বাংলা

লিও ট্রটস্কি এবং একবিংশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম

এটি ডেভিড নর্থ এর লেখা, লিও ট্রটস্কি এবং একবিংশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম বইয়ের ভূমিকা যা শীঘ্রই প্রকাশিত হতে চলেছে। নর্থ ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েব সাইটের ইন্টারন্যাশনাল এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি পার্টির (ইউএস) জাতীয় চেয়ারম্যান।

বইটির প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণ ৩০শে জুন, ২০২৩-এ প্রকাশিত হবে। এই বইটি মেহরিং বুকস এ ৬ই এপ্রিল থেকে অগ্রিম-অর্ডারের জন্য উপলব্ধ হবে।

***

এই খণ্ডে সংকলিত উপাদান চল্লিশ বছর ধরে লেখা হয়েছে। প্রথম প্রবন্ধ, লিও ট্রটস্কি অ্যান্ড দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ মার্কসবাদ, প্রাথমিকভাবে 1982 সালের শরতের শেষ দিকে প্রকাশিত হয়েছিল। শেষ লেখাটি, রাশিয়া, ইউক্রেন এবং প্রাক্তন ইউএসএসআর-এর অন্যান্য দেশগুলিতে ট্রটস্কিস্টদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি যুব সংগঠনের কাছে লেখা চিঠি যা ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ লেখা হয়েছিল।

প্রথম এবং শেষ নথির মধ্যে বহু বছরের ব্যাবধান থাকা সত্ত্বেও, তারা একটি কেন্দ্রীয় যুক্তি দ্বারা সংযুক্ত: লিও ট্রটস্কি বিংশ শতাব্দীর প্রথম চার দশকে সমাজতন্ত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং তার উত্তরাধিকার এখনও গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্ব সমাজতন্ত্রের বিজয়ের জন্য চলমান সমসাময়িক সংগ্রামের অপরিহার্য তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি। গত চল্লিশ বছরের ঘটনাবলী ইতিহাসে ট্রটস্কির স্থান এবং তার স্থায়ী রাজনৈতিক তাৎপর্যের এই মূল্যায়নকে শক্তিশালীভাবে প্রমাণ করেছে।

লিও ট্রটস্কি, চতুর্থ আন্তর্জাতিকের প্রতিষ্ঠাতা

আসুন আমরা এই সত্য দিয়ে শুরু করি যে প্রতিবিপ্লবী শক্তি হিসাবে স্ট্যালিনবাদকে ট্রটস্কির নিন্দা ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু যখন প্রথম প্রবন্ধটি লেখা হয়েছিল, তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপে সংশ্লিষ্ট স্তালিনবাদী শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। ক্রেমলিন আমলাতন্ত্রের সাথে যুক্ত স্টালিনবাদী রাজনৈতিক দলগুলো লক্ষ লক্ষ সদস্য নিয়ে গর্বিত। ট্রটস্কির ভবিষ্যদ্বাণী যে স্ট্যালিনবাদী আমলাতন্ত্র পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধার করবে, এবং শাসনের পচা কাঠামো জাতীয় অর্থনৈতিক স্বৈরাচারের ভারে ভেঙ্গে পড়বে, অযোগ্যতা এবং মিথ্যার দ্বারা সেগুলিকে 'ট্রটস্কিবাদী গোষ্ঠীতন্ত্র' এবং এমনকি 'সোভিয়েত-বিরোধী প্রচার' বলে খারিজ করা হয়েছিল অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গদের দ্বারা যারা 'প্রকৃত বিদ্যমান সমাজতন্ত্র' বলেছিলেন।

লিও ট্রটস্কি এবং মার্কসবাদের বিকাশ সেই মাসগুলিতে সুনির্দিষ্টভাবে লেখা হয়েছিল যখন দীর্ঘদিন ধরে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে প্রবীণ সোভিয়েত নেতা লিওনিড ব্রেজনেভ তার অসুস্থ শয্যা থেকে রেড স্কোয়ারের ক্রেমলিন ওয়াল নেক্রোপলিসে চলে গিয়েছিলেন। স্তালিনবাদী আমলাতন্ত্র তার আনুগত্য প্রথমে ইউরি আন্দ্রোপভের কাছে এবং তারপরে কনস্ট্যান্টিন চেরনেঙ্কোর কাছে স্থানান্তরিত করেছিল - যিনি দুই বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে, ক্রেমলিন প্রাচীরের সাথে তাদের পূর্বসূরিদের সঙ্গে যোগদান করেছিলেন — এবং অবশেষে, ১৯৮৫ সালের মার্চ, মিখাইল গর্বাচেভের কাছে।

সোভিয়েত ইতিহাসের অধ্যয়নে একটি নতুন 'উন্মুক্ততা' [গ্লাসনোস্ট] এর পরবর্তী সমস্ত প্রতিশ্রুতির জন্য, ক্রেমলিন স্ট্যালিনবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এবং অক্টোবর বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য ট্রটস্কি যে সংগ্রাম পরিচালিত করেছিলেন তার নিন্দা করতে থাকে।

১৯৮৭ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে, যখন স্তালিনবাদী শাসন পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, গর্বাচেভ অক্টোবর বিপ্লবের সত্তরতম বার্ষিকীতে তার ভাষণে স্ট্যালিনের প্রতিরক্ষা এবং ট্রটস্কির প্রতি বিষাক্ত নিন্দা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ট্রটস্কি যেমন একবার উল্লেখ করেছিলেন, ইতিহাসের আইনগুলি এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও বেশি শক্তিশালী তা প্রমাণিত করে।

মিখাইল গর্বাচেভ (মাঝে), ৭ই মার্চ, ১৯৮৫ সাথে আন্দ্রেই গ্রোমিকো এবং নিকোলাই টিখোনভ [AP Photo/Boris Yurchenko]

