বাংলা

পাকিস্তান স্বৈরাচারী শাসনের দিকে ঝুঁকেছে কারণ কর্তৃপক্ষ ইমরান খান এবং তাঁর ইসলামিক জনতাবাদী পিটিআই-এর সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা শুরু করেছে

পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক সংকট এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দ্বারা অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের প্রচারণা অসাবধানতাবশত IMF-নির্দেশিত ব্যয় কঠোরতা, খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ব্যাপক গণ বেকারত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপক শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলে আতঙ্কিত হয়ে, সরকার ও সামরিক বাহিনী একনায়কতান্ত্রিক ধরণের শাসন অবলম্বন করছে।

গত সপ্তাহে সরকারের-আদেশে, সেনাবাহিনীর রেঞ্জার-খানকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার কার্যকর করায় তার ইসলামিক জনতাবাদী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বা মুভমেন্ট ফর জাস্টিস এর সমর্থকদের দ্বারা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে সরকার ও সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগুলিতে ব্যাপক হামলা রয়েছে।

পাকিস্থানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লাহোরে নিজের বাড়ীতে সংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন। ১৮ই মে, ২০২৩ [AP Photo/ K.M. Chaudary]

সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া ছিল বর্বর দমনমূলক। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবাগুলি চার দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ করা হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের তথ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। জাতীয় রাজধানী ইসলামাবাদ এবং পাকিস্তানের চারটি প্রদেশেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার এবং আটক করা হয়েছে। অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন।

চার দিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনী ও খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। তারা শুধুমাত্র গত শুক্রবার তা শেষ করেছে, সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করার পরে এবং মাল্টি বিলিয়ন টাকার আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পিটিআই প্রধানের গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলে ঘোষণা করার পরে, এবং আদালত আদেশ জারি করে যে খানকে মূল অভিযোগে পুনঃরায় ও অন্য অভিযোগে ১৭ই মে পর্যন্ত গ্রেফতার করা যাবে না।

এক সপ্তাহ ধরে, পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থির থেকে যায়, পাকিস্তানি রাজনৈতিক অভিজাত ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে ফাটল কেবল গভীরতর হয়।

সেনাবাহিনী ও সরকার পিটিআই নেতা ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা শুরু করেছে। খান দাবি করেছেন ৭,০০০ পিটিআই নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলি কম সংখ্যা দেখাচ্ছে, তবে একমত যে কয়েক হাজার।

সেনাবাহিনী প্রধান (সিওএএস) জেনারেল অসীম মুনিরের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ কর্পস কমান্ডার সম্মেলনের সমাপ্তিতে, সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে যে সামরিক বাহিনীর উপর হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রতিবাদকারীদের সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। সামরিক কর্মীদের সভাপতিত্বে, এই জাতীয় আদালতগুলি জনসাধারণ এবং মিডিয়ার জন্য বন্ধ থাকে এবং তাদের রায়গুলির বিরুদ্ধে এমনকি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করা যায় না।

সেনাবাহিনীর প্রেস অফিস, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ ব্যুরো (আইএসপিআর), বাহিনীর কমান্ডারদের বৈঠকের পরে একটি বিবৃতি জারি করেছে যাতে বলা হয়েছে, “ফোরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা সামরিক স্থাপনাগুলি, কর্মী এবং সরঞ্জামের বিরুদ্ধে এই জঘন্য অপরাধে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে ন্যায় বিচারের জন্য পাকিস্তান আর্মি আইন এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সহ পাকিস্তানের আইনের অধীনে।

এই নির্লজ্জ স্বৈরাচারী পদক্ষেপ এবং আইএসপিআরের বিবৃতি যে মাত্রায় সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-যারা দীর্ঘকাল ধরে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ঘটনার উল্ল্যেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এবং যাদের যথেষ্ট অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে-বিক্ষোভকারীদের আক্রমণে তাঁরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তা বোঝায়। আইএসপিআর এর বিবৃতিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, গত সপ্তাহের ঘটনাগুলিতে পাকিস্তানের কৌশলগত শত্রু ভারতের হাত ছিল এবং তারা সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্যকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। সোমবারের বৈঠকে কমান্ডাররা, আইএসপিআর ঘোষণা করেছে, 'সেনা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বাহ্যিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা এবং অভ্যন্তরীণভাবে সাজানো প্রচারণামূলক যুদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই প্রচেষ্টাগুলি সশস্ত্র বাহিনী এবং পাকিস্তানের জনগণের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সাধারণ স্তরের সদস্যদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করার চেষ্টা বোঝানো হয়েছে।'

