বাংলা

ভারতের রেনল্ট-নিসান শ্রমিকদের উপর জাল ভোটের মাধ্যমে ইউনিয়ন বিশ্বাসঘাতক চুক্তি আরোপ করেছে৷

রেনল্ট নিসান ইন্ডিয়া থোজিলালার সঙ্গম (আরএনআইটিএস) ট্রেড ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে যে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ের উপকণ্ঠে আন্তঃমহাদেশীয় গাড়ী প্রস্তুতকারী সংস্থার অ্যাসেম্বলি কারখানাতে 3,500-শক্তিশালী স্থায়ী শ্রমিকের মজুরি কমানোর 'দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি' অনুমোদন করা হয়েছে।

ইউনিয়ন দাবি করেছে যে 2,333 জন শ্রমিক দুটি পরপর তিন-বছরের চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন-যা এপ্রিল 2019 থেকে মার্চ 2025 পর্যন্ত ছয় বছরের মেয়াদ কভার করবে- এবং এতে 781 জন শ্রমিক বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

এই সংখ্যার সত্যতা যাই হোক না কেন, সমর্থনের ভোট একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী প্রতারণা এবং 'আলোচনা' যা আরএনআইটিএস এবং এর মূল সংস্থা, ইউনাইটেড লেবার ফেডারেশন (ইউএলএফ), পরিচালনাকারীদের সাথে করেছে তা সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক।

অনেক শ্রমিক চাপের মধ্যে ভোট দিয়েছেন এবং আরও 400 জন ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন, কারণ অনেকেই এই প্রক্রিয়াটিকে অবৈধ ভেবেছিলেন।

সম্প্রতি গঠিত রেনল্ট-নিসান র‍্যাঙ্ক-এন্ড-ফাইল কমিটি-চেন্নাই একটি বিবৃতিতে তা ব্যাখ্যা করেছে, “আরএনআইটিএস এবং ইউএলএফ কোম্পানিকে চার বছর ধরে আলোচনাকে পিছিয়ে দেবার অনুমতি দিয়েছে। … পরন্তু ইউনিয়নের কর্মকর্তারা আমাদেরকে প্রস্তাবিত চুক্তিতে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিতে সময় দিয়েছে মাত্র 24 ঘন্টা, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার থেকে অনেক কম সময় আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে চুক্তির বিবরণ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য এবং সেগুলির মূল্যায়ন করার জন্য।

“কোন সভা সংগঠিত করা হয়নি যাতে আমরা শ্রমিকরা আমাদের অনুমিত ইউনিয়নের 'প্রতিনিধিদের' প্রস্তাবিত চুক্তি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারি।

'এছাড়া আমাদের নিজেদের মধ্যেও প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য কোন সময় দেওয়া হয়নি।'

শ্রমিকরা 23শে ডিসেম্বর রেনল্ট-নিসান ফ্যাক্টরি কম্পাউন্ডের ভিতরে আরএনআইটিএস অফিসের বাইরে জড়ো হয়েছিল এবং তৈরী ছিল চুক্তি নিয়ে ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করতে কিন্তু তাদের চুক্তিতে অবিলম্বে ভোট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। [Photo by worker supplied]


আরএনআইটিএস এবং ইউএলএফ পরিচালনাকারীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে কার্যকরভাবে শ্রমিকদের উপর আক্রমণ করে। 31শে মার্চ, 2018-এ মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনার অবস্থা সম্পর্কে চার বছর ধরে শ্রমিকদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। তারপর ডিসেম্বরের শেষের দিকে, কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই এবং কারখানাটি এক সপ্তাহের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে, ইউনিয়ন ঘোষণা করে যে এটি পরপর দুটি তিন বছরের চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে এবং অবিলম্বে একটি 'সমর্থন' ভোট আয়োজন করেছে।

সমস্ত শ্রমিকদের দুটি চুক্তির তথ্য হিসাবে সরবরাহ করা হয়েছিল কাগজের একটি পাতা। তদুপরি, কী বিবরণ দেওয়া হয়েছিল, তা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যা বোঝা কঠিন। এত কঠিন যে, ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েব সাইটের সাথে যোগাযোগকারী শ্রমিকরা তাদের বেতনের উপর চুক্তির সামগ্রিক প্রভাবের বিষয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছে।