একমাত্র রাজনৈতিক প্রবণতা যা পূর্বাভাস দিয়েছিল এবং সতর্ক করেছিল যে গর্বাচেভের নীতিগুলি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি এবং পুঁজিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করবে তা করেছিল চতুর্থ আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটি (ICFI)। 1987 সালের মার্চের প্রথম দিকে, নতুন সোভিয়েত নেতার যা 'গরবিম্যানিয়া' নামে পরিচিত বিশ্বব্যাপী প্রশংসার মধ্যে, আন্তর্জাতিক কমিটি সতর্ক করেছিল:

সোভিয়েত ইউনিয়নের শ্রমিক শ্রেণী এবং আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমিক ও নিপীড়িত জনগণ উভয়ের জন্যই গর্বাচেভের তথাকথিত সংস্কার নীতি একটি অশুভ হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে। এটি অক্টোবর বিপ্লবের ঐতিহাসিক বিজয়গুলিকে বিপন্ন করে এবং গভীরভাবে বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের সাথে আমলাতন্ত্রের প্রতিবিপ্লবী সহযোগিতার সাথে আবদ্ধ।[1]

দুই বছর পর, 1989 সালে, পেরেস্ত্রোইকা বনাম সমাজতন্ত্র শিরোনামে গর্বাচেভের নীতির বিশ্লেষণে আমি লিখেছিলাম:

বিগত তিন বছরে, উৎপাদন শক্তির ব্যক্তিগত মালিকানা উন্নীত করার জন্য গর্বাচেভ সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সম্পূর্ণ পুঁজিবাদী লাইনে সংগঠিত সোভিয়েত সমবায়ের বিকাশের সাথে আমলাতন্ত্র আরও খোলাখুলিভাবে তার স্বার্থ চিহ্নিত করছে। এইভাবে, আমলাতন্ত্রের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধাগুলি যা পরিমাণে আর আবদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির রূপের প্রতি বিরূপ, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সাথে এর সম্পর্কের একটি অনুরূপ এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন অবশ্যই হতে হবে। সোভিয়েত পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউএসএসআর-এর প্রতিরক্ষাকে ক্রমাগত কম করা, বরং সাম্রাজ্যবাদী সমর্থন-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক-পেরেস্ট্রোইকার অভ্যন্তরীণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একত্রিত করা, অর্থাৎ পুঁজিবাদী সম্পত্তি সম্পর্কের বিকাশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। এইভাবে, একটি দেশে সমাজতন্ত্রের স্তালিনবাদী তত্ত্বের প্রতিবিপ্লবী যুক্তি তার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি খুঁজে পায় একটি বৈদেশিক নীতির বিকাশে যার লক্ষ্য সোভিয়েত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকে হ্রাস করা এবং ইউএসএসআরের মধ্যেই পুঁজিবাদকে পুনঃপ্রবর্তন করা।[2]

আমি গর্বাচেভের নীতিগুলির এই মূল্যায়নের জন্য ব্যতিক্রমী সন্মান দাবি করতে পারি না, যা পরবর্তী ঘটনাবলী দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক কমিটির দৃষ্টিভঙ্গি সোভিয়েত সমাজের দ্বন্দ্ব এবং ট্রটস্কির অর্ধ শতাব্দী আগে তার লেখা বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা স্ট্যালিনবাদী শাসনের প্রতিবিপ্লবী গতিপথের বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। অধিকন্তু, পুঁজিবাদী পুনরুদ্ধারের সোভিয়েত-পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইসিএফআই-এর উপলব্ধি সহজতর হয়েছিল যে এটি ট্রটস্কির প্রত্যাশিত লাইন ধরে এগিয়েছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটেনি, যেমনটি ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, 'ইতিহাসের সমাপ্তি', যাকে র‍্যান্ড কর্পোরেশন বিশ্লেষক 'মানবজাতির আদর্শিক বিবর্তনের শেষ বিন্দু এবং পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রের সর্বজনীনকরণকে মানব সরকারের চূড়ান্ত রূপ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।' [3] এটা বেশ স্পষ্ট যে ফুকুইয়ামা ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পদে যোগদানের পূর্বাভাস দেননি।

প্রকৃতপক্ষে, সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়া বা উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির কোনওটিই র‍্যান্ড চিন্তাবিদ ঋষির পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি। রাশিয়ার মধ্যে, সমস্ত রৌদ্রোজ্জ্বল ভবিষ্যদ্বাণী যার সাহায্যে পুঁজিবাদের পুনরুদ্ধার ন্যায়সঙ্গত হয়েছিল তা ঘটনাগুলি দ্বারা খণ্ডন করা হয়েছিল। সমৃদ্ধির পরিবর্তে, প্রাক্তন সোভিয়েত আমলা এবং অন্যান্য অপরাধীদের কাছে দ্রুত রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির ফলে ব্যাপক দারিদ্র্য এবং সামাজিক বৈষম্যের বিস্ময়কর স্তর তৈরি হয়েছিল। গণতন্ত্র প্রস্ফুটিত হওয়ার পরিবর্তে, নতুন রাশিয়ান রাষ্ট্র দ্রুত একটি অভিজাতদের শাসনের রূপ ধারণ করে। এবং রাশিয়া নিয়ে যে দাবি, একবার অক্টোবর বিপ্লবের সাথে তার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে অপরিবর্তনীয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলে, তার নতুন 'পশ্চিমা অংশীদাররা' কোমল আলিঙ্গনে স্বাগত জানাবে এবং পুঁজিবাদী দেশগুলির ভ্রাতৃত্বের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে একীভূত হবে, এটি সবচেয়ে দূরবর্তী প্রমাণিত হয়েছে এবং সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী অবাস্তব।

