বাংলা

তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের কারখানা সংশোধনী আইন প্রত্যাহার —একটি রাজনৈতিক প্রতারণা

১লা মে, এম.কে. স্তালিন, দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কারখানা (তামিলনাড়ু সংশোধন) আইন, 2023-কে প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন - যা তার নিজের সরকার দ্বারা প্রবর্তিত শ্রমিক-বিরোধী আইন এবং যা রাজ্য বিধানসভা কয়েক সপ্তাহ আগে পাস করেছে।

কারখানা সংশোধণ আইন অন্যান্য ব্যবস্থাগুলি সহ, দৈনিক কাজের সময় আট ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করার অনুমতি দেয় কোন ওভারটাইম এর মজুরী ছাড়াই, এমন একটি পদক্ষেপ যা শ্রমিক শ্রেণীকে এক শতাব্দী পিছিয়ে দেবে। তামিলনাড়ুর ডিএমকে (দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগাম) সরকারের ব্যবসা পন্থী- শ্রমিক বিরোধী রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে, আইন প্রত্যাহার স্পষ্টভাবে একটি অস্থায়ী কৌশল এবং একটি প্রতারণা।

চেন্নাইতে পার্টির মে দিবসের সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় এই আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বলেছিলেন: 'আমি কখনই অন্যের স্বার্থ দেখাকে আপমান হিসাবে বিবেচনা করি না।' 'যদি আইন প্রণয়ন করা একটি সাহসী পদক্ষেপ হয়,' তিনি যোগ করেন, 'অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে অবিলম্বে সেটি প্রত্যাহার করাও একটি সাহসী পদক্ষেপ ...'

ডিএমকে প্রধান এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিনিয়োগকারী-পন্থী আইন প্রণয়ন করার জন্য তার আসল 'সাহসী' পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনও কথা বলেননি। দীর্ঘ কর্মদিবস উদ্বগ্রিব বিনিয়োগকারীদের তাদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য আবেদন করবে বলে স্বীকার করে, স্ট্যালিন বলেন: 'তামিলনাড়ুতে বিপুল বিনিয়োগ আকর্ষণ করার এবং হাজার হাজার যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে বিলটি গৃহীত হয়েছিল।'

কোয়েম্বাটোরে শ্রমিকরা স্টালিনিস্ট-নেতৃত্বাধীন সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (সিআইটিইউ) ডিএমকে সরকারের শ্রমিক-বিরোধী কারখানা সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করে। [Photo: CITU]

বিলটি ১২ই এপ্রিল রাজ্য বিধানসভায় উত্থাপিত হয়েছিল এবং মাত্র নয় দিন পরে ২১শে এপ্রিল পাস হয়েছিল। বিপুল জনপ্রিয় বিরোধিতার পরে, DMK-এর কিছু সহযোগীকে আইনটির নির্দিষ্ট সমালোচনা করতে বাধ্য করায়, এর বাস্তবায়ন ২৪শে এপ্রিল স্থগিত রাখা হয়।

স্টালিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) বা সিপিএম - যেটি সাম্প্রতিক নির্বাচনে ডানপন্থী, জাতিগত-জাতীয়তাবাদী ডিএমকেকে 'বাম' রাজনৈতিক আবরণ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে - একটি ব্যবসায়ী পন্থী বিলের উপর আক্রমণ করতে বাধ্য হয়েছে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ইতিমধ্যেই ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকা সমর্থন বজায় রাখার চেষ্টা করে। এটা উল্লেখ করে যে এটি 'শ্রমিকদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করার পথ প্রশস্ত করে', সিপিএম সতর্ক করেছে যে নতুন আইন কার্যকর হলে, শ্রমিকদের কোনো সীমা ছাড়াই দীর্ঘ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হবে, কোনো ওভারটাইম মজুরী এবং কোনো বিরতি ছাড়াই। তাদের সমালোচনা যাই হোক না কেন, স্টালিনবাদীরা শ্রমিক বিরোধী আইন নিয়ে ডিএমকে-এর নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়নি।

রাজ্য বিধানসভা বিলটি পাস করার পরপরই, রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী থাঙ্গাম থেন্নারাসু দাবি করেছেন যে আরও বেশি সংখ্যক বিশ্ব বিনিয়োগকারীরা তামিলনাড়ুতে বিনিয়োগ করতে আসছে এবং তারা 'শ্রমের নমনীয়তা' চায়। এর দ্বারা তিনি ফক্সকন এবং রেনল্ট-নিসানের মতো আন্তঃমহাদেশীয় সংস্থাগুলি সহ বৈশ্বিক পুঁজির দ্বারা শ্রমিক শ্রেণীর অবাধ শোষণকে বোঝায়। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী গণেশন শ্রমিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য প্রতারণামূলক ভাষা ব্যবহার করেছেন, বলেছেন যে আইনটি 'কেবল (তাদের) সম্মতিতেই' প্রয়োগ করা হবে।

