বাংলা

কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধীকে মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার পর ভারতীয় সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে

ভারতের কংগ্রেস পার্টির সবচেয়ে বিশিষ্ট নেতা এবং ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী রাহুল গান্ধীকে গত শুক্রবার ভারতের সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাকে জাল মানহানির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার ঠিক একদিন পর।

গান্ধীর বহিষ্কার ছিল শাসক হিন্দু আধিপত্যবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কয়েক সপ্তাহব্যাপী প্রচারণার চূড়ান্ত পরিণতি যা তাকে অপমান ও নীরব করার জন্য। সোমবার, ১৩ই মার্চ থেকে, বৃহস্পতিবার, ২৫শে মার্চ পর্যন্ত, বিজেপি সাংসদদের কারণে সাধারণ সংসদীয় কাজকর্ম অচল হয়ে পড়ে তাঁদের এই দাবিতে যে ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনে শ্রোতাদের গান্ধী বলেছেন ভারতে গণতন্ত্র 'আক্রমণের মধ্যে রয়েছে' এই বক্তব্য দ্বারা ভারতের 'মানহানি' করার জন্য ক্ষমা চান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার প্রধান অনুচর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, নিঃসন্দেহে গান্ধীর দ্বারা তাঁদের শাসনের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী পদ্ধতির নিন্দায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সম্ভবত তাঁর এই দাবিতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যে আরএসএস – যা ছায়া, হিন্দু সাম্প্রদায়িক মিলিশিয়া এবং সংগঠন 'জাতীয় পুনরুজ্জীবনের' জন্য যা বিজেপিকে তৈরি করেছিল এবং যার জন্য বিজেপি নেতৃত্ব, মোদি এবং শাহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, বিচার বিভাগ সহ রাষ্ট্রের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অনুপ্রবেশ করেছে।

ভারতের বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী ভারতের আহমেদাবাদে তার দলের কর্মীদের এক বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন। সোমবার, 5 সেপ্টেম্বর, 2022 [AP Photo/Ajit Solanki]

কিন্তু বিজেপি যদি গান্ধীর বিরুদ্ধে আইনি প্রতিহিংসা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যার বড় ব্যবসায়ী কংগ্রেস পার্টি দীর্ঘদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে, এটি সর্বোপরি এই কারণে যে তিনি সরকার এবং বিশেষ করে ভারতীয় ধনী গৌতম আদানি এবং তার আদানি গ্রুপ এর সঙ্গে মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ওয়াল স্ট্রিট-ভিত্তিক বিক্রেতা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ 'কর্পোরেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জালিয়াতি' চালানোর অভিযোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর জানুয়ারির শেষের দিকে, আদানি গ্রুপ এবং এর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলির শেয়ার মূল্য অর্ধেক হয়ে গেছে।

যদিও সরকার এবং ভারতীয় আর্থিক নিয়ন্ত্রকেরা তাৎক্ষণিকভাবে আদানি গ্রুপের অর্থনৈতিক সংকটের পতনকে আটকাতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে, তবে এটি মোদী সরকারকে রাজনৈতিকভাবে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। গৌতম আদানির সাথে মোদির একাধিক দশক ধরে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে, যার কোম্পানিগুলি বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং খনি সহ রাষ্ট্রীয় সম্পদের বেসরকারীকরণ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের উপকার পেয়েছে। 2014 সালে মোদি সরকারের ক্ষমতায় আসার এবং এর শেষ পতনের সময়কালের মধ্যে, আদানির ব্যক্তিগত ভাগ্য ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪০ বিলিয়ন ডলারে দ্রুতগতিতে বেড়েছে, যা তাকে কিছু সময়ের জন্য এশিয়ার বৃহত্তম বিলিয়নিয়ার করে তুলেছিল।

গত মাসের সংসদের বাজেট অধিবেশনে গান্ধী যখন আদানি বিষয়কে কংগ্রেসের আক্রমণের প্রধান লাইন করতে চেয়েছিলেন এবং মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে তদন্তের দাবি করেছিলেন তখন বিজেপি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। লোকসভার স্পিকার, একজন বিজেপি সাংসদ, বারবার গান্ধীর মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেন এবং মোদির সাথে আদানির সম্পর্ক নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন তা সংসদীয় রের্কেড থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এই সবের মধ্যে, ১৬ই ফেব্রুয়ারি, বিজেপির গুজরাট রাজ্যের বিধানসভার সদস্য পূর্ণেশ মোদী গান্ধীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের একটি আদালতের মামলা পুনঃরায় শুরু করেন। এই মামলার ফলেই গত সপ্তাহে কংগ্রেস নেতা দোষী সাব্যস্ত হয় এবং পরের দিন একটি আইনের অধীনে সংসদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয় যা দুই বা ততোধিক বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাংসদদের 'অযোগ্য' করার অনুমতি দেয়।