কোয়ালিশন সরকার - যা পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) লেবেলের অধীনে চলে এবং দুটি দলের নেতৃত্বে যা ২০১৮ সালে খানের নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের নির্বাচনী রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি -সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সামরিক আদালতের সামনে টেনে নিয়ে যাওয়া এবং পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ব্যাবহারকে দ্রুত সমর্থন করেছে।

মঙ্গলবার একটি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে এবং শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন, সামরিক আদালতের ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, যার মাধ্যমে ১৯৫২ সালের পাকিস্তান সেনা আইনের অধীনে সৈন্যদের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধ চালানোর' অভিযুক্ত করে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার করা যেতে পারে, বাহিনীর সামরিক স্থাপনার উপর আক্রমণ বা বিদ্রোহে উস্কানির জন্য। বৈঠকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের ‘মদতদাতা’ এবং ‘উস্কানিদাতাদের’ গ্রেপ্তার করার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

বুধবার, সরকার খান এবং পিটিআই নেতৃত্বকে ৩০ জন 'সন্ত্রাসী' কে হস্তান্তর করার জন্য ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছে, তারা দাবি করেছে যে তারা খানের বিলাসবহুল লাহোরের বাসভবন, জামরান পার্কে লুকিয়ে আছে। সেই সময়সীমা এখন পেরিয়ে গেছে।

পুলিশ খানের বাসভবন ঘেরাও করেছে এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাঞ্জাবের অন্তর্বর্তী সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে পুলিশ শুক্রবার খানের বাসভবন তল্লাশি করতে চায়।

এদিকে, সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে তিক্ত বিরোধ, বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি), উমর আতা বন্দিয়ালের মধ্যে বিরোধ তীব্রতর হয়েছে। পিডিএম সিজেপিকে খানের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট এবং তাকে 'বিশেষ ছাড়' দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। বান্দিয়ালই তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চকে সংগঠিত করেছিলেন যেটি অন্য একটি আদালতের রায় যা সেনা রেঞ্জার্সের দ্বারা খানের আটক করার বিষয়ে তাঁকে অবৈধ্য বলে রায় দেয়, নিম্ন আদালতের একটি রায়কে বাতিল করে যা গ্রেপ্তারকে বহাল রেখেছিল।

সোমবার, জাতীয় পরিষদ প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়ালের বিরুদ্ধে তার 'অসদাচরণ' এবং তার শপথ থেকে 'বিচ্যুতি' হবার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে মামলা প্রস্তুত ও দায়ের করার জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের অনুমোদন দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। এছাড়াও সোমবার, পিডিএম সিজেপির পদত্যাগের দাবিতে ইসলামাবাদের উচ্চ-নিরাপত্তা 'রেড জোন' এ অবস্থিত সুপ্রিম কোর্টের বাইরে একটি অবস্থান করেছে। পিডিএম সমর্থকদের উদ্দেশে, প্রধানমন্ত্রীর ভাইঝি এবং তিনবারের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ বলেছেন, 'বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত দেশের ধ্বংসের জন্য দায়ী।' পরবর্তীকালে তিনি স্পষ্ট করেন যে তিনি সমস্ত বিচারকদের অভিযুক্ত করছেন না, তবে সুপ্রিম কোর্টের সেই বিচারকদের যারা ইমরান খানের 'সুবিধা' করছেন।

১৫ই মে এর অবস্থানটি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ECP) দ্বারা একটি পিটিশন সংক্রান্ত আদালতের কার্যক্রমের সময়ের সাথে কাকতলীয়ভাবে মিলে গিয়েছিল, পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের তারিখ হিসাবে আগের দিন, রবিবার, ১৪ই মে নির্ধারণ করা আরেকটি সিজেপি-রচিত রায়কে পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন করেছিল। জাতীয় এবং অন্তর্বর্তী পাঞ্জাব সরকার সেই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছিল, যা পিটিআই সমর্থকদের দ্বারা শুরু করা মামলা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।

সেনাবাহিনীর দ্বারা প্রকাশ্যে করা সমর্থনের সাথে, সরকার জোর দিচ্ছে যে দুটি প্রদেশ, পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার নির্বাচন, যেখান থেকে পিটিআই এই বছরের শুরুতে সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছিল তাৎক্ষণিক জাতীয় নির্বাচনের প্রচারের অংশ হিসাবে, অক্টোবর পর্যন্ত বিলম্বিত করা উচিত যাতে সেগুলি জাতীয় পরিষদ এবং অন্যান্য প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের সাথে একযোগে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত এবং তীব্র অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে যা বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক জনবহুল দেশকে চালনা করছে।

