বাংলা

ভারতীয় বাজেট শ্রমজীবী মানুষের জন্য ব্যয় তিব্রভাবে কঠোর করেছে, সামরিক ক্ষাতে ব্যয় বাড়িয়েছে

২০২৩-২০২৪ বাজেটে, ভারতের অতি-ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার শ্রমজীবী মানুষের উপর শ্রেণীযুদ্ধের আক্রমণ এবং ভারতীয় বুর্জোয়াদের বিশাল-শক্তির আক্রমনাত্মক লাভের উচ্চআকাঙ্খাকে তীব্রতর করছে।

৪৫.০৩ ট্রিলিয়ন টাকার ($549.5 বিলিয়ন) বাজেট, যা বুধবার, ১লা ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে পেশ করেছেন, এতে ভারতের শ্রমিক এবং শ্রমজীবীদের জন্য নৃশংস কঠোরতামূলক ব্যবস্থাগুলিকে একত্রিত করা হয়েছে, বড় ব্যবসা, ধনী এবং উচ্চবিত্তদের জন্য ব্যাপক বরাদ্দ রয়েছে৷

সামরিক ক্ষাতে ব্যয় আরও ১৩ শতাংশ ৫.৯৪ ট্রিলিয়ন টাকা ($72.6 বিলিয়ন) বাড়বে এবং, যখন ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া হবে, তখন সমস্ত ভারতীয় সরকারের ব্যয়ের ১৭.৫ শতাংশের বেশি হবে৷

বাজেটে সবচেয়ে বড় ব্যয় বৃদ্ধি হল মূলধন ব্যয় (CAPEX)-এর ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি—অর্থাৎ, রেল, সড়ক, সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে ব্যয় —$১২২.৩ বিলিয়ন ডলার।

কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) সভাপতির প্রেস মন্তব্যে যেমণ পর্যবেক্ষণ করেছেন বৃহৎ ব্যবসায়ীরা এই ধরনের বৃদ্ধির জন্য চাপ দিচ্ছে। কারণ এটি সরকারী পরিকাঠামো নির্মাণ চুক্তি থেকে সুফল লাভের আশা করে এবং এর কারণ ভারতে ব্যাপকভাবে অপর্যাপ্ত পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগ পরিকাঠামোর উন্নয়ন বিশ্ব বাজারের জন্য সস্তা শ্রম উৎপাদন প্রসারিত করতে এবং বৈশ্বিক পুঁজি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করার প্রচেষ্টাকে সহজতর করবে।

ভারতীয় পুঁজিবাদী অভিজাতদের আনন্দের জন্য, বিজেপি সরকার আয়করও কমিয়ে দিচ্ছে, কর আরোপের বোঝাকে উপভোক্তা করের উপর স্থানান্তর করার একটি অব্যাহত অভিযানের অংশ হিসাবে যা কম বা আয় নেই এমন ব্যক্তিদের অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শাস্তি দেয়। বাজেটের ট্যাক্স ছাড়গুলি মধ্যবিত্তদের জন্য সুবিধা হয়েছে কিন্তু বিশেষ করে যাদের সবচেয়ে বেশি আয় তাদের। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি উদযাপন সম্পাদকীয় অনুসারে, সেগুলি 'ধনীদের জন্য কার্যকর আয়করের হার প্রায় 4 শতাংশ কমিয়ে দেবে।'

ভারতের গুয়াহাটির একটি পাইকারি সবজির বাজারে একজন ব্যক্তি মাটিতে ঘুমাচ্ছেন। বুধবার, ফেব্রুয়ারি 1, 2023, [AP Photo/Anupam Nath]

ধনীদের এই উপহারকে ন্যায্যতা দেওয়া হচ্ছে এই ভাবে যে এটি অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করবে। এটি এমন পরিস্থিতিতে যেখানে সাম্প্রতিক অক্সফাম রিপোর্ট, সারভাইভাল অফ দ্য রিচেস্ট: দ্য ইন্ডিয়া স্টোরি, দেখিয়েছে যে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, ভারতে তৈরি হওয়া সমস্ত নতুন সম্পদের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশের কাছে এবং মাত্র ৩ শতাংশ নীচের দিকে থাকা ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে গিয়েছিল।