প্রধান সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরের ঘটনাগুলি- অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটগুলির উত্তরাধিকার যা গত তিন দশকের বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করেছে- বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে পুঁজিবাদ যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এমন দ্বন্দ্বগুলোকে মার্কসবাদী বিশ্লেষণ প্রমাণ করেছে। ১৯৩৮ সালে ট্রটস্কি দ্বারা লিখিত চতুর্থ আন্তর্জাতিকের প্রতিষ্ঠাতা দলিল, ঐতিহাসিক যুগকে পুঁজিবাদের 'মৃত্যু যন্ত্রণা' হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে সমসাময়িক পরিস্থিতি বর্ণনা করে:

মানবজাতির উৎপাদন শক্তি স্থবির হয়ে পরেছে। ইতিমধ্যেই নতুন উদ্ভাবন এবং উন্নতি বস্তুগত সম্পদের মাত্রা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। সমগ্র পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সামাজিক সঙ্কটের অবস্থার মধ্যে সন্ধিক্ষণের সমস্যা জনসাধারণে আরও বেশি বঞ্চনা ও দুর্ভোগ ডেকে আনে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, রাষ্ট্রের আর্থিক সঙ্কটকে আরও গভীর করে এবং অস্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। …

পুঁজিবাদী বিচ্ছিন্নতার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, সাম্রাজ্যবাদী বিরোধিতাগুলি এমন এক অচলাবস্থার উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে যা সংঘর্ষ এবং রক্তাক্ত স্থানীয় অশান্তিকে আলাদা করে … অনিবার্যভাবে যা বিশ্ব জুড়ে একটি বিস্ফোরণে সংযুক্ত হতে হবে। বুর্জোয়ারা, অবশ্যই, একটি নতুন যুদ্ধ যা প্রতিনিধিত্ব করে তার আধিপত্যের মারাত্মক বিপদ সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু সেই শ্রেণীটি এখন ১৯১৪ সালের প্রাক্কালের মত এখন অসীমভাবে যুদ্ধ এড়াতে কম সক্ষম।[4]

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি যা পঁচাশি বছর আগে ট্রটস্কি তীব্রভাবে বিরক্তিকর সাদৃশ্য হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন তার থেকে বেশী বহন করে। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি পুঁজিবাদের সংকটের উৎস নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল: 1) সামাজিক উত্পাদন এবং উত্পাদনের উপায়গুলির ব্যক্তিগত মালিকানার মধ্যে দ্বন্দ্ব; এবং 2) বিশ্ব অর্থনীতির উদ্দেশ্যমূলক বিকাশের সাথে পুঁজিবাদী জাতি-রাষ্ট্র ব্যবস্থার অসঙ্গতি। পুঁজিবাদের কাঠামোর মধ্যে, এই দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত সংকট ফ্যাসিবাদী বর্বরতা এবং বিশ্বযুদ্ধ এই যুগল বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়।

বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের মারাত্মক গতিশীলতার বিশ্লেষণে ট্রটস্কি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকার উপর কেন্দ্রীয়ভাবে জোর দিয়েছিলেন। 1928 সালে, মধ্য এশিয়ার দূরবর্তী আলমা আটা থেকে (যেখানে তিনি স্ট্যালিনবাদী শাসন দ্বারা নির্বাসিত হয়েছিলেন), তিনি লিখেছেন:

সংকটের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আরও সম্পূর্ণভাবে, আরও খোলাখুলিভাবে এবং আরও নির্মমভাবে কাজ করবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সময়ের চেয়ে। এটি এশিয়া, কানাডা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপে ঘটুক না কেন, বা এটি শান্তিপূর্ণভাবে বা যুদ্ধের মাধ্যমে সংঘটিত হোক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ইউরোপের খরচে তার অসুবিধা এবং অসুস্থতা থেকে নিজেকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। [5]

1934 সালে, ট্রটস্কি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের গতিপথকে আরও তীক্ষ্ণ ভাষায় বর্ণনা করেছিলেন:

মার্কিন পুঁজিবাদ আরো বেশী করে সেই একই সমস্যার বিরুদ্ধে যা 1914 সালে জার্মানিকে যুদ্ধের পথে ঠেলে দিয়েছিল। পৃথিবী বিভক্ত হয়েছে? এটাকে আবার বিভক্ত করা আবশ্যক। জার্মানির জন্য এটি ছিল 'ইউরোপকে সংগঠিত করার' প্রশ্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বিশ্বকে 'সংগঠিত' করতে হবে। ইতিহাস মানবতাকে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মুখোমুখি নিয়ে এসেছে।[6]

ট্রটস্কি মানবিক বাক্যাংশ দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা লুণ্ঠনকারী নীতিকে পবিত্র করার প্রবণতাকে উপহাস করেছিলেন। তিনি স্মরণীয়ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনকে 'একজন পৈশাচিক এবং ভণ্ড', একজন 'ধর্মীয় ভন্ড' হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন যিনি 'নৈতিকতার সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসাবে রক্তে ভেজা ইউরোপকে ছেদ করেন, আমেরিকান ডলারের মশীহ হিসাবে; শাস্তি দেওয়া, ক্ষমা করা এবং জনগণের ভাগ্যের ব্যবস্থা করতে।”[7] এখন যখন উইলসনের ভয়ঙ্কর বর্ণবাদ সুপরিচিত হয়ে উঠেছে, ট্রটস্কির বর্ণনায় একসময়ের সম্মানিত আমেরিকান রাষ্ট্রপতি, গণতান্ত্রিক উদারনীতির আইকন হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে প্রশংসিত, একাডেমিক সম্প্রদাইয়ের ঐক্যমত্য হয়ে উঠেছে।