যদিও গান্ধীর আইনগত অধিকার রয়েছে তার দোষী সাব্যস্ত হওয়াকে চ্যালেঞ্জ করার, তবে সরকার ইতিমধ্যেই তার সংসদীয় আসন খালি ঘোষণা করতে ছুটে গেছে।

গান্ধীর বিরুদ্ধে 'মানহানির' মামলাটি স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা হয়েছে, এটি একটি অসম্মানিত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইনের উপর নির্ভর করে।

এটি ১৩ই এপ্রিল, ২০১৯ সালে কর্ণাটকের কোলারে একটি নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে দেওয়া একটি বক্তৃতা থেকে উদ্ভূত হয়। হিন্দিতে বক্তৃতা করেন, এবং দুর্নীতির জন্য বিজেপি সরকারকে দোষারোপ করতে গিয়ে গান্ধী বলেছিলেন, “আমার একটি প্রশ্ন আছে। কেন তাদের সকলের—এই সব চোরেদের—তাঁদের নাম মোদি, মোদি, মোদি আছে? নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি। আর একটু খোঁজ করলে এরকম আরও অনেক মোদি বেরিয়ে আসবে।”

নীরব মোদি একজন পলাতক হীরা ব্যবসায়ী এবং একাধিক জুয়েলারি ষ্টোর এর মালিক, যার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল এবং ভারতীয় রাজ্য দ্বারা জালিয়াতি, আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতি সহ অসংখ্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

ললিত মোদী, একটি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবারের বংশধর এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের প্রতিষ্ঠাতা, অর্থ-পাচারের অভিযোগের উত্তর দেওয়া থেকে বাঁচতে কয়েক বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন। রাজস্থানের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রথম মেয়াদকালে থাকা বসুন্ধরা রাজের সাথে তার এতটাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যে তাকে সংবাদ মাধ্যম এবং বিরোধীরা রাজ্যের 'সুপার মুখ্যমন্ত্রী' হিসাবে অভিহিত করতেন।

রাহুল গান্ধীর ২০১৯ সালে কোলার বক্তৃতার তিন দিন পরে, পূর্ণেশ মোদী কংগ্রেস নেতাকে সমগ্র 'মোদী সম্প্রদায়ের' মানহানি করার অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

এটা অযৌক্তিক। বিভিন্ন ভাষ্যকার যেমন উল্লেখ করেছেন, 'মোদী সম্প্রদায়' বলে কিছু নেই, এমনকি ভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়া দ্বারা ব্যবহৃত অর্থেও নয়, যারা দশকের পর দশক ধরে বর্ণবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতাকে উপহাস হিসেবে প্রচার করেছে অর্থ এবং ক্ষমতার জন্য ও শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত করতে। মোদি কোনো জাতি বা জাতিগোষ্ঠী নয়। এই উপাধির লোকেরা উত্তর ভারতের অসংখ্য রাজ্যে বাস করে এবং তারা 'নিম্ন' বা 'উচ্চ' বর্ণ এবং বিভিন্ন ধর্মের হতে পারে।

এই সেই মামলা যা গান্ধীর বিরুদ্ধে গুজরাট আদালতে দায়ের করা হয়েছিল - কর্ণাটকের পরিবর্তে, যেখানে তিনি কথিত মানহানিকর মন্তব্য করেছিলেন, বা নয়া দিল্লিতে, যেখানে তিনি থাকেন - শুধুমাত্র এটি আরো এই মিথ্যা অভিযোগের রাজনৈতিকভাবে-প্রণোদিত চরিত্রকে প্রমাণ করে। বিজেপি গুজরাটকে শাসন করেছে, যে রাজ্য থেকে নরেন্দ্র মোদি ১৯৯৬ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শাসন করেছেন। এটা সুপরিচিত যে রাজ্যের বিচার বিভাগ, যেটি মোদী এবং বিজেপি যারা ২০০২ সালে গুজরাটের মুসলিম বিরোধী গণহত্যাকে প্ররোচিত এবং সহায়তা করেছিল তাঁদের সেই ভূমিকাকে ধামাচাপা দেবার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে, কট্টর বিজেপিপন্থী হিসাবে।