ইউনিয়ন প্রচারপত্রের নীচের দিকে, শ্রমিকদের বলা হয়েছিল তারা এটি গ্রহণ করেছে কিনা তা জানাতে, যার অর্থ এটি সমর্থনের ভোটের জন্য ব্যালট-পেপার হিসাবে ব্যাবহিত হয়েছে।

ইউনিয়নের প্রচারপত্র সমর্থন ভোটের জন্য ব্যালট হিসাবে ব্যাবহিত হয়েছে। [Photo: RINTS union]


যদিও ইউনিয়ন দাবি করেছে যে শ্রমিকরা পরপর দুটি চুক্তিতে ভোট দিচ্ছেন, তবে তাদের একটি ব্লকেই টিক মেরে ভোট দিতে বলা হয়েছিল।

এখনও অপরিচিত, দুটি চুক্তির প্রথমটি 1 এপ্রিল, 2019 তারিখে শুরু হয়েছে, কিন্তু পূর্ববর্তী চুক্তিটি মার্চ 2018-এর শেষের দিকে শেষ হয়েছে৷ শ্রমিকদের এই অসঙ্গতির জন্য কোনও বৈধ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, যা থেকে বোঝা যায় যে তারা প্রতারিত হচ্ছেন এক বছরের মজুরি এবং সুবিধা থেকে।

তিনটি পয়েন্ট অবশ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ।

প্রথমত, 31শে মার্চ, 2018 থেকে 31শে মার্চ, 2025 পর্যন্ত সাত বছর ধরে শ্রমিকরা মূল্যস্ফীতির কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রকৃত বেতন হ্রাসে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

দ্বিতীয়ত, চুক্তিগুলি এতটাই সুগঠিত যে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বেশির ভাগই 'উতসাহ ভাতা', 'বোনাস' এবং 'উপহার' আকারে যা কোম্পানি আরও সহজে কমাতে পারে, এমনকি বাদ দিতে পারে এবং পেনশনের জন্য গণনা করা হয় নি।

তৃতীয়ত, আরএনআইটিএস কর্মকর্তারা এই বিশ্বাসঘাতক চুক্তি আরোপ করার জন্য নিজেদেরকে সুন্দরভাবে পুরস্কৃত করছেন। ইউনিয়ন প্রচারপত্রের নীচের অংশে ছোট মুদ্রণে বলা হয়েছে যে 3,520 জন স্থায়ী শ্রমিকদের প্রত্যেকের কাছ থেকে 15,000 টাকা করে নেওয়া হবে 'আইনি ফি' এর জন্য যা ইউনিয়ন প্রায় তিন বছরের দীর্ঘ সালিশ প্রক্রিয়ার সময় ব্যয় করেছিল যেখানে এটি শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলেছিল। মোট টাকার পরিমাণ 5,28,০০,০০০ (US $644,000)। এটি আদালতের খরচ এবং অ্যাটর্নি ফি-র নামে যা শ্রমিকদের কাছ থেকে আগে সংগৃহীত অর্থের অতিরিক্ত যা ULF “শ্রমিক ফেডারেশন”-এর প্রধান, প্রকাশ নামে একজন অ্যাটর্নি পকেটে ভরেছেন।

ঠিক যেমন এটি শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বিশদ প্রদান করতে অস্বীকার করেছে, ম্যানেজমেন্টের সাথে তারা যে চুক্তি করেছে তার অনুলিপিগুলি ছেড়েই দিন, তাই আরএনআইটিএস ৫,২৮,০০,০০০ টাকা খরচের কোন বিশদ বিবরণ দেয়নি.