তবে তার ভন্ডামী প্রকাশের জন্য উপযুক্ত হলেও, ট্রটস্কি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের নীতিগুলিকে ব্যাখ্যা করেননি, বা একই ভাবে, হিটলারের অধীনে তার জার্মান প্রতিদ্বন্দ্বীর নীতিগুলিকে, অন্যথায় শান্তিপূর্ণ বিশ্বের অপরাধমূলক ব্যাঘাত হিসাবে ব্যাখ্যা করেননি। এই দেশগুলির এবং অনান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির নীতির বিরুদ্ধে তার অভিযোগ ছিল, সাংস্কৃতিক নৈতিকতাবাদী চরিত্রের পরিবর্তে ঐতিহাসিক। আক্রমণ, দখল এবং বিজয়ের নীতিটি নেতাদের ব্যাক্তি বিশেষের উন্মাদনার মধ্যে নিহিত ছিল না, এমনকি হিটলারের মতো একজন মনোরুগীর ক্ষেত্রেও, পরন্তু প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমানা দ্বারা আরোপিত সীমা অতিক্রম করার মরিয়া প্রয়োজনীয়তার মধ্যে যাতে করে বিশ্বব্যাপী সম্পদ এবং বিশ্ব বাজারের সুবিধা পাওয়া যায়। সাম্রাজ্যবাদী সামরিকবাদের নিরলস বৃদ্ধি, অনিবার্যভাবে বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়, যা জাতি-রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঐতিহাসিক দেউলিয়াত্বকে নির্দেশ করে। ট্রটস্কি যেমনটি 1934 সালে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, মূলত আমেরিকান জার্নাল ফরেন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে:

বিদেশী বাজারের জন্য সংগ্রাম অভূতপূর্বভাবে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠবে। স্বৈরাচারের সুবিধা সম্বন্ধে শক্ত ধারণাগুলি অবিলম্বে একপাশে ফেলে দেওয়া হবে, এবং জাতীয় সম্প্রীতির জন্য বিচক্ষণ পরিকল্পনাগুলি আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া হবে। এটি শুধুমাত্র জার্মান পুঁজিবাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, এর বিস্ফোরক গতিশীলতার দ্বারা বা জাপানের বিলম্বিত ও লোভী পুঁজিবাদের ক্ষেত্রে, পরন্তু আমেরিকার পুঁজিবাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেটি তার নতুন দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও শক্তিশালী।[8]

১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে ট্রটস্কির দ্বারা চিহ্নিত দ্বন্দ্বগুলি এখন অনেক বেশি উন্নত, এমনকি বিকাশের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্যের স্বার্থে 'বিশ্বকে সংগঠিত করার' অভিযান বিশ্বব্যাপী তাণ্ডবের রূপ নিয়েছে। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের 'আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত', যা আজ থেকে প্রায় নব্বই বছর আগে ট্রটস্কি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা ভালভাবেই চলছে।

কিন্তু আমেরিকান আগ্নেয়গিরিই সামরিক অগ্ন্যুৎপাতের একমাত্র কারণ নয়। আন্তর্জাতিক পরিসরে সামরিক ব্যয়ের ব্যাপক বৃদ্ধি চলছে। যুদ্ধের দেবতারা আবার তৃষ্ণার্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান দুই পরাজিত শক্তি তাদের ভন্ডামীর শান্তিবাদী ভান ত্যাগ করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জার্মান বুন্দেস্তাগ দেশটির সামরিক বাজেট তিনগুণ বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে। জাপান, ইতিমধ্যেই এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি, 'প্রতিরক্ষা' ক্ষাতে ব্যয় ২৬.৩ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে। তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, বিশ্বের একটি নতুন পুনর্বিভাজন থেকে যেখানে লুন্ঠনের মাল ভাগ হবে তার থেকে যাতে বাদ না পরে তার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যদি তখন পৃথিবীকে ভাগ করার মত অবশিষ্ঠ কিছু থাকে।

বিশ্ব যে একটি বৈশ্বিক সামরিক বিপর্যয়ের অতল গহ্বরের দিকে এগোচ্ছে তা এখন পুঁজিবাদী মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে একটি 'উস্কানিবিহীন যুদ্ধ' হিসাবে নিরলসভাবে এক বছর ধরে প্রচারে তুলে ধরার পর, বুর্জোয়া ভাষ্যকাররা এখন যুদ্ধটিকে আরও বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ গিডিয়ন রাচম্যান সম্প্রতি বর্তমান পরিস্থিতি এবং '1930 এবং 1940 এর দশকে আন্তর্জাতিক উত্তেজনার বৃদ্ধি' 'ঐতিহাসিকভাবে সমান্তরাল' বলে উল্লেখ করেছেন।

চীনের রাষ্ট্রপতি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া ও ইউক্রেনের রাজধানীতে একযোগে এবং প্রতিযোগীতামূলক সফর করেছেন তা ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক তাত্পর্যকে নির্দেশ করে। পূর্ব এশিয়ায় জাপান ও চীন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। উভয় দেশই বুঝতে পারছে যে তাদের সংগ্রাম ইউরোপের সংঘাতের ফলাফল দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হবে।

ইউক্রেনের উপর চীন এবং জাপানের মধ্যেকার এই ছায়া মুষ্ঠীযুদ্ধ একটি বিস্তৃত প্রবণতার অংশ। ইউরো-আটলান্টিক এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমশ একে অপরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যা উদীয়মান হচ্ছে তা হল এমন কিছু যা আরও বেশি করে একটি একক ভূ-রাজনৈতিক সংগ্রামের মতো দেখায়।[9]

প্রতিটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব অবশ্যই তার সময়ের একটি পণ্য। কিন্তু ট্রটস্কি একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যার সমসাময়িক ঘটনাবলীর উপর সক্রিয় প্রভাব তার জীবদ্দশার বাইরেও বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাঁর লেখাগুলি শুধুমাত্র গত শতাব্দীর প্রথম চার দশকের ঘটনাগুলির অন্তর্দৃষ্টি প্রদানের জন্যই অধ্যয়ন করা হয় না, পরন্তু বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলি বোঝার এবং তাতে হস্তক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ হিসাবেও।

