বাংলা

ভারতে বিরোধীদের মোদী বিরোধী নির্বাচনী জোট: শ্রমিক শ্রেণীর জন্য এক ডানপন্থী রাজনৈতিক ফাঁদ

সম্প্রতি তৈরি হওয়া বিরোধী নির্বাচনী জোট ইন্ডিয়া’র নেতারা মুম্বাইতে দুই দিনের বৈঠক করছেন, যা শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে একত্রে মিলিত হবার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে।

দুই ডজনের ও বেশী দল নিয়ে এই জোট- যেটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপির নয় বছর ধরে চলা, অতি-ডানপন্থী সরকারের থেকে একটি 'প্রগতিশীল', 'গণতান্ত্রিক' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' বিকল্প দেবার দাবি করে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: কংগ্রেস পার্টি, সম্প্রতিকাল পর্যন্ত ভারতীয় বুর্জোয়াদের পছন্দের জাতীয় সরকারের দল; তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডিএমকে, আঞ্চলিক দল যারা যথাক্রমে পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ু শাসন করছে; সমাজবাদী পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD), জাতি-ভিত্তিক আঞ্চলিক দল যারা গাঙ্গেয় সমভূমির হিন্দি-বলয় এর রাজ্যগুলির প্রতিষ্ঠানিক রাজনীতির প্রধান খেলোয়াড়; এবং আম আদমি (সাধারণ মানুষ) পার্টি, একটি কথিত দুর্নীতিবিরোধী দল যা পাঞ্জাব এবং জাতীয় রাজধানীর অঞ্চল, দিল্লিতে সরকার পরিচালনা করছে।

এই সমস্ত দলগুলি, কংগ্রেস পার্টি থেকে শুরু করে, সবাই সমর্থন করে এবং সরকারে থাকাকালীন ভারতীয় বুর্জোয়াদের বিনিয়োগ পন্থী নির্মম-নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারীকরণ, অনিশ্চিত চুক্তি ভিত্তিক-শ্রমিক কর্মসংস্থানের প্রচার এবং বড় ব্যবসায়ী এবং ধনীদের জন্য ব্যাপক কর কমানোর নির্মম বিনিয়োগকারী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। তারা সকলেই ভারতের দ্রুত সামরিক বাহিনীর বৃদ্ধি এবং 'ইন্দো-মার্কিন গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ' কে সমর্থন করে, যার মাধ্যমে নয়াদিল্লি চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সামরিক-কৌশলগত আক্রমণে আরও সম্পূর্ণরূপে একত্রিত হয়েছে।

বিরোধীদের শুক্রবারের বৈঠকটি বিজেপি-বিরোধী জোটের তৃতীয় কনক্লেভ। 17-18 জুলাই বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়টিতে, 26টি দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়া ব্যানারে যৌথভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সম্মত হয়েছে। [Photo: Tamil Nadu Chief Minister Stalin]


এগুলোর কোনোটিই স্টালিনবাদী সংসদীয় দলগুলোকে—ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিএম, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশন-কে সামান্যতম থামায় নি। তারা বিরোধী জোটের সবচেয়ে উত্সাহী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে এবং এর লক্ষ্যকে পূর্ণ সমর্থন করে: ভারতীয় বুর্জোয়াদের একটি বিকল্প, ডানপন্থী সরকার এর -প্রতীক্ষায়।

বিরোধী জোটের প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র, যেটি নিজেকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা INDIA বলে অভিহিত করেছে, ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এর মধ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন এবং তাঁর জনতা দল (ইউনাইটেড)। ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ এবং আবার ২০১৭ থেকে গত বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত, কুমার এবং তার জনতা দল (ইউনাইটেড) বা তার পূর্বসূরি, সমতা পার্টি, প্রথমে অটল বিহারী বাজপেয়ীর অধীনে এবং তারপরে মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট এবং এর সরকারগুলির অংশ ছিল। ইতিমধ্যে বিহারে, বিজেপি বারবার জেডি (ইউ) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারগুলিতে জুনিয়র অংশীদার হিসাবে কাজ করেছে।

নীতীশ কুমারই ২৩ শে জুন পাটনায় অনুষ্ঠিত সদ্য তৈরী হওয়া জোটের প্রথম বৈঠকটি আহ্বান করেছিলেন এবং সভাপতিত্ব করেছিলেন এবং এতে ১৬টি বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে কুমার বারবার বাজপেয়ীর প্রশংসা করেছেন, যিনি বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মোদির মতো তিনিও হিন্দু আধিপত্যবাদী আরএসএসের আজীবন সদস্য। এর মধ্যে গত মাসে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে দিল্লিতে তাঁর স্মৃতিসৌধে বাজপেয়ীর প্রতি প্রকাশ্যে শ্রদ্ধা জানানো অন্তর্ভুক্ত। এটি করার মাধ্যমে, কুমার ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে জেডি (ইউ) অন্যান্য বিকল্পগুলি ধরে রাখবে যদি এটিকে প্রাধান্য না দেওয়া হয় এটি বিশ্বাস করে যে ইন্ডিয়া জোটে তার প্রাপ্য বাকী আছে।