কেন ডিএমকে সরকার শেষ পর্যন্ত কারখানা সংশোধনী আইন ২০২৩, প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিল এর পিছনে দুটি প্রধান কারণ ছিল।

প্রথমত, এটি রাজ্য জুড়ে ৪০,০০০ টিরও বেশি কারখানায় নিযুক্ত শিল্প শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। এই চাপের মধ্যে, স্টালিনবাদী দলগুলির সাথে যুক্ত ইউনিয়নগুলি এবং ডিএমকে-নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল জোটের (এসপিএ) অন্যান্য সহযোগীরা রাজ্যব্যাপী বিক্ষোভ ডাকতে এবং ১২ই মে একটি রাজ্যব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। প্রতিবাদ কর্মসূচিটি ছিল ক্রমবর্ধমান শ্রমিক বিরোধিতাকে সীমাবদ্ধ করার জন্য- রাজ্য সরকারের শ্রমিক শ্রেণী-বিরোধী আইনকে পরাস্ত করার জন্য শ্রমিকদের সংগঠিত করা এবং বিক্ষোভকে উগ্র ডানপন্থী, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর পাল্টা আক্রমণের সূচনা ক্ষেত্রতে পরিণত করা ও সরকার এবং শাসক শ্রেণীর ব্যয় কঠোরতা, বেসরকারীকরণ এবং চুক্তি ভিত্তিক কাজের নৈমিত্তিককরণে বাঁধা দেবার জন্য নয়। বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন শহরে বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। যখনই ডিএমকে বলে যে আইনটি প্রত্যাহার করা হবে, ইউনিয়নগুলি সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভ এবং প্রস্তাবিত ১২ই মে সাধারণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে।

দ্বিতীয় যেই কারণে DMK এর পথ পরিবর্তন করেছিল, এটি আতঙ্কিত হয়েছিল যে ফ্যাক্টরি আইনের জনপ্রিয় বিরোধিতা পরবর্তী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিএমকে-নেতৃত্বাধীন এসপিএ-র জন্য একটি গুরুতর নির্বাচনী পরাজয়ের কারণ হয়ে উঠবে এবং সহযোগীদের সাথে অযাচিত বিতণ্ডা সৃষ্টি করবে।

ডিএমকে নেতৃত্বাধীন এসপিএ গঠিত সিপিএম; এর ছোট স্টালিনবাদী মিত্র, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই); ও কংগ্রেস পার্টি নিয়ে, যেটি সম্প্রতিকাল পর্যন্ত ভারতীয় শাসক শ্রেণীর জাতীয় সরকারের পছন্দের দল; এছাড়া বর্ণবাদী দল-ভিসিকে; উগ্র আঞ্চলিকতাবাদী MDMK এবং আরও কয়েকটি ছোট 'দ্রাবিড়' দল।

ডিএমকে সরকারের কারখানা আইন প্রত্যাহার করা একটি কৌশল, যা শ্রমিকদের চোখে ধূলো দেবার জন্য। এটিকে উপলব্ধ প্রথম সুযোগেই পুনরুজ্জীবিত করা হবে, সম্ভবত পরবর্তী বছরের সাধারণ নির্বাচনের পরে।

তিন বছর আগে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কেন্দ্রীয় সরকারের চারটি নতুন শ্রম আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ডিএমকে প্রদর্শনমূলকভাবে 'বিরোধিতা' করেছিল। এই কঠোর আইনগুলি রাজ্য সরকারগুলিকে শিল্প খাতে দৈনিক কাজের সময় আট থেকে ১২ ঘন্টা বাড়ানোর অনুমতি দেয়। স্টালিন এবং তার ডিএমকে উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ এবং গুজরাটের বিজেপি রাজ্য সরকারগুলির নিন্দা করেছিল যখন তারা কার্যদিবস বাড়াবার বিল পেশ করে।

কিন্তু তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় ফিরে, এবং প্রতিবেশী কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, যেটি এই বছরের শুরুতে কর্মদিবস দীর্ঘায়িত করে আইন পাস করেছে, ডিএমকে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য তার চেষ্টার অংশ হিসাবে কারখানা সংশোধনী আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমানে, তামিলনাড়ু, ভারতের সপ্তম জনবহুল রাজ্য, FDI (প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ) আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে রয়েছে, মহারাষ্ট্র প্রথমে, গুজরাট, কর্ণাটক এবং দিল্লির পরে।