1991 সালে ইউএসএসআর বিলুপ্তির প্রাক্কালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ট্রটস্কিবাদের ১,১২৪ পৃষ্ঠার একটি বিশাল গবেষণায়, মার্কসবাদবিরোধী শিক্ষাবিদ এবং ফরেন রিলেশনস কাউন্সিলের দীর্ঘদিনের সদস্য প্রয়াত রবার্ট জে. আলেকজান্ডার, উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে ইউএসএসআর এর বিলুপ্তি একটি গণ আন্দোলন হিসাবে ট্রটস্কিবাদকে পুনরুত্থানের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি লিখেছেন:

১৯৮০-এর দশকের শেষের দিক পর্যন্ত ট্রটস্কিবাদীরা কখনো কোনো দেশে ক্ষমতায় আসেনি। যদিও আন্তর্জাতিক ট্রটস্কিবাদ একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থার সমর্থন উপভোগ করে না, যেমনটি স্ট্যালিনবাদের উত্তরাধিকারীরা করেছিল, বিশ্বের বেশিরভাগ জাতির রাজনৈতিক জীবনের অস্থিরতার সাথে বিভিন্ন দেশে আন্দোলনের অধ্যবসায় মানে এই সম্ভাবনা যে একটি ট্রটস্কিস্ট পার্টি অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারে তা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।[10]

শাসক অভিজাতরা অধ্যাপক আলেকজান্ডারের সতর্কবাণীকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছিল। তারা স্ট্যালিনবাদী শাসনের পতনের ফলে বাম দিকের রাজনৈতিক বিপদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ট্রটস্কিকে অসম্মানিত করা ছদ্ম-জীবনীগুলি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত করে। কিন্তু প্রফেসর ইয়ান থ্যাচার, জিওফ্রে সোয়াইন এবং রবার্ট সার্ভিসের কাজ, পুঁজিবাদী সংবাদমাধ্যমে প্রাথমিকভাবে উচ্ছ্বসিত পর্যালোচনা সত্ত্বেও, খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের মিথ্যাচার আন্তর্জাতিক কমিটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ করেছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত প্রফেসর রর্বাট সার্ভিসের লেখা জীবনীটি তার প্রকাশক হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের জন্য বিব্রতকর বিষয় হয়ে ওঠে, যখন আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল রিভিউ স্বীকার করে যে সার্ভিসের জীবনী 'হ্যাক-ওয়ার্কের একটি অংশ' হিসাবে আমার সমালোচনা ছিল 'কঠোর শব্দ কিন্তু ন্যায়সঙ্গত।'[11]

অগণিত শত্রুদের দ্বারা নিরলস নিপীড়নের মুখে আন্তর্জাতিক ট্রটস্কিবাদী আন্দোলনের অধ্যবসায় এবং বৃদ্ধির জন্য একটি ঐতিহাসিক বস্তুবাদী ব্যাখ্যা রয়েছে। বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের বৈশ্বিক শ্রেণী সংগ্রামকে কেন্দ্র করে ট্রটস্কির জীবদ্দশায় রাজনৈতিক ঘটনার সাধারণ গতিপথ নির্ধারণকারী মৌলিক উদ্দেশ্যমূলক অর্থনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলিকে ইতিহাসের দ্বারা বাতিল করা হয়নি। ট্রটস্কির স্থায়ী বিপ্লবের তত্ত্ব আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর দ্বারা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অপরিহার্য ঐতিহাসিক-কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে। তিনি 1930 সালে লিখেছেন:

জাতীয় সীমার মধ্যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সমাপ্তি কল্পনাতীত। বুর্জোয়া সমাজে সঙ্কটের একটি মৌলিক কারণ হল এর দ্বারা সৃষ্ট উৎপাদিকা শক্তিগুলিকে আর জাতীয় রাষ্ট্রের কাঠামোর সাথে মিলিত করা যায় না। এর থেকে একদিকে, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, অন্যদিকে ইউরোপের বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলির জোট এর মতো ইউটোপিয়া অনুসরণ করে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব জাতীয় অঙ্গনে শুরু হয়, এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ভাসিত হয় এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে তা সম্পূর্ণ হয়। এইভাবে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শব্দের একটি নতুন এবং বিস্তৃত অর্থে একটি স্থায়ী বিপ্লবে পরিণত হয়; এটি কেবলমাত্র আমাদের সমগ্র গ্রহে নতুন সমাজের চূড়ান্ত বিজয়েই পূর্ণতা লাভ করে।[12]

ঘটনাগুলিকে ছাপিয়ে যাওয়া থেকে দূরে, উৎপাদন শক্তির ব্যাপক বিশ্বব্যাপী সমন্বিত বিকাশ এবং শ্রমিক শ্রেণীর বিশাল বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক শ্রেণী সংগ্রামের একটি পরস্পর নির্ভরশীল প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বিষয়ে ট্রটস্কির ধারণাকে আরও প্রমাণিত করেছে। ইতিহাসের আন্দোলন এখন নির্ণায়কভাবে মহান মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও বিপ্লবীর কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে কাছাকাছি করেছে।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি এমন যা ট্রটস্কির চিনতে ও বিশ্লেষণ করতে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের একই ঐতিহাসিক যুগের চূড়ান্ত পর্যায়ে বাস করছি। ট্রটস্কি যে ঐতিহাসিক সমস্যাগুলির সাথে মোকাবিলা করেছিলেন - বিশেষ করে 1923 সালে লেনিনের স্ট্রোকে অক্ষম হওয়া এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে অপসারণের সেই সময় থেকে ১৯৪০ সালে তার নিজের হত্যার মধ্যে যে ষোল বছরে - শ্রমিক শ্রেণীর মুখোমুখি হওয়া অমীমাংসিত অস্তিত্বের রাজনৈতিক সমস্যাগুলি থেকে গেছে: সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, গণতন্ত্রের ভাঙ্গন এবং ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, গণ বেকারত্ব, দারিদ্র্য, বিদ্যমান গণশ্রমিক সংগঠনগুলির বিশ্বাসঘাতকতা এবং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কাঠামোতে তাদের সংহতকরণ।