সামরিক খাতে এবং CAPEX এ বিশাল ব্যয় বৃদ্ধি এবং অনেক কর ছাড়, যার মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা আছে, বাজেটের লক্ষ্য আগামী এপ্রিল ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি অনুপাতের 0.5 শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস, 5.9 শতাংশে অর্জন করা।

শ্রমিক শ্রেণী এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের নিশানা করে নিষ্ঠুর কঠোরতা ব্যবস্থার মাধ্যমেই এটিকে অর্জন করা যাবে।

সেগুলি বেকারত্ব এবং ক্ষুধার একটি মহামারীকে সংঘটিত করবে যা গত দশকে ভারতের বৃদ্ধির হার মন্থর হওয়ার সাথে সাথে বিকাশ লাভ করেছে কিন্তু গত তিন বছরে এটি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে - প্রথমত COVID-19 মহামারী এবং শাসক শ্রেণীর ধ্বংসাত্মক নীতি জীবনের আগে মুনাফা- এই প্রতিক্রিয়ায় এবং তারপরে ইউক্রেনে রাশিয়ার সাথে মার্কিন-ন্যাটো যুদ্ধের প্ররোচনার ফলে।

২০২০ সাল থেকে, আরও কয়েক কোটি মানুষকে 'চরম দারিদ্র্য'-এর মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ তাদের দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ একটি পুরো দিন কাজের জন্য যে ক্ষমতা প্রয়োজন তার থেকে অপর্যাপ্ত। প্রায় এক বছর ধরে বার্ষিক ৬ শতাংশ বা তার বেশি হারে মুদ্রাস্ফীতি চলছে। সেন্টার ফর মনিটরিং দ্য ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) অনুসারে ডিসেম্বরে বেকারত্ব ৮.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি এমন একটি দেশে যেখানে বেকাররা রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোন সুবিধা পায় না এবং শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার ৪০ শতাংশের আসেপাশে যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তবুও সরকার খাদ্য, সার ও পেট্রোলিয়ামে ভর্তুকি ২৮ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে।

খাদ্য ভর্তুকি যা ৮০ কোটি দরিদ্রতম ভারতীয়দের উপকৃত করে তাতে ১ ট্রিলিয়ন টাকা ($12.1 বিলিয়ন) বা ৩১ শতাংশ কমানো হচ্ছে - সামগ্রিক ভর্তুকিতে বাদ দেবার তুলনায় শতাংশের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি।

বিজেপি সরকার মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি প্রোগ্রামও (এমএনআরইজিপি) কমিয়ে দিচ্ছে , যার উদ্দেশ্য হল প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারের একজন সদস্যকে ১০০ দিনের, ন্যূনতম মজুরি কাজ প্রদান করা। এই প্রকল্পটি বাদ দেওয়া দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্য ছিল এবং এই কর্মসূচিকে পরিকল্পিতভাবে অর্থ যোগান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু মহামারী চলাকালীন, শুধুমাত্র দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা এড়াতে, সরকার নিঃশব্দে এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবার অনুমতি দেয় - যা অভ্যাসগতভাবে বেড়ে উঠতে থাকে। চলতি অর্থবছরের দুই মাস বাকি থাকতে, ৮ কোটিরও বেশি মানুষ এমএনআরইজিপি প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে। যাইহোক, অর্থের অভাবের কারণে, মাত্র ৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ১০০ দিনের কাজ সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে যা তারা আইনত অধিকারী।

এখন, 'মহামারী-পরবর্তী' সময়ে ব্যয় কঠোরতা ব্যাবস্থায় চাপের অংশ হিসাবে, সরকার MNREGP বাজেট এক-তৃতীয়াংশ কমিয়েছে, ৮৯০ বিলিয়ন টাকা ($10.8 বিলিয়ন) থেকে ৬৯০ বিলিয়ন টাকা ($7.3 বিলিয়ন)।