ভারতের অনেক আইনি মামলার মতোই, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলাও শামুকের গতিতে এগিয়েছিল, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাদী, বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি নিজেই এক বছর পর্যন্ত বিলম্ব চেয়েছিলেন। তারপরে হঠাৎ করে ফেব্রুয়ারিতে, বিজেপি যখন আদানির সাথে নরেন্দ্র মোদির দুর্নীতিমূলক লেনদেনের বিষয়ে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছিল, তখন এটি বাদীপক্ষের অনুরোধে পুনঃরায় শুরু করা হয়েছিল এবং বেশিরভাগ ভারতীয় আইনি পদক্ষেপের বিপরীতে, তারপরে দ্রুত রায়ের দিকে এগিয়ে যায়।

১৬ই মার্চ বিচারক কংগ্রেস নেতাকে মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ২৩শে র্মাচ তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ডের সাজা প্রদান করেন – কাকতালীয়ভাবে নয় ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৮(৩) এর অধীনে ভারতীয় সংসদ থেকে বহিষ্কৃত করা হয় ।

এবং ইঙ্গিত অনুসারে, লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরের দিনই গান্ধীকে বহিষ্কার করতে, তাঁর থেকে আসন কেড়ে নিতে এবং তার সমস্ত সংসদীয় সুযোগ-সুবিধা শেষ করার জন্য ভোট দেয়। শুধুমাত্র আপীলের মাধ্যমে তাঁর দোষী সাব্যস্ত রধ হলেই গান্ধীর পরবর্তী নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার থাকবে, যা এপ্রিল-মে ২০২৪ শে নির্ধারিত।

অস্তিত্বহীন মোদী সম্প্রদায়ের মানহানি করার জন্য যারা গান্ধীকে বহিষ্কার করেছে তারা নিজেরাই সাম্প্রদায়িকতাবাদী। মোদী ও শাহ থেকে শুরু করে তাদের অনেকেই সবচেয়ে জঘন্য ও জ্বালাময়ী মন্তব্য করেছেন। সেই একই 2019 সালের নির্বাচনী প্রচারের সময়, শাহ বাংলাদেশী অভিবাসীদের 'উইপোকা' এর সাথে তুলনা করেছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বিজেপি সরকার 'অনুপ্রবেশকারীদের একে একে তুলে নিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে।'

বিরোধী দলগুলি গান্ধীর বহিষ্কারের নিন্দা করেছে এবং সতর্ক করেছে যে সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), ভারতীয় যা এফবিআই এর সমতুল্য, কর বিভাগ, অন্যান্য সরকারী সংস্থা এবং আদালতকে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করছে। গত মাসে, বিজেপি সরকার 2002 সালের গুজরাট-মুসলিম বিরোধী হত্যাকাণ্ডে মোদির ভূমিকাকে তুলে ধরেছে এমন একটি ডকুমেন্টারি সম্প্রচার করার জন্য ব্রিটিশ ভিত্তিক সম্প্রচারকারীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে নয়াদিল্লি এবং মুম্বাইতে বিবিসি অফিসে দিনব্যাপী অভিযান চালানোর জন্য কর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়।

বিজেপি সরকারের বৈদেশিক এবং আর্থ-সামাজিক নীতিগুলির সাথে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির কোনও মৌলিক পার্থক্য নেই: চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক- কৌশলগত আক্রমণে ভারতকে আরও সম্পূর্ণরূপে একীভূত করছে; ভারতের পরমাণু-সজ্জিত সামরিক বাহিনীকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করছে; বেসরকারীকরণের মাধ্যমে 'বিনিয়োগকারী পন্থী' এমণ একটি আবহাওয়া গড়ে তোলা, বড় ব্যবসায়ী এবং ধনীদের জন্য ব্যাপক কর ছাড়, এবং চুক্তি শ্রমের আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে; এবং চলমান COVID-19 মহামারীর প্রতিক্রিয়া হিসাবে লাভ-জীবনের আগে এই নীতি অনুসরণ করা।

যাইহোক, হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপি নিরলসভাবে তাদের খরচে নিজের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা সংগ্রহ করছে, মৌলিক সংসদীয় নিয়মগুলিকে লঙ্ঘন করছে, কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত গভর্নরদের রাজ্য সরকারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উত্সাহিত করছে এবং তাদের সীমিত সমালোচনাকে আধা-বিশ্বাসঘাতকতা হিসাবে তুলে ধরছে।

পার্লামেন্ট থেকে গান্ধীর বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায়, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা শশী থারুর টুইট করেছেন: 'আদালতের রায়ের 24 ঘন্টার মধ্যে এবং একটি আপিল প্রক্রিয়াধীন বলে জানা সত্ত্বেও, আমি এই পদক্ষেপ এবং এর দ্রুততার দ্বারা হতবাক হয়েছি। এটা হল নির্মম রাজনীতি এবং এটা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।”