1927 সালে বাম বিরোধী দলের সদস্য। (সামনে বাঁদিক থেকে) লিওনিড সেরেব্রিয়াকভ, কার্ল রাদেক, লিও ট্রটস্কি, মিখাইল বোগুস্লাভস্কি, ইয়েভগেনি প্রিওব্রাজেনস্কি; (পিছনে) ক্রিশ্চিয়ান রাকভস্কি, জ্যাকব ড্রবনিস, আলেকসান্ডার বেলোবোরোডভ এবং লেভ সোসনোভস্কি

এই বছর সোভিয়েত ইউনিয়নে বাম বিরোধী দল প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ করছে। ট্রটস্কির প্রাথমিক প্রকাশ্য সমালোচনা, ১৯২৩ সালের শরৎকালে, সোভিয়েত রাষ্ট্র এবং কমিউনিস্ট পার্টি উভয় ক্ষেত্রেই আমলাতন্ত্রের বৃদ্ধি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে রাজনৈতিকভাবে ফলাফলমূলক সংগ্রামের সূচনা করে। স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত আমলাতন্ত্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর ভাগ্য এবং সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের পক্ষে বিপর্যয়কর পরিণতি ছিল। এই দখলের রাজনৈতিক ন্যায্যতা-যা আমলাতন্ত্রের কাছে শ্রমিক শ্রেণীর অধীনস্ততা, শ্রমিকদের গণতন্ত্রের সব ধরনের ধ্বংস, এবং শেষ পর্যন্ত ইউএসএসআর-এর মধ্যে মার্কসবাদীদের শারীরিকভাবে খতম করা স্টালিনবাদী মতবাদ এক দেশে সমাজতন্ত্র দ্বারা প্রদান করা হয়েছিল।' এই ছদ্ম-তত্ত্ব, ট্রটস্কির স্থায়ী বিপ্লবের তত্ত্বের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম এবং সর্বাগ্রে নির্দেশিত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রের সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রত্যাখ্যানকে অনুমোদন করেছিল যার উপর ভিত্তি করে অক্টোবর বিপ্লব হয়েছিল।

স্ট্যালিনবাদের বিরুদ্ধে ট্রটস্কির সংগ্রামের একটি গবেষণায় নিবেদিত একটি সম্প্রতি প্রকাশিত খন্ড নিম্নোক্ত দাবির মধ্যে দিয়ে শুরু হয়: “তার জীবনের শেষ দুই দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে, রাজনৈতিক ও তাত্ত্বিক সমস্যা যা লিও ট্রটস্কিকে অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে বেশি চিন্তিত করেছিল তা ছিল সোভিয়েত আমলাতন্ত্রের সমস্যা। ।'[13]

এই বিবৃতিটি মৌলিকভাবে ভুল. ট্রটস্কির কাছে সোভিয়েত আমলাতন্ত্রের সমস্যা ছিল বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতার প্রশ্নে সম্পূর্ণ গৌণ। প্রকৃতপক্ষে, স্তালিনবাদী আমলাতন্ত্রের প্রকৃত প্রকৃতি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক শ্রেণী সংগ্রাম এবং বিশ্ব সমাজতন্ত্রের ভাগ্যের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বোঝা যায়। অক্টোবর বিপ্লবের পর মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে শ্রমিকশ্রেণীর পরাজয়ের পরিস্থিতিতে বলশেভিক পার্টির মধ্যে যে প্রবণতা উত্থাপিত হয়েছিল- স্ট্যালিনবাদ মার্কসীয় আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছিল। যেমনটি ট্রটস্কি তার হত্যার মাত্র এক বছর আগে লিখেছিলেন, 'এটা বলা যেতে পারে যে স্তালিনবাদের সমগ্রটি, তাত্ত্বিক শাখা প্রশাখা, স্থায়ী বিপ্লবের তত্ত্বের সমালোচনা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল যেভাবে এটি 1905 সালে প্রণীত হয়েছিল।'[14]

আমলাতান্ত্রিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে লড়াই সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিকতাবাদের কর্মসূচির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সকল রাজনৈতিক কাজে সেই একই কৌশলগত নীতি প্রযোজ্য। সমসাময়িক যুগের বিশাল সমস্যার কোনো জাতীয় সমাধান নেই।

ট্রটস্কির স্থায়ী বিপ্লবের তত্ত্ব আন্তর্জাতিক শ্রেণী সংগ্রামের বস্তুনিষ্ঠ গতিশীলতার বিশ্লেষণ প্রদান করেছিল যার উপর ভিত্তি করে বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কৌশল তৈরি করতে হয়েছিল। কিন্তু ট্রটস্কি এটাও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুঁজিবাদী দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে সমাজতন্ত্রের বিজয় বাস্তবায়িত হবে না। এই দ্বন্দ্বগুলি কেবলমাত্র উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি এবং শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু সম্ভাবনার বাস্তবে রূপান্তর নির্ভর করে বিপ্লবী দলের সচেতন সিদ্ধান্ত ও কর্মের উপর।

১৯৩৮ সালে চতুর্থ আন্তর্জাতিকের প্রতিষ্ঠাতা দলিলে ট্রটস্কির ঘোষণা যে 'মানবজাতির ঐতিহাসিক সঙ্কট বিপ্লবী নেতৃত্বের সঙ্কটে হ্রাস পেয়েছে' এটিই ছিল শ্রমিক শ্রেণীকে বিগত পনের বছর ধরে পরাজয়ে ভুগতে থাকার মূল সংক্ষিপ্তসার যা স্ট্যালিনবাদী এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির সুবিধাবাদ এবং বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি।