ভারতীয় সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র অংশগুলিকে শিকার করে, বিজেপি সরকারের বাজেট কয়েক দশকের শাসক শ্রেণীর নীতিকে অব্যাহত রেখেছে জনসাধারণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার তহবিলকে অনাহারে রেখে।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার জন্য সরকারি তহবিল বাড়ানোর কথা বলেছিল, যা ভারতের সংবিধানের অধীনে জিডিপির ৬ শতাংশ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ভাগ করা দায়িত্ব। বর্তমানে তা সবেমাত্র অর্ধেক। এই সপ্তাহের বাজেট কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা ব্যয় ৮ শতাংশ বা মূল্যস্ফীতির হারের থেকে সামান্য বৃদ্ধি ১.১ ট্রিলিয়ন টাকা ($13.4 বিলিয়ন) হয়েছে।

ভারতে জনস্বাস্থ পরিচর্যার অবস্থা, যদি কিছু থাকে, ভারতীয় বুর্জোয়াদের আরও বেশি অপ্রীতিকর অভিযোগ। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তবে সবচেয়ে নিঃস্ব ব্যক্তি ছাড়া কেউই চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে যায় না। ভারতের সরকার দেশের ১৪০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য মাত্র ৫০ বিলিয়ন ডলার বা জিডিপির মাত্র ১.৫ শতাংশ ব্যয় করে।

ভারত COVID-19 মহামারী দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। অতিরিক্ত মৃত্যুর অনুমান অনুযায়ী মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ৫০ লক্ষেরও বেশি, কিন্তু সরকার নির্লজ্জভাবে এই দাবিকে আঁকড়ে ধরে যে COVID-19 'কেবলমাত্র' ৫,৩১,০০০ ভারতীয়কে হত্যা করেছে। মহামারী জুড়ে জীবনের উপর লাভের অগ্রাধিকারের সাথে তাল মিলিয়ে, সরকার ২০২৩-২৪ সালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়কে 'বৃদ্ধি' করছে মাত্র ৩.৪ শতাংশ - উল্লেখযোগ্যভাবে বাস্তবে যা ছাঁটাই - এবং স্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের বাজেট ৬.৯ শতাংশ কমিয়েছে।

মোদি এবং তার হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপি: ভারতীয় পুঁজির আক্রমণকারী কুকুর

ভারতীয় শাসক শ্রেণী ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপিকে এই আশা এবং প্রত্যাশার সাথে ক্ষমতায় আনে যে তারা জনগণের বিরোধিতার বিরুদ্ধে রুক্ষতা চালাবে যাতে তারা বিনিয়োগপন্থী 'সংস্কার' বাস্তবায়ন করতে পারে এবং আরও আক্রমণাত্মকভাবে বিদেশে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলিকে অনুসরণ করতে পারে। তারা ঠিক তাই করেছে, এবং ২০১৯ সালে পুনঃ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে আরো দ্রুত গতিতে।

গত সাড়ে তিন বছরে, মোদী সরকার নাটকীয়ভাবে কর্পোরেট কর প্রত্যাহার করেছে; 'কৌশলগত' সেক্টরে মুষ্টিমেয় সরকারি খাতের উদ্যোগ ছাড়া বাকি সবগুলোকে বেসরকারীকরণের জন্য একটি অভিযান শুরু করেছে; সরকারী খাতের পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে 'নগদীকরণ' করার জন্য একটি স্কিম চালু করেছে এর ব্যবস্থাপনাগুলিকে একত্রিত করেছে এবং যাতে বড় ব্যবসায়ীদের মুনাফা হয়; চুক্তিবদ্ধ শ্রম এবং ঠিকা কাজের দরজা আরও বিস্তৃত করে দিয়েছে; এবং একটি 'শ্রম আইন সংস্কার' রচনা করেছে যা কারখানা বন্ধের উপর সমস্ত বিধিনিষেধ আরোপে বাধাদান করবে এবং বেশিরভাগ ধর্মঘটকে অপরাধী করবে।

এটি ভারতের মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামাজিক ক্ষোভকে অন্য পথে চালিত করতে এবং শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত করার লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অবিরাম প্রচারণার সাথে হাত মিলিয়েছে।