মুম্বাইতে সভাগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে দ্বারা আয়োজিত হচ্ছে, যিনি শিবসেনার দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে একটির প্রধান, ফ্যাসিবাদী দল যা তার পিতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, কুখ্যাত মারাঠা উগ্রবাদী এবং সাম্প্রদায়িক বাল ঠাকরে। যদিও নীতীশ কুমার সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী বলে অযৌক্তিকভাবে দাবী করেন, শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) হিন্দুত্বর চ্যাম্পিয়ন, ক্ষতিকর হিন্দু আধিপত্যবাদী আদর্শ যা বিজেপি এবং মোদি মেনে চলে।

এই সপ্তাহের বৈঠকে, ইন্ডিয়া জোটের নেতারা বলেছেন যে তারা একটি 'সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি' নিয়ে আসবেন যার দ্বারা বোঝা যাবে যে তারা যে মূল নীতিগুলি অনুসরণ করবে সেটির রূপরেখা দেবে যদি তারা নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি এবং তার এনডিএকে মুক্ত করতে সফল হয় ২০২৪ সালের বসন্তে।

এখনও অবধি, তারা কেবলমাত্র অস্পষ্ট এবং সবচেয়ে অনুমানযোগ্য শব্দে কথা বলেছে যে সামাজিক সংকট ভারতকে ধ্বংস করছে, ব্যাপক বেকারত্ব, দেশব্যাপী দারিদ্র্য এবং সরকারী-বড় ব্যবসায়িক দুর্নীতির সম্পর্ককে নিন্দা করছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী, যেমন ডিএমকে, স্টালিনবাদীদের সমর্থনে, ইন্ডিয়াকে চাপ দিচ্ছে সংরক্ষণের সম্প্রসারণ করার জন্য- দলিত এবং অন্যান্য ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীর জন্য ইতিবাচক অ্যাকশন-টাইপ কোটা- বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির জন্য। যখন 'সামাজিক ন্যায়বিচার' এর পক্ষে একটি আঘাত এবং বিজেপির হিন্দু সাম্প্রদায়িক আবেদনের প্রতিকূল হিসাবে বিবেচিত, সংরক্ষন ব্যবস্থার আরও সম্প্রসারণের আহ্বানগুলি গভীর প্রতিক্রিয়াশীল। সেগুলি শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত করতে এবং পুঁজিবাদের দ্বারা সৃষ্ট দুর্দশার আরও 'ন্যায্য' বণ্টনের জন্য একটি ভ্রাতৃঘাতী সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে।

বিরোধী দলগুলো যে কোনো সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচী প্রস্তাব করে থাকে তাতে বিদেশী নীতি সম্পর্কে খুব কমই থাকবে তা জানা কথাই। তবে এটি লক্ষ করা উচিত যে চীনের সাথে তিন বছর ধরে সীমান্তে অচল অবস্থার জন্য আক্রমণাত্মক অবস্থান না নেওয়ার কারণে কংগ্রেস পার্টি বারবার বিজেপি সরকারকে প্রথম থেকেই আক্রমণ করেছে। আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সমস্ত চীনা পণ্যকে 'জাতীয় বয়কট' করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবারের বিরোধী সম্মেলনটি আসন ভাগাভাগির অত্যন্ত বিতর্কিত প্রশ্নটিও তুলে ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এটি একজন আহ্বায়কের নাম ঠিক করতে পারে, যদিও মিডিয়া রিপোর্ট করছে যে কিছু দল এর বিরোধিতা করছে কারণ এর সম্ভাব্য প্রভাব ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী নির্বাচনের উপর পরতে পারে।

