বাংলা

নাৎসিদের বই পোড়ানোর নব্বই বছর

এই নিবন্ধটি মূলত জার্মান ভাষায় টুইটারে পোস্ট করা হয়েছিল।

আজ থেকে নব্বই বছর আগে, নাৎসিরা তাদের সন্ত্রাসের রাজত্বের শুরুতে সংস্কৃতি ও সাহিত্যের উপর আক্রমণ করেছিল যা ধ্বংসের যুদ্ধ এবং ব্যাপক গণহত্যার দিকে পরিচালিত করেছিল। ১০ই মে প্রথমে বার্লিনে বই পোড়ানো শুরু হয় এবং পরে অন্যান্য শহরে।

Loading Tweet ...
Tweet not loading? See it directly on Twitter

টমাস এবং হেনরিখ মান, স্টেফান জুইগ, কার্ট টুচোলস্কি, কার্ল ভন ওসিটস্কি, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, এরিখ কাস্টনার এবং আরও অনেক লেখকের কাজ প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানবিক, প্রগতিশীল এবং সংহতি প্রচারকারী সবকিছুই নির্মূল করতে।

বই পোড়ানোর কেন্দ্রে ছিল সমাজতন্ত্রী ও মার্কসবাদীদের লেখা। আগুনে হাত রেখে নেওয়া শপথগুলির মধ্যে একটি ছিল: “শ্রেণী সংগ্রাম এবং বস্তুবাদের বিরুদ্ধে, ভক্সগেমেইনশ্যাফ্টের জন্য এবং জীবনের প্রতি একটি আদর্শবাদী মনোভাব! মার্কস ও কাউটস্কির লেখা আমি নিজে হাতে আগুনে দিয়েছি।'

এছাড়াও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, রোজা লুক্সেমবার্গ, কার্ল লিবনেখ্ট, অগাস্ট বেবেল, ফ্রাঞ্জ মেহরিং এবং রাশিয়ার ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের দুই নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন এবং লিওন ট্রটস্কির লেখাগুলিও পোড়ানো হয়েছিল।

ট্রটস্কি নাৎসি সন্ত্রাসের চরিত্রের অন্য কারো চেয়ে বেশি বুঝেছিলেন। “আগুনের কুণ্ডলীতে যাতে অধর্মীয় মার্কসবাদী সাহিত্য জ্বালানো হচ্ছিল তা জাতীয় সমাজতন্ত্রের শ্রেণী প্রকৃতিকে উজ্জ্বলভাবে আলোকিত করে,” তিনি “জাতীয় সমাজতন্ত্র কী?” এতে লিখেছেন।

এবং আরও: “জাতীয় পারস্পারিক গঠন থেকে যা কিছু বাদ দেওয়া উচিত ছিল সমাজের স্বাভাবিক বিকাশের সময় সাংস্কৃতিকে ঝেরে বের করে দেবার আকারে সেটাই এখন গলা থেকে বেড়িয়ে আসছে; পুঁজিবাদী সমাজ অপাচ্য বর্বরতাকে উস্কে দিচ্ছে।'

বই পোড়ানোর বার্ষিকী বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ও যুবকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে হবে। আজ একই দ্বন্দ্বগুলি বিকাশ করছে যা ২০ শতকে বর্বরতার দিকে পরিচালিত করেছিল। ফ্যাসিবাদ এবং বিশ্বযুদ্ধের বিপদ ফিরে এসেছে।

সর্বোপরি, জার্মানির শাসক শ্রেণী তার অতীতের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে নির্মূল করার যুদ্ধের ৮২ বছর পর, জার্মান ট্যাঙ্কগুলি আবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে গড়িয়েছে।

এবং ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনও বেশ উন্নত। বার্লিনের হামবোল্ট ইউনিভার্সিটিতে, যেখানে ১৯৩৩ সালের বই পোড়ানোর সূত্রপাত হয়েছিল, সেখানে নাৎসি অপরাধগুলিকে ছোট করে দেখা হচ্ছে এবং ন্যায়সঙ্গত করা হয়েছে।

'হিটলার কোন সাইকোপ্যাথ ছিলেন না, এবং তিনি দুষ্ট ছিলেন না। তিনি চাননি যে লোকেরা তার টেবিলে ইহুদিদের ধ্বংসের বিষয়ে কথা বলুক, 'হামবোল্টের অধ্যাপক জর্গ ব্যাবেরোস্কি ২০১৪ সালে ডের স্পিগেলকে বলেছিলেন।

একই সাক্ষাত্কারে, ব্যাবেরোস্কি নাৎসি ক্ষমাপ্রার্থী আর্নস্ট নল্টেকে সমর্থন করেছিলেন, যিনি ইতিমধ্যেই ১৯৮০-এর দশকে রাশিয়ান অক্টোবর বিপ্লবের বোধগম্য প্রতিক্রিয়া হিসাবে জাতীয় সমাজতন্ত্রকে ন্যায্যতা দিয়েছিলেন।

যদিও নোল্টে তার থিসিসের জন্য সে সময় চারদিকে নিন্দিত হয়েছিল, শাসক শ্রেণীর শত্রু আজ আবারও সর্বসম্মতভাবে বাম দিকে। ব্যাবেরোস্কি এবং জার্মান সামরিকবাদের প্রত্যাবর্তনের সমালোচনা করার জন্য, সোজিয়ালিস্টিশে গ্লিচেইটসপার্টেই (জার্মানির সোশ্যালিষ্ট ইকোয়ালিটি পার্টি-এসজিপি) কে সংবিধানের সুরক্ষা অফিস (Office for the Protection of the Constitution) [জার্মান সিক্রেট সার্ভিস] দ্বারা নজরদারির অধীনে রাখা হয়েছে।

১৯৩০-এর দশকের মতো, বুর্জোয়ারা শ্রমিক ও যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জঙ্গীবাদ এবং বামেদের আন্দোলন দেখে আতঙ্কিত। এটি আশঙ্কা করছে যে এই বিরোধিতা ক্রমবর্ধমানভাবে SGP-এর আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একত্রিত হচ্ছে।

নব্বই বছর আগে হিটলারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে শ্রমিকদের নেতৃত্ব তাঁদের বাধা দিয়েছিল। এইবার এটি নিশ্চিত করা দরকার যে হেনরিখ হাইনের সতর্কবাণী, 'যেখানেই তারা বই পুড়িয়ে ফেলবে, তারা শেষ পর্যন্ত মানুষকে পুড়িয়ে ফেলবে,' সেই সত্য আবার প্রমাণিত না হয়।

এর জন্য প্রয়োজন এসজিপি এবং চতুর্থ আন্তর্জাতিককে একটি নতুন গণ সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে গড়ে তোলা যা আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমিক শ্রেণীকে একত্রিত করবে এবং বরাবরের মত পুঁজিবাদী বর্বরতার অবসান ঘটাবে।

Loading