শ্রমিকরা রেনল্ট-নিসান র‍্যাঙ্ক-এন্ড-ফাইল কমিটি-চেন্নাই গঠন করেছে কারণ তারা বুঝেছে যে ইউনিয়নগুলি পরিচালনাকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। শ্রমিকদের সংগ্রামের জন্য সংগঠিত করার পরিবর্তে, কোম্পানি দ্বারা স্থায়ী ও চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টার বিরোধিতা না করে এবং চেন্নাই অঞ্চলে, ভারত জুড়ে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য অটোওয়ার্কার্সের সাথে লড়াইয়ের শ্রেণী সংহতির বন্ধন তৈরি না করে, RNITS এবং ULF বারবার রেনল্ট-নিসানের শ্রমিকদেরই চোখ রাঙাচ্ছে। ম্যানেজমেন্টের দালালদের মতো আচরণ করে, তারা শ্রমিকদের বলেছে যে তারা যদি কোনো রকমের আন্দোলন করে বা জড়িত থাকে তবে তারা রেনল্ট-নিসান দ্বারা প্রতিশোধ এবং নির্যাতনের শিকার হবে।

শ্রমিকদের পিঠে ছুরি মারার অংশ হিসাবে, RNITS এবং ULF তিনজন জঙ্গি শ্রমিকের প্রতিরক্ষায় আসতে অস্বীকৃতি জানায় যাদেরকে 'বাইরের' সংস্থার কাছে আলোচনার তথ্য ফাঁস করার জন্য পরিচালনাকারীদের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে৷ টার্গেট করা শ্রমিকদের নাম বা তাদের প্রাপ্ত সতর্কবার্তার বিষয়বস্তু ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অন্য শ্রমিকদের জানানো হয়নি। তবে রেনল্ট-নিসানের একজন শ্রমিক ডাব্লুএসডব্লিউএসকে জানিয়েছেন যে তাঁদের মধ্যে দুজন শ্রমিকের নাম রাজশেকর এবং শিব।

যদি আরএনআইটিএস এবং ইউএলএফ নেতারা শেষ পর্যন্ত এমন স্পষ্টভাবে গণতান্ত্রিক বিরোধী এবং অবৈধ উপায়ে কাজ করে তাদের বিশ্বাসঘাতক চুক্তির মাধ্যমে ঠেলে দিচ্ছে, তার কারণ তারা র‍্যাঙ্ক এন্ড ফাইল শ্রমিকদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান বিরোধিতায় ভীত।

ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাদের পক্ষে কোনো সংগ্রাম পরিচালনা করতে বা এমনকি মিথ্যা সালিশ প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য সরবরাহ করতে অস্বীকার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে, বেশ কিছু শ্রমিক অক্টোবরে ইউএলএফ অফিসে মিছিল করে যায়, ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করে এবং অফিসে একটি নোটিশ লাগিয়ে ঘোষণা করে ইউনিয়ন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হল।

তাদের প্রতারণা এবং চতুরির মাধ্যমে, ইউনিয়নগুলি রেনল্ট-নিসান শ্রমিকদেরকে আরও কঠিন অবস্থায় রেখেছে। ইউনিয়নগুলি পরিচালনাকারী এবং সরকার এবং অন্যান্য আইনী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগদান করে ঘোষণা করবে যে শ্রমিকদের এখন একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি রয়েছে, যেই কারণে যে কোন আন্দোলন অবৈধ।

কিন্তু এটাই শেষ কথা হবে না এবং অবশ্যই হওয়া উচিত নয়। শ্রমিক শ্রেণীর অপরিসীম ক্ষমতা রয়েছে, যতদূর পর্যন্ত এটি সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ, কারণ এটি সমাজের সমস্ত সম্পদ তৈরি করে এবং বিশাল এক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। রেনল্ট-নিসান র‌্যাঙ্ক-এন্ড-ফাইল কমিটি-চেন্নাই-এর গঠন শ্রমিকদেরকে কোম্পানী পরিচালনাকারীদের সহায়ক পন্থী ইউনিয়নের শাসনতন্ত্রগুলি থেকে মুক্ত হয়ে সংগ্রামকে নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার এবং সংগ্রামের একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে যা পৌঁছতে পারে অন্য শ্রমিকদের কাছে এবং শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেণী শক্তিকে একত্রিত করতে।

Loading