অসন্মানিত দলগুলোর এক প্রতিক্রিয়াশীল জোট

ইন্ডিয়া জোট একটি রাজনৈতিক প্রতারণা। এটি মূলত অসন্মানিত পুঁজিবাদী দলগুলির একটি প্রতিক্রিয়াশীল জোট, যাদেরকে বুর্জোয়াদের কাছে বিজেপির চেয়ে কম দেখা যায় না, যেগুলি দুর্নীতি, বর্ণবাদ, আঞ্চলিক-উগ্রপন্থার রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িক হওয়া সত্ত্বেও, তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার ভান করে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৮ই জুলাই বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত তাদের দ্বিতীয় বৈঠকে, উপস্থিত ২৬টি দল একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তবনা গ্রহণ করে যা 'সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে তৈরি করা ঘৃণা ও হিংসতার' নিন্দা করে এবং দলিত, আদিবাসী (উপজাতি) এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নাম উল্লেখ করে। ভারতের মুসলিমদের কোনো উল্লেখ এতে বাদ দেওয়া হয়েছে, যারা বিজেপি এবং তার হিন্দু ডানপন্থী মিত্রদের দ্বারা অপমান ও ভয় দেখানোর নিরলস প্রচারণার বিষয়।

ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, যেখানে কংগ্রেস পার্টি বিজেপিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে চলা রাজ্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি সম্প্রতি বজরং সেনা নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে তাদের মধ্যে গ্রহণ করেছে। কংগ্রেসই শিবসেনাকে (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) একটি 'প্রগতিশীল' মিত্র এবং ভারতের মূল্যবান দল হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এমণটা চলতেই থাকে।

বিরোধী জোটের জন্ম নিয়েছে নিচুতলা থেকে সামাজিক বিরোধিতার একজোটবদ্ধ ঝড়ের ভয়ে। প্রায়ই বেসরকারীকরণ, চুক্তি শ্রম, মজুরি না দেওয়া এবং চাকরি ছাঁটাই এর বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে শ্রমিকদের মধ্যে বিস্ফোরক দীর্ঘায়িত সংগ্রাম শুরু হয়েছে।

বিজেপি যখন ভারতের 'বিশ্বকে- হারিয়ে' বৃদ্ধির ঢোল বাজায়, বাস্তবতা হল ভারত ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য দ্বারা আচ্ছন্ন, যেখানে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ভারতীয় ৭০ শতাংশ দরিদ্র জনসংখ্যার চারগুণেরও বেশী সম্পদের মালিক৷

কোভিড-১৯ মহামারী এবং এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন-ন্যাটো কর্তৃক প্ররোচিত যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত অর্থনৈতিক ধাক্কা ক্ষুধা ও অপুষ্টিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সেন্টার ফর মনিটরিং দ্য ইন্ডিয়ান ইকোনমি অনুসারে, জনসংখ্যার ৭.৯ শতাংশ বেকার। এটি এমন একটি দেশে যেখানে বেকারদের জন্য কোনও রাষ্ট্রীয় আয় সহায়তা নেই।

সাম্প্রদায়িকতার নিরলস প্রচারের মাধ্যমে, বিজেপি আর্থ-সামাজিক উদ্বেগ এবং হতাশাকে বিপথে চালনা করতে চায় পুঁজিবাদী শোষণ এবং শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত করার যেকোনো চ্যালেঞ্জকে রুখতে।

তারা যখন হিন্দু অধিকারের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং তার সাথে মিলিত হয়, বিরোধী দলগুলি ভয়ে থাকা শাসক শ্রেণীর এক অংশের হয়ে কথা বলে যে বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদ ও অনাচার বিপজ্জনকভাবে সামরিক, আদালত এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে অসন্মানিত ও অস্থিতিশীল করে তুলছে, যেগুলির উপর শাসক শ্রেণী তার নিয়ম প্রয়োগ করার জন্য নির্ভর করে।

সংসদীয় রীতিনীতি এবং ভারতের ফেডারেল সংবিধানের উপর রুক্ষতা চালানো সহ নিজের হাতে ক্ষমতা একচেটিয়া করার জন্য বিজেপির এই অগ্রসরতার ভয়ে বিরোধী জোটও কম্পমান। মোদি এবং তার প্রধান অনুচর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদাহরণ অনুসরণ করে, বিজেপি তার বুর্জোয়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আধা-বিশ্বাসঘাতক হিসাবে বিবেচনা করে, বারবার অভিযোগ করে যে তারা ভারতের নাম খারাপ করার জন্য বিদেশী শক্তির সাথে ষড়যন্ত্র করছে বা মুসলিম 'তুষ্টিকরণ' এর অনুশীলন করছে।

যদিও পূর্ববর্তী ভারত সরকারগুলি রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য দুর্নীতির অভিযোগ এবং ফৌজদারি তদন্ত পরিচালনা করেছে, মোদি সরকার এটিকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। মার্চ মাসে, রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস পার্টির ডি ফ্যাক্টো নেতা এবং ভারতের বহু পুরানো পার্টিকে নিয়ন্ত্রণকারী নেহেরু-গান্ধী পরিবারের সদস্য, তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং মিথ্যা অভিযোগে তাঁর সংসদের আসনটি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের আদালতে। গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট গান্ধীর দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়ে তাকে সংসদে ফিরে আসার অনুমতি দেয়, তার আপিলের ফলাফল অপেক্ষায় আছে।