১৯২৬ সালে ব্রিটেনে সাধারণ ধর্মঘটের পরাজয়ের মতো ঘটনা, ১৯২৭ সালে চিয়াং কাই-শেকের দ্বারা সাংহাইতে শ্রমিক শ্রেণীকে পিষে ফেলা, ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎসিদের বিজয়, ১৯৩৬ সালে গণ ধর্মঘটের পর ফরাসি শ্রমিক শ্রেণীর হতাশাগ্রস্ত হওয়া পপুলার ফ্রন্টের রাজনীতির জন্য, ১৯৩৯ সালে স্প্যানিশ বিপ্লবের পরাজয় এবং অবশেষে, হিটলারের সাথে স্তালিনের চুক্তি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের কারণে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের বিস্তৃত অংশের মধ্যে সমাজতন্ত্রের সম্ভাবনা নিয়ে হতাশাবাদ এবং মোহভঙ্গের জন্ম দেয়। এই পরাজয় কি প্রমাণ করেনি, তারা প্রশ্ন করেছিল যে, শ্রমিক শ্রেণী বিজয় ও ক্ষমতা ধরে রাখতে অক্ষম?

ট্রটস্কি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেই নৈতিকতাকে যা প্রশ্নটিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সমাজতন্ত্রের উপলব্ধির পথে বাধা শ্রমিক শ্রেণীর 'অবিপ্লবী' চরিত্র ছিল না, বরং, বিদ্যমান গণ পার্টিগুলির পচনশীলতা ছিল। কিন্তু এটি আরও একটি প্রশ্ন তুলেছে: এমন একটি দল গড়ে তোলা কি সম্ভব ছিল যার নেতারা বিপ্লবের দাবি অনুযায়ী কাজ করবে? যারা এই সম্ভাবনাকে অস্বীকার করেছিল তারা সবচেয়ে হতাশাবাদী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দ্বারা চালিত হয়েছিল, অর্থাত্, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্মসূচি একটি অবাস্তব ইউটোপিয়াকে এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং মানবতার অবস্থানটি মূলত, নৈরাশ্যজনক। ১৯৩৯ সালের শরতে ট্রটস্কি লিখেছিলেন, 'আমাদের সমস্ত বিরোধীরা এই চিন্তাভাবনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে না,' তবে তাদের সকলেই - অতি-বামপন্থী, মধ্যপন্থী ওনৈরাজ্যবাদী, স্ট্যালিনবাদী এবং সোশ্যাল ডেমোক্রাটদের কথা না হয় ছেড়েই দিন - পরাজয়ের দায় নিজেদের থেকে সরিয়ে নিয়ে সর্বহারা শ্রেণীর কাঁধে চাপিয়েছে। তাদের কোনোটিই সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ করে না যে প্রলেতারিয়েত কোন পরিস্থিতিতে সমাজতান্ত্রিক পতন ঘটাতে সক্ষম হবে।”[15]

ট্রটস্কি বাম বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক হতাশার উৎস চিহ্নিত করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পেটি-বুর্জোয়া বাম শিক্ষাবিদদের মার্কসবাদ বিরোধীতার অপরিহার্য ভিত্তি ছিল শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করা। ট্রটস্কির ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে তাদের যুক্তিগুলোকে নির্দেশ করে (যদিও তারা এটা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও), ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল চেয়েছিল শ্রমিক শ্রেণীকে র্মাক্সবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে। উত্তর-আধুনিকতাবাদীরা 'গ্র্যান্ড ন্যারেটিভস' এর সমাপ্তি ঘোষণা করেছে যা ইতিহাসকে একটি বস্তুনিষ্ঠ আইন-শাসিত প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে এবং শ্রমিক শ্রেণীকে সমাজের কেন্দ্রীয় বিপ্লবী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সামাজিক চিন্তাধারায় পশ্চাদগতির অনিবার্য পরিণতি ছিল মার্কসবাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান এবং শ্রমিক শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে সামাজিক বিপ্লব। এই পশ্চাদপসরণ এর দুই নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে, আর্নেস্টো ল্যাকলাউ এবং চ্যান্টেল মউফে, ১৯৮৫ সালে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন:

এই মুহুর্তে আমাদের স্পষ্টভাবে বলা উচিত যে আমরা এখন মার্কসবাদ-পরবর্তী অবস্থানে আছি। মার্কসবাদের দ্বারা বিস্তৃত বিষয়গততা এবং শ্রেণীগুলির ধারণা বজায় রাখা আর সম্ভব নয়, না সম্ভব পুঁজিবাদী বিকাশের ঐতিহাসিক গতিপথের দৃষ্টিভঙ্গি...[16]

মার্কসবাদ বিরোধী তাত্ত্বিকদের ঘটনাগুলি দ্বারা খণ্ডন করা হয়েছে। শুধুমাত্র ট্রটস্কিবাদী আন্দোলনই বুঝতে পেরেছিল এবং শ্রেণী সংগ্রামের বৈশ্বিক উত্থানের জন্য প্রস্তুতি করেছে যা এখন চলছে। স্থায়ী বিপ্লবের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে, আন্তর্জাতিক কমিটি ১৯৮৮ সালে বলেছিল:

আমরা অনুমান করি যে সর্বহারার সংগ্রামের পরবর্তী পর্যায়টি একটি আন্তর্জাতিক গতিপথ বরাবর বস্তুনিষ্ঠ অর্থনৈতিক প্রবণতা এবং মার্কসবাদীদের বিষয়গত প্রভাবের সম্মিলিত চাপের নিচে অনির্দিষ্টভাবে বিকাশ লাভ করবে। প্রলেতারিয়েত আন্তর্জাতিক শ্রেণী হিসাবে অনুশীলনে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করার প্রবণতা বাড়াবে; এবং মার্কসীয় আন্তর্জাতিকতাবাদীরা, যাদের নীতিগুলি এই প্রবণতার প্রকাশ, তারা এই প্রক্রিয়াটি গড়ে তুলবে এবং এটিকে সচেতন রূপ দেবে।[17]