পিডিএম সরকার - যেটি ১৩ মাস আগে ক্ষমতায় এসেছে, খান এবং তার পিটিআই সামরিক কর্তাদের দ্বারা সাজানো একটি অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে - এটি IMF-এর দাবিকৃত ব্যয় কঠোরতা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার কারণে এর জনপ্রিয় সমর্থন ভেঙ্গে পড়ে।

গত বছর আইএমএফ ইসলামাবাদকে একটি জরুরি ভিত্তিতে অর্থ ঋণ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল যা প্রথমে খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বারা আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত, পিডিএম সরকার কয়েক মাস ধরে আলোচনা এবং অতিরিক্ত ব্যয় কঠোরতা ও বেসরকারিকরণের পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও অতিরিক্ত $1.1 বিলিয়ন ডলার সাহায্য পায়নি, এমনকি যখন পাকিস্তান ঋন খেলাপীর দ্বারপ্রান্তে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যা আইএমএফকে নিয়ন্ত্রণ করে, ভূ-রাজনৈতিক ছাড়ের জন্য চাপ দিতে আলোচনাকে ব্যবহার করছে, তা সে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করাই হোক, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের জন্য নতুন ঘাঁটি হোক বা পাকিস্তান-চীনের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ও সামরিক-নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে দুর্বল করাই হোক।

খান একজন ডানপন্থী ইসলামি জনতাবাদী যার ক্ষমতায় আরোহণ সামরিক বাহিনীর কৌশল দ্বারা সহায়তা করেছিল। খানের প্রতি তার পূর্বের সমর্থন এখন এমণ গোপন যা সবাই জানে, এমনকি সেনা সংস্থাও এই সত্যকে অস্বীকার করে না। রাজনৈতিক মহলে এটি 'ইমরান খান প্রকল্প' নামে পরিচিত।

যাইহোক, আইএমএফ-নির্দেশিত জ্বালানির ভর্তুকিতে কাটছাঁটের উপর জনগণের ক্ষোভের মুখে, গত বছর খান বাকচাতুরী করার পরে সামরিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এবং শাসক শ্রেণীর বেশিরভাগ অংশই খানের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। তারা এটাও বিশ্বাস করে যে তিনি অকারণে আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ের প্রশংসা করে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে মস্কোর সাথে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করে ওয়াশিংটনের বিরোধিতা করেছিলেন।

অফিস থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে খান জনসমর্থন জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছেন, মূলত অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিধ্বস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এক অংশ থেকে, নিজেকে লোক দেখানো IMF ব্যয় কঠোরতার প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়ে এবং পাকিস্তানের প্রতি ওয়াশিংটনের উত্পীড়ন এবং রাজনৈতিক জীবনে সেনাবাহিনীর বহিরাগত ভূমিকার সমালোচনা করে।

গত সপ্তাহের ঘটনার পর, খান বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরকে তাঁর গ্রেপ্তারের জন্য এবং তাকে রাজনৈতিক জীবন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন বলে অভিযুক্ত করেছেন।

বুধবারের মন্তব্যে, খান গিয়ার পরিবর্তন করেছেন। তিনি পিডিএমে থাকা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর তাঁর নিজের এবং সামরিক শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য দায়ী করার চেষ্টা করেছেন। 'পিডিএম নেতারা এবং (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) নওয়াজ শরীফ, যিনি লন্ডনে পলাতক আছেন, দেশের সংবিধানকে অবমাননা করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস করা হচ্ছে বা এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বদনাম হচ্ছে কিনা তা নিয়ে ন্যূনতম উদ্বিগ্ন,' বলেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। পিটিআই নেতা গর্ব করেছেন যে তিনি সর্বদা আন্তর্জাতিক মঞ্চ সহ সবখানে সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করেছেন। 'আমি যখন সেনাবাহিনীকে তিরস্কার করি, তখন মনে হয় আমি আমার বাচ্চাদের সমালোচনা করছি,' তিনি দাবি করেন।

পিটিআই নেতৃত্বের একটি অংশ, যাদের অনেকেই মার্কিন-সমর্থিত স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা এখন খানের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তারা ভয় পায় যে সামরিক বাহিনীকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করার মাধ্যমে - সঙ্কটে জর্জরিত পাকিস্তানি বুর্জোয়াদের শাসনের ধারক এবং এর অপরিহার্য অংশ ওয়াশিংটনের সাথে প্রতিক্রিয়াশীল জোটে - খান তার হাত বাড়িয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।

