়া পার্লামেন্টের কাঠামোর মধ্যে শ্রমজীবী জনগণের মুখোমুখি হওয়া জ্বলন্ত সমস্যাগুলির কোনো সমাধান হবে না। SJB এবং JVP যারা সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রচার করছে তারা একইভাবে IMF নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রমিকদের স্মরণ করা উচিত যে SJB এর আগে IMF এর কাছে না যাওয়ার জন্য প্রাক্তন রাজাপাক্ষে সরকারের সমালোচনা করেছিল। জেভিপি এখন প্রকাশ্যে বলছে যে সরকারে এটি আইএমএফ-নির্দেশিত কঠোরতা নীতি বাস্তবায়নে আরও কার্যকর হবে।

এসইপি শ্রমিক শ্রেণীকে বিক্রমাসিংহ সরকারের দ্বারা পরিচালিত IMF-নির্দেশিত ব্যয় হ্রাস কঠোর ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে নিজস্ব স্বাধীন রাজনৈতিক সংগ্রাম চালানোর ডাক দেয় এবং সাথে গ্রামীণ দরিদ্রদের তার পক্ষে জড়ো করার আহ্বান জানায়।

এসইপি নিম্নলিখিত নীতিগুলিকে রূপরেখা দেয়, যার উপর ভিত্তি করে শ্রমিক এবং গ্রামীণ শ্রমজীবীদের অ্যাকশ্যান কমিটি তাদের সামাজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য একটি রাজনৈতিক লড়াই গড়ে তুলতে পারে:

  • আইএমএফের ব্যয় হ্রাস কঠোরতা কর্মসূচীর প্রত্যাখ্যান! মজুরি ছাঁটাই চলবে না! পেনশন ছাটাইও না!
  • সব শ্রমিকের জন্য উপযুক্ত মজুরি জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে যা সঙ্গতিপূর্ণ! উচ্চ মূল্যস্ফীতি মেটাতে পেনশন একটি শালীন স্তরে উন্নত করা!
  • অনাহার ও অপুষ্টি নয়! সকলের জন্য একটি পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করুন!
  • সব বৈদেশিক ঋণ অস্বীকার! অতি ধনীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করুন এবং শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যাংক ও কর্পোরেশনগুলির জাতীয়করণ করুন!

শ্রমিক শ্রেণীকে তার গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন ও বন্টন পুনর্গঠন করতে হবে যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্ষুধা ও অনাহারের অবসান ঘটানো যায় এবং হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্র কৃষকদের দুর্দশার সমাধানের জন্য তাদের ঋণ মুকুব করতে হবে এবং সারে ভর্তুকি পুনরায় চালু করতে হবে।

বিক্রমাসিংহে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করে শ্রমিক ও নিপীড়িত জনগণের যেকোনো বিরোধিতাকে দমন করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যেই সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কুখ্যাত সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন (পিটিএ) ব্যবহার করেছেন। এই সপ্তাহে তার সরকার ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার জন্য পাবলিক সেক্টর ফার্মগুলি-সিইবি, সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং জল সরবরাহ ও নিষ্কাশন বোর্ডে অপরিহার্য পরিষেবা আইন (ইএসএ) বাড়িয়েছে।

ব্যয় কঠোরতার বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণের সংগ্রাম সরকার ও নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। এমতাবস্থায় শ্রমিক শ্রেণীর জন্য কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্সির বিলুপ্তি এবং পিটিএ এবং ইএসএ সহ সকল দমনমূলক আইন বাতিলের জন্য প্রচার করা আরও জরুরি। শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রচারণা মৌলিক সামাজিক অধিকারের সংগ্রামের সাথে অন্তর্নিহিতভাবে আবদ্ধ।

২০শে জুলাই জারি করা একটি প্রধান বিবৃতিতে, SEP শ্রমিক শ্রেণীকে তার শক্তি একত্রিত করতে, গ্রামীণ দরিদ্রদের জড়ো করতে এবং লড়াই করার পক্ষে রাজনৈতিক উপায় সরবরাহ করার জন্য শ্রমিক এবং গ্রামীণ জনগণের একটি গণতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেস গঠনে প্রচার শুরু করেছে। সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শ্রমিক ও কৃষকদের সরকারের জন্য। এই কংগ্রেস দ্বীপ জুড়ে শ্রমিক এবং গ্রামীণ শ্রমজীবীদের অ্যাকশন কমিটি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে।

শ্রমিক ও কৃষকদের সরকারের জন্য SEP’র এই লড়াই দক্ষিণ এশিয়া এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমাজতন্ত্রের জন্য বৃহত্তর সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শ্রমিক শ্রেণীর সামাজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে শাসক শ্রেণীর আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি অভিন্ন সংগ্রামে শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের বিশ্বব্যাপী তাদের শ্রেণী ভাই-বোনদের সাথে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

শ্রীলঙ্কার শ্রমিক শ্রেণীর মিত্ররা হল সারা বিশ্বের শ্রমিক যারা তাদের কাজ, মজুরি এবং কাজের অবস্থার উপর একই রকম আক্রমণের শিকার হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের অবশ্যই উচিত আন্তর্জাতিক ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স অফ র‍্যাঙ্ক-এন্ড-ফাইল কমিটিস (IWARFC) এর সাথে যোগদান করা যা চতুর্থ আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটির দ্বারা শুরু করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সংগ্রামকে একত্রিত করার উপায় প্রদান করে।

আমরা শ্রমিক ও যুব সমাজকে এই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে ও SEP-কে শ্রমিক শ্রেণীর গণবিপ্লবী দল হিসেবে গড়ে তুলতে এতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।

Loading