ত্বরান্বিত বিশ্ব পুঁজিবাদী সঙ্কট এবং বৈশ্বিক শ্রেণী সংগ্রাম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং পুঁজিবাদের উৎখাতের জন্য বস্তুনিষ্ঠ শর্ত প্রদান করবে। 'কিন্তু,' যেমন ট্রটস্কি সতর্ক করেছিলেন, 'বিপ্লবী পার্টি সর্বহারা শ্রেণীর মাথায় না দাঁড়ানো পর্যন্ত মহান ঐতিহাসিক সমস্যার কোনো অবস্থাতেই সমাধান হবে না।'

বেগ এবং সময়ের ব্যবধানের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এটি সাধারণ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ বা আমাদের নীতির দিকনির্দেশনাকে পরিবর্তন করে না। উপসংহারটি সহজ: দশগুণ শক্তি দিয়ে সর্বহারার রক্ষাকারীদের শিক্ষিত ও সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ঠিক এটাই চতুর্থ আন্তর্জাতিকের কাজ।[18]

বিগত শতাব্দীর ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাগুলি পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি করা সমস্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, দল এবং প্রবণতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করেছে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর অভ্যুত্থান স্ট্যালিনবাদী, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট, মাওবাদী, বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী, নৈরাজ্যবাদী এবং পাবলোইটদের প্রতিবিপ্লবী ভূমিকাকে উন্মোচিত করেছে। শুধুমাত্র চতুর্থ আন্তর্জাতিক, আন্তর্জাতিক কমিটির নেতৃত্বে, ইতিহাসের পরীক্ষা পূরণ করেছে। প্রতিটি মহাদেশে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ট্রটস্কিবাদের তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির উপর গড়ে উঠবে যা একবিংশ শতাব্দীর মার্কসবাদ।

* * * *

এই খন্ডটি বিজয় ডায়াস (২৭শে আগস্ট, ১৯৪১ – ২৭শে জুলাই, ২০২২) এর স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে, চতুর্থ আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটির একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য এবং পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এর শ্রীলঙ্কা শাখার সাধারণ সম্পাদক। কমরেড বিজয় সংগ্রামের মাঝে মারা যান, বৃদ্ধ বয়সেও তার যৌবন কালের মতো আদর্শকে সীমাহীন আবেগের সাথে অটুটভাবে ধরে রেখেছিলেন। তাঁর সাহসী অবদান, ট্রটস্কিবাদী নীতির প্রতি অঙ্গীকার এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি নিষ্ঠা- শ্রমিক শ্রেণীর জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ প্রদান করবে বিশাল শ্রেণী যুদ্ধে যা মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করবে।

ডেভিড নর্থ

ডেট্রয়েট

৪ই এপ্রিল, ২০২৩


[1]

International Committee of the Fourth International, What Is Happening in the USSR: Gorbachev and the Crisis of Stalinism (Detroit: Labor Publications, 1987), p. 12.

[2]

David North, Perestroika Versus Socialism: Stalinism and the Restoration of Capitalism in the USSR (Detroit: Labor Publications, 1989) p. 49.

[3]

The National Interest, 19 (Summer 1989), p. 3.

[4]

The Death Agony of Capitalism and the Tasks of the Fourth International (The Transitional Program), https://www.marxists.org/archive/trotsky/1938/tp/tp-text.htm#op

[5]

The Third International After Lenin (Section 2: The United States and Europe), https://www.marxists.org/archive/trotsky/1928/3rd/ti01.htm#p1-02

[6]

“War and the Fourth International,” June 10, 1934, https://www.marxists.org/archive/trotsky/1934/06/warfi.htm

[7]

“Order Out of Chaos,” https://www.marxists.org/archive/trotsky/1919/xx/order.html

[8]

“Nationalism and Economic Life,” https://www.marxists.org/archive/trotsky/1934/xx/nationalism.htm

[9]

“China, Japan and the Ukraine war,” Financial Times, March 27, 2023.

[10]

Robert J. Alexander, International Trotskyism 1929-1985: A Documented Analysis of the Movement (Durham and London: Duke University Press, 1991) p. 32.

[11]

Review by Bertrand M. Patenaude in The American Historical Review, Vol. 116, No. 3 (June 2011), p. 902; also cited in In Defense of Leon Trotsky, by David North (Oak Park, MI: Mehring Books, 2013), pp. 243-48.

[12]

Leon Trotsky, “What is the Permanent Revolution?,” The Permanent Revolution, https://www.marxists.org/archive/trotsky/1931/tpr/pr10.htm

[13]

Thomas M. Twiss, Trotsky and the Problem of Soviet Bureaucracy (Chicago: Haymarket Books, 2014), p. 1.

[14]

“Three Conceptions of the Russian Revolution,” (1939),

https://www.marxists.org/archive/trotsky/1939/xx/3concepts.htm

[15]

“The USSR in War,” In Defense of Marxism, https://www.marxists.org/archive/trotsky/1939/09/ussr-war.htm

[16]

Ernesto Laclau and Chantelle Mouffe, Hegemony & Socialist Strategy: Toward a Radical Democratic Politics (London and New York: Verso) p. 4.

[17]

David North, Report to the 13th National Congress of the Workers League, Fourth International, July-December 1988, p. 39.

[18]

Manifesto of the Fourth International on Imperialist War (1940), https://www.marxists.org/history/etol/document/fi/1938-1949/emergconf/fi-emerg02.htm

Loading