বুর্জোয়া সংবাদ মাধ্যমের নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া। উদারপন্থী মিডিয়ার কিছু অংশ, যেমন চেন্নাই-ভিত্তিক হিন্দু, তাদের হাত কচলেছে - ঠিক যেমন তারা পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী বিজেপির ক্রিয়াকলাপ এবং সাম্প্রদায়িক ক্ষোভের মুখে, সরকার বিরোধীদের 'শহুরে নকশাল' হিসাবে টার্গেট করার সময়, 'কাশ্মীরের বিরুদ্ধে 2019 সালের সাংবিধানিক অভ্যুত্থানে এবং মুসলিম বিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, সরকার বিরোধী বিক্ষোভের হিংস দমন এবং তাদের সাথে জড়িত লোকদের বাড়িঘর বুলডোজ করার সময় করেছিল।

শাসক শ্রেণীর প্রভাবশালী অংশগুলি মোদী এবং বিজেপিকে তার ক্যাডারদের সাথে যা অতি- ডানপন্থী হিন্দু আধিপত্যবাদী, বৈশ্বিক সংকটের পরিস্থিতির মধ্যে নিজের ঘরে গৃহস্থ শ্রমিক শ্রেণীর শোষণকে নির্মমভাবে তীব্রতর করা এবং বৈশ্বিক মঞ্চে তাদের মহান-শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অনুসরণ করার জন্য তাঁদের সেরা বাজি হিসাবে দেখতে চায়।

বিজেপির জন্য, ভারতের বিশ্ব-বিধ্বংসী প্রবৃদ্ধি এবং মোদীর জন্য অনুমিত জনসমর্থন সম্পর্কে তার সমস্ত বুক ধড়ফড়ের করে, এটি জানে যে এটি একটি সামাজিক বিস্ফোরকের উপরে বসে আছে। দারিদ্র্য মজুরি, অনিশ্চিত কর্মসংস্থান, সরকারের বেসরকারীকরণ অভিযান এবং ব্যয় কঠোরতা ব্যবস্থা, ব্যাপক বেকারত্ব এবং কৃষি সঙ্কট গণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভের তরঙ্গকে উস্কে দিয়েছে।

রাহুল গান্ধী তার সাম্প্রতিক 10 দিনের ইউকে সফরের সময় বলেছিলেন যে ভারতীয় গণতন্ত্র বিজেপি এবং আরএসএসের হুমকির মধ্যে রয়েছে, যখন কংগ্রেস পার্টির হিন্দু অধিকারের সাথে মিলিত হওয়ার কয়েক দশকের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিগত 30 বছরে ভারতীয় বড় ব্যবসাগুলির 'সামাজিকভাবে উদ্দীপক বাজার সর্বস্ব/বিনিয়োগকারী 'সংস্কার' পন্থী কর্মসূচি।

মোদি সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি সম্পর্কে পশ্চিমা 'গণতন্ত্র'-অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি নীরব রয়েছে উল্লেখ করে, গান্ধী তাদের সমর্থনের জন্য আবেদন করেছিলেন এই পরামর্শ দিয়ে যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিকে আরও বেশি সমর্থন করবে। প্রকৃতপক্ষে, গান্ধী এবং কংগ্রেস দল চীনের প্রতি 'নরম' হওয়ার জন্য মোদী সরকারকে ক্রমাগত আক্রমণ করেছে।

তবুও এটা কংগ্রেস পার্টি এবং অন্যান্য ডানপন্থী বর্ণবাদী এবং জাতিগত উচ্ছৃঙ্খল দলগুলির জন্য যে স্ট্যালিনবাদী সিপিএম এবং সিপিআই এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি কয়েক দশক ধরে 'ফ্যাসিবাদী বিজেপির' বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে শ্রমিক শ্রেণীকে রাজনৈতিকভাবে অধস্তন করে রেখেছে। শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামগুলিকে পরিকল্পিতভাবে বিচ্ছিন্ন করে এবং কংগ্রেস ও বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারগুলিকে 'জনগণের পক্ষে নীতি' গ্রহণ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ সংগ্রাম এবং নিরর্থক প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার সময় তারা তা করেছে।

সারা বিশ্বের মতো ভারতেও, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য শ্রমিক শ্রেণীর স্বাধীন রাজনৈতিক সংহতি প্রয়োজন, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরোধিতা এবং সামাজিক সাম্যের লড়াইয়ের সাথে সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়া এবং কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে একত্রিত করতে।

Loading