বিশ্ব মঞ্চে, বিজেপি সরকার, বড় ব্যবসাকে উত্সাহী সমর্থন এবং নাম মাত্র দৃশ্যমান বিরোধীদের সমালোচনা ভারতকে ওয়াশিংটনের বেপরোয়া সর্বাত্মক কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক-কৌশলগত আক্রমণে আরও সম্পূর্ণরূপে একীভূত করেছে চীনের বিরুদ্ধে- আক্রমণে যা বাইডেন প্রশাসন প্রসারিত করে চলেছে যদিও তারা এবং তার ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ বাড়িয়েছে। গত দুই বছরে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রধান এশিয়া-প্যাসিফিক মিত্র জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপক্ষীয় এবং চতুর্মুখী সামরিক-নিরাপত্তা সম্পর্কের একটি তরঙ্গকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে, যা বেজিংয়ের সাথে ওয়াশিংটনের দ্বন্দ্বে ভারতকে প্রথম সারিতে থাকা একটি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছে।

২০২৩-২৪ বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধির সাথে, মোদী সরকারের নয় বছরে ভারতের সামরিক বাজেট দ্বিগুণেরও বেশি হবে। বর্তমানে, ভারতের সামরিক ব্যয় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম, যদিও জার্মানি এবং জাপানের দ্বারা ঘোষিত সাম্প্রতিক বিশাল অস্ত্র কর্মসূচিগুলি আগামী বছরগুলিতে এটি সত্য থাকবে কিনা তা নিয়ে একটি প্রশ্ন চিহ্ন উত্থাপন করে।

বাজেট নথি অনুসারে, মূলধন ব্যয়ের জন্য সামরিক বাজেটে বরাদ্দ করা প্রায় $20 বিলিয়ন যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, যুদ্ধ হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবস্থা কিনতে ব্যবহৃত হবে।

চীনের সাথে ভারতের উত্তর সীমান্তে রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য পরিকাঠামোতেও ব্যয় নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই শীতে পরপর তৃতীয় বছরে কয়েক হাজার ভারতীয় ও চীনা সৈন্য, ট্যাঙ্ক এবং ফাইটার জেটগুলিকে ২০২০ সালের মে মাসে শুরু হওয়া একটি অচলাবস্থার অংশ হিসাবে জনমানবহীন হিমালয় সীমান্তে একে অপরের বিরুদ্ধে মোতায়েন করেছে এবং তা বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে।

'বিশ্ব-বিধ্বংসী' অর্থনীতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান সংকটের লক্ষণ

২০২৩-২৪ সালের বাজেট, যা ২০২৪ সালের বসন্তে জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণ বাজেট, অর্থমন্ত্রী সীতারামন গর্ব করেছেন যে ভারত উপভোগ করতে থাকবে, যেমনটি ২০২২ সালে করেছিল, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার।

বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা, রাষ্ট্রীয় ও কর্পোরেট এর ঋণের পাহাড় এবং একটি বড় মন্দার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে আগামী বছরে দেশের অর্থনীতি ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে সরকারের অনুমান একটি স্থূল অত্যধিক মূল্যায়ন বলে বিশ্বাস করার প্রতিটি কারণ রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী কেন্দ্রগুলিতে, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি মুদ্রাস্ফীতি-চালিত শ্রমিক শ্রেণীর পাল্টা আক্রমণ কমাতে সুদের হার বাড়িয়েছে। কিন্তু এমনকি প্রবৃদ্ধির অনুমান সঠিক প্রমাণ করার জন্য, বিজেপির শ্রেণীযুদ্ধের অর্থনৈতিক নীতিগুলি নিশ্চিত করে যে সামাজিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্য বাড়তে থাকবে।

বাজেটের CAPEX ব্যয়ের ব্যাপক বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি অন্তর্নিহিত সংকটকে নির্দেশ করে। ব্যাপক কর কমানো এবং অন্যান্য সুবিধা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ কমেছে, কারণ ভারতীয় বড় ব্যবসা ঋণ পরিশোধ করতে এবং নিজের শেয়ার নিজেই কেনা এবং অন্যান্য আর্থিক কারসাজিতে জড়িত।