সাম্প্রতিককালে সরকার বিরোধী ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভগুলিতে শ্রমিক শ্রেণীকে সংঘবদ্ধ করা হয়নি এবং অংশগ্রহণও করেনি। শ্রেণীসচেতন শ্রমিকরা সচেতন তাঁরা জানে যে সকল শাসক-শ্রেণির দল গণতন্ত্রবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদপন্থী এবং অর্থ পুঁজির সাথে আবদ্ধ। এই দলগুলো IMF কর্তৃক নির্দেশিত কঠোর ব্যয় কঠোরতামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে, আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে সমর্থন করেছে, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল ভূ-রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ইসলামিক মৌলবাদকে উস্কে দিয়েছে এবং যা শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত ও ভয় দেখানোর উপায় হিসেবে ব্যাবহার করেছে, এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালিয়ে নৃশংস আচরণ করেছে।

খান বা তার পিটিআইকে কোনো রাজনৈতিক সমর্থন না দিলেও, শ্রমজীবী জনগণকে অবশ্যই সামরিক আদালতের ব্যবহার সহ সরকার বিরোধী বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে চালানো জঘন্য রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের নিন্দা জানাতে হবে। যখন শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম শুরু হবে তখন এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা সংকটাপন্ন ও দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হবে।

বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট সম্পর্কে কিছুই বলেনি। কিন্তু অন্যান্য মার্কিন ব্যক্তিত্ব, যেমন আফগানিস্তান, ইরাক এবং জাতিসংঘে এক সময়ের কুখ্যাত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, জালমে খলিলজাদ, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সুস্পষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করছেন। সাম্প্রতিক টুইটগুলিতে, খলিলজাদ প্রকাশ্যে খানকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন, 'আমি বর্তমান সেনাপ্রধানের পদত্যাগের জন্য এবং সবকিছু যাতে সঠিক পথে আনা যায় তার জন্য নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে আমার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।'

Loading Tweet ...
Tweet not loading? See it directly on Twitter

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পিটিআই সদস্যরা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেসে দরবার করছেন। গত মাসের শেষের দিকে, পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড ব্লোম পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফাওয়াদ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন, যেমনটি ফাওয়াদের স্ত্রী হিবা চৌধুরীর শেয়ার করা একটি টুইটে প্রকাশিত হয়েছে।

সরকারের প্রতি জনসাধারণের অসন্তোষ এবং ক্ষোভ কয়েক দশক ধরে বেড়ে চলা অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক বৈষম্য, এখন খাদ্য ও জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি এবং পাকিস্তানের মুদ্রার ক্রমাগত অবমূল্যায়নের কারণে বেড়েছে। গত গ্রীষ্মের নজিরবিহীন বন্যায় সরকারের অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া, ডলারের ঘাটতির কারণে অনেক আমদানি-ভিত্তিক শিল্পের স্থগিত ও বন্ধ এবং আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ওষুধ শিল্পের আসন্ন বন্ধের কারণে বেকারত্ব ও ক্ষুধা মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়েছে। এর সাথে, COVID-19-এর নতুন রূপের আবির্ভাব এবং মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ সামাজিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে মার্কিন-ন্যাটোর ছায়া যুদ্ধের মতো ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সংকট ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তঃসম্পর্কিত হওয়ায় আসন্ন সময়কাল আরও বিস্ফোরক হয়ে উঠবে। ইউরেশীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে, কারণ ভারত সমর্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেপরোয়াভাবে চীনকে নিশানা করেছে, বিশেষ করে তাইওয়ানের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে।

পাকিস্তানি শ্রমিক ও যুবকদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ হল তাদের সংগ্রামকে স্থায়ী বিপ্লবের কৌশলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা। সাম্রাজ্যবাদ থেকে প্রকৃত স্বাধীনতা সহ শ্রমজীবী মানুষের সবচেয়ে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সামাজিক আকাঙ্ক্ষাগুলি শুধুমাত্র শ্রমিকদের ক্ষমতার জন্য সংগ্রামের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হতে পারে। শ্রমিক শ্রেণীকে অবশ্যই গ্রামীণ মেহনতিদেরকে তাঁদের পেছনে জড়ো করতে হবে বুর্জোয়াদের সকল উপদলের বিরোধিতায় এবং সারা বিশ্বের শ্রমিকদের সাথে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন একটি বিপ্লবী শ্রমিক দল গড়ে তোলা, চতুর্থ আন্তর্জাতিকের আন্তর্জাতিক কমিটির একটি পাকিস্তানী শাখা।

Loading