ডিএমকে সরকারের বিভ্রমে সমর্থন বাড়ানোর জন্য এবং সাধারণত একটি ডানপন্থী বিকল্প সরকারকে একত্রিত করার প্রচেষ্টায়-মোদী এবং তার বিজেপি’র পর অপেক্ষায় আছে, স্ট্যালিনবাদী সিপিএমের তামিলনাড়ু রাজ্য সম্পাদক, কে বালা কৃষ্ণান, সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং ফ্যাক্টরিস অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বাতিল করার জন্য ডিএমকে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

স্টালিনবাদীরা কংগ্রেস এবং ডিএমকে-র মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক বুর্জোয়া দলগুলির সাথে তাদের প্রতিক্রিয়াশীল জোট গড়ে তোলার জন্য জোরালোভাবে কাজ করছে। তারা আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের রেফারেন্স দিয়ে এই নীতিকে সমর্থন করে, যেখানে তারা হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপিকে 'পরাজিত' করার ব্যানারে প্রচার করবে। ১৬ই মে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি চেন্নাইতে ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিনের সাথে আলোচনা করেন। বৈঠকের পরে, ইয়েচুরি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিজেপিকে পরাজিত করতে এবং একটি উন্নত ভারত তৈরি করতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তিকে অবশ্যই পরাজিত করতে হবে।”

চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ অভিযানে ভারতকে একটি প্রথম সারিতে থাকা রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার সময়, মোদি সরকার নিজের ঘরে শ্রমিকদের অধিকারের উপর নৃশংস আক্রমণ শুরু করেছে। এর ২০২০ সালের শ্রম আইন 'সংস্কার' এর মাধ্যমে এটি ৪৪টি জাতীয় শ্রম আইনের মধ্যে ১৫টিকে এক কলমের খোঁচায় শেষ করে৷ বাকি ২৯টিকে মাত্র চারটি শ্রম আইনের মধ্যে মিশেয়ে দিয়েছে। এই সংশোধিত শ্রম আইনগুলি শ্রমিক শ্রেণীর উপর একটি নজিরবিহীন আক্রমণ গঠন করে, যা বিশ্বব্যাপী এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য শ্রমিক শোষণকে তীব্রতর করার দরজা খুলে দেয়। কর্মদিবসকে স্থায়ীভাবে দীর্ঘায়িত করার অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি, এবং ওভারটাইম এর মজুরী ছাড়াই, বিজেপি’র 'সংস্কার' বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে, শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার বাতিল করে এবং মহিলা কর্মীদের রাত্রে কাজ করতে বাধ্য করার জন্য নিয়োগকর্তাদের ক্ষমতা দেয়।

এই কঠোর 'শ্রম সংস্কার' প্রণীত হয়েছিল বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য যারা চীন ছাড়ছে তাদের নিজ দেশ থেকে চাপের কারণে, প্রাথমিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলি, কারণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি চীনের বিরুদ্ধে একটি বিপর্যয়মূলক যুদ্ধ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম 'সংস্কার' 'দেশের শ্রমবাজারে অনমনীয়তা দূর করার জন্য একটি পরীক্ষা শুরু করার ইঙ্গিত দেয় এবং নিয়োগ ও যখন খুশি বরখাস্ত করার মত কঠোর নিয়মের, কারণ বৈশ্বিক কোম্পানিগুলি তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিকে চীন থেকে দূরে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে এবং সেখানে থাকা কারখানার উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে।”

মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং সমস্ত রাজ্য সরকার সহ সামগ্রিকভাবে ভারতীয় অভিজাতরা, দলমত নির্বিশেষে, ভারতীয় শ্রমিকদের বৈশ্বিক পুঁজির জন্য সস্তা শ্রমের বিশাল ভান্ডারে পরিণত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ৷

শ্রমিক শ্রেণীর অতীতে অর্জন করা বিষয়গুলি, যার মধ্যে রয়েছে আট ঘন্টা কাজের দিন এবং চাকরির সুরক্ষা, সেইসাথে গণতান্ত্রিক অধিকার এর প্রতিরক্ষাকে শুধুমাত্র একটি আন্তর্জাতিক সংগ্রাম হিসাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, ভারতীয় শ্রমিকদের ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং সারা বিশ্বে থাকা তাদের শ্রেণী ভাই বোনেদের সাথে সংহতি ও যৌথ পদক্ষেপে সংগঠিত করতে হবে তাঁদের অভিন্ন শত্রু, মুনাফাচালিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এই লড়াইকে অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং বিশ্ব সমাজতন্ত্রের লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

Loading