তদুপরি, দেশের উত্থান সম্পর্কে সরকার এবং কর্পোরেট অভিজাতদের কাছ থেকে ঝাঁকুনি সত্ত্বেও, ভারতীয় পুঁজিবাদকে চীন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চীনের বার্ষিক রপ্তানির মূল্য, প্রায় $৩.৫ ট্রিলিয়ন, ভারতের অর্থনীতির মোট জিডিপির কমবেশি সমান। এবং এমনকি মোদী সরকার যখন মার্কিন, জাপানি এবং ইউরোপীয় সংস্থাগুলিকে চীন থেকে ভারতে স্থানান্তরিত করার জন্য খোলাখুলিভাবে প্রচার করছে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির 'বন্ধুত্বপূর্ণ ' চাপকে কাজে লাগাতে চাইছে, ভারতে চীনা রপ্তানি বেড়েছে।

তবে ভারতীয় বুর্জোয়াদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আসে শ্রমিক শ্রেণীর কাছ থেকে। ২০২২ সালে মহারাষ্ট্র রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (MSRTC) এবং ফোর্ড ইন্ডিয়া শ্রমিকদের জঙ্গি সংগ্রামের একটি ঢেউ দেখেছে। এর মধ্যে অনেক সংগ্রামই স্তালিনবাদী-নেতৃত্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংসদীয় দলগুলির (সিপিএম এবং সিপিআই) নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে যা কয়েক দশক ধরে পরিকল্পিতভাবে শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করে এবং শ্রমিক শ্রেণীকে কংগ্রেস পার্টি এবং অন্যান্য ডানপন্থী পুঁজিবাদী দলগুলির সাথে বেঁধে রাখে 'ফ্যাসিবাদী বিজেপির' বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে।

বিজেপি সরকারের শ্রেণীযুদ্ধের বাজেট কর্পোরেট মিডিয়া এবং বিভিন্ন বড় ব্যবসায়িক লবি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। যাইহোক, ভারতের স্টক মার্কেট এমন 'সুসংবাদে' যা আশা করা যায় তেমন বাড়েনি।

কারণ বিশ্বব্যাপী আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির ফলে ভারতের আর্থিক বাজার ধাক্কা খেয়েছে। মার্কিন-ভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপকে জালিয়াতি এবং স্টক মূল্যের হেরফের করার জন্য অভিযুক্ত করার পর থেকে এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে, এর কোম্পানিগুলির মূল্যায়ন ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে, প্রায় $১২০ বিলিয়ন মুছে গেছে। বৃহস্পতিবার, রয়টার্স উল্লেখ করেছে, 'টাইকুন গৌতম আদানির দুর্দশা বাড়তে থাকায়, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এবং ভারতীয় নিয়ন্ত্রকরা স্বল্প আশাও ত্যাগ করছেন যে সংস্থাটি যে সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে এবং দেশীয় বাজারগুলি এই সংক্রামক থেকে রক্ষা পাবে।'

রয়টার্সের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ভারতের আংশিকভাবে বেসরকারী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের মতো ভারতের ব্যাঙ্ক এবং সংস্থাগুলি আদানীর সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করেছে বা তাদের অর্থ ধার দিয়েছে, তারা সঙ্কটের ঘূর্ণিতে আটকা পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷

মোদি সরকারও হুমকির মুখে পড়েছে কারণ আদানি, যিনি মাত্র কয়েক মাস আগে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে সম্মানিত হয়েছিলেন, ব্যাপকভাবে মোদির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বড় ব্যবসায়িক সহযোগী হিসাবে বিবেচিত হয়, গুজরাটে থাকার সময় থেকে দীর্ঘদিনের এক সহযোগী।

একেবারে মোদীর মত ভঙ্গীতে, আদানি কর্পোরেট জালিয়াতির অভিযোগের জবাব দিয়েছেন একে 'ভারতের উপর আক্রমণ' ঘোষণা করে।

Loading