স্টালিনবাদীরা—ভারতের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একটি অত্যন্ত মূল্যবান দল

স্টালিনবাদীদের এবং তাদের বামফ্রন্টের নির্বাচনী সমর্থন গত দেড় দশকে বৃহৎ ব্যবসায়িক কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করায় এবং যে রাজ্যগুলিতে তারা ক্ষমতায় সেখানে বিনিয়োগকারী-সমর্থক নীতি আরোপ করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকার ফলে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আজ স্টালিনবাদীরা ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে একটিতে সরকার পরিচালনা করছে, কেরালায়, এবং তাদের মধ্যে সংসদে ৫৪৩-সদস্যের নিম্নকক্ষ লোকসভায় CPM এবং CPI-এর মাত্র পাঁচজন সাংসদ রয়েছে।

যাইহোক, স্টালিনবাদীরা ভারতের নির্বাচনী জোটকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং বিশেষ করে কংগ্রেস পার্টি- যেটি গত ৭৫ বছরের সিংহভাগ সময় ভারতের জাতীয় সরকারকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে- বুর্জোয়া-বিজেপি-বিরোধী জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হিসেবে।

স্ট্যালিনবাদীরা বিরোধী জোটকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় 'প্রগতিশীল' তাকমা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাদের ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের মাধ্যমে তারা শ্রমিক শ্রেণীর মূল অংশের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে- যে প্রভাব তারা শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করতে এবং কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের পিছনে শ্রমিক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে সরিয়ে দিতে ব্যবহার করবে।

গত মাসে কলকাতায় একটি সমাবেশে - রাজনৈতিকভাবে সিপিএম নিয়ন্ত্রিত-অ্যালাইড সেন্টার অফ ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়নের (সিআইটিইউ) নেতৃত্বে এবং যেখানে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বড় ব্যবসায়িক দলগুলির সাথে থাকা সংশ্লিষ্ট অসংখ্য ইউনিয়ন এবং ইউনিয়ন ফেডারেশন অংশগ্রহণ করেছিল - ইউনিয়নগুলি ঘোষণা করেছিল যে তাদের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটকে বিজেপি সরকার এর জায়গায় প্রতিস্থাপন করা। এটি 'মোদী হাঠাও , দেশ বাঁচাও' স্লোগানে আবদ্ধ ছিল।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে, স্তালিনবাদীরা 'ফ্যাসিবাদী বিজেপির' বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে কেন্দ্রে এবং রাজ্যগুলিতে একের পর এক ডানপন্থী সরকারকে সমর্থন করেছে। শ্রমিক শ্রেণীকে রাজনৈতিকভাবে দমন করা এবং পুঁজিবাদী সংকটে তাঁদের নিজস্ব সমাজতান্ত্রিক সমাধানকে অগ্রসর হতে বাধা দেওয়ায়, হিন্দু ডানপন্থী হুমকি কেবল বেড়েছে।

আজ, সারা বিশ্বের মতো ভারতীয় পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে, দৃশ্যত তাদের পায়ে পচন ধরেছে, স্টালিনবাদীরা শ্রমিক শ্রেণীকে ভারতীয় রাষ্ট্র এবং কংগ্রেস এবং অন্যান্য ডানপন্থী জাতি-গোষ্ঠীর ও উগ্র জাত-পাতের দলগুলির সাথে শৃঙ্খলিত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করছে।

শ্রমিক এবং সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার যুবকদের অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিরোধী গতিপথ তৈরি করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াকে পরাজিত করার সংগ্রাম অবশ্যই শ্রেণী সংগ্রামের ভিত্তিতে হতে হবে। এটিকে অবশ্যই অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত করতে হবে সামাজিক সাম্যের জন্য এবং সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারতীয় বুর্জোয়াদের লুন্ঠঙ্কারী জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।

এর জন্য প্রয়োজন শ্রমিকশ্রেণীর তার বহুবিধ সংগ্রামকে একত্রিত করা এবং একটি স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা, ভারতীয় পুঁজিবাদ এবং এর সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে গ্রামীণ জনগণকে এর পিছনে জড়ো করা একটি শ্রমিক ও কৃষককের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে যা দক্ষিণ এশিয়া এবং পৃথিবী জুড়ে সমাজতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

Loading