বাংলা

ওয়াশিংটনের নির্দেশে, ভারতের সামরিক বাহিনী কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করবে তা নিয়ে বিবেচনা করছে

ভারতের সামরিক বাহিনী বিবেচনা করছে—জরুরি হিসাবে এবং সর্বোচ্চ স্তরে—তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কীভাবে সহায়তা দিতে পারে এবং দেবে।

সামরিক বাহিনী যে 'বিকল্পগুলি' চিহ্নিত করেছে তা শীঘ্রই ভারতের অতি-ডানপন্থী, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে রাখা হবে এবং কোনো সন্দেহ নেই, যে তা পরবর্তীতে হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনকে জানানো হবে।

গত মাসের শুরুর দিকের একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতের তিনটি সশস্ত্র পরিষেবা-সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী কীভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে তার চলমান পরীক্ষার বিষয়ে ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের নির্দেশে ছিল, মার্কিন কর্মকর্তাদের দ্বারা একাধিক ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করার পর।

গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন G20 সম্মেলনের জন্য ভারত সফর শুরু করার সাথে সাথে, ব্লুমবার্গ এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া 'ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তাদের' উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে দুটি 'বিকল্প' চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এখন দরকার এটির বিস্তারিত অধ্যয়ন।

'একটি বিকল্প যা ভারতীয় সামরিক বাহিনী অধ্যয়ন করবে,' ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, 'মিত্র যুদ্ধজাহাজ এবং বিমানগুলির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি চীন প্রতিরোধকারী সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য, জ্বালানী এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য একটি লজিস্টিক হাব হিসাবে কাজ করা।'

ভারত ইতিমধ্যেই মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাথে যৌথ পদক্ষেপকে সক্ষম এবং সহজতর করার জন্য একটি 'মূল' চুক্তিতে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি লজিস্টিক-এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (LEMOA) যার অধীনে মার্কিন যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ পুনরায় সরবরাহ ও মেরামতের জন্য ভারতীয় বন্দর এবং ঘাঁটিগুলির নিয়মিত ব্যবহার করতে পারে। যাইহোক, ভারত মার্কিন চুক্তির মিত্র না হওয়ায় এটি যুদ্ধকালীন সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য নয়। এটিও উল্লেখ করা উচিত যে মোদি এবং বাইডেন গত জুনে ওয়াশিংটনে তাদের শীর্ষ সম্মেলনে যে অনেক চুক্তির ঘোষণা করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল মার্কিন নৌবাহিনী এবং তিনটি ভারতীয় শিপইয়ার্ডের মধ্যে যা মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে মধ্য সমুদ্রযাত্রার পরিষেবা এবং মেরামতের জন্য।

ভারত-চীন সীমান্তে লাদাখে প্যাংগং সো হ্রদ অঞ্চলের তীরে ট্যাঙ্ক। বুধবার, ১০ই ফেব্রুয়ারী, ২০২১ তারিখে [AP Photo/India Army via AP]


দ্বিতীয় 'বিকল্প' আরও বেশি উত্তেজক এবং স্পষ্ট করে দেয়-পাছে কোনো সন্দেহ না থাকে-যে একটি মার্কিন-চীন যুদ্ধ, তার প্রাথমিক ট্রিগার যাই হোক না কেন, দ্রুত বিশ্বব্যাপী দাবানলে পরিণত হবে।

ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, 'একটি 'আরও চরম দৃশ্যকল্প', 'চীনের জন্য যুদ্ধের একটি নতুন কার্যক্ষেত্র উন্মুক্ত করে, তাদের উত্তর সীমান্তে ভারতের সরাসরি জড়িত হওয়ার সম্ভাবনার মূল্যায়ন করবে।'

বেজিং নিঃসন্দেহে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের হুমকির বিষয়ে সচেতন ছিল। এটি এখন প্রকাশ্যে ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় বিবেচনাধীন হিসাবে আলোচনা করা হচ্ছে যা নতুন, এবং ইউক্রেনের মতো তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনের সাথে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার মার্কিন পরিকল্পনা কতটা অগ্রসর সেই ব্যাপারে রেখাপাত করে।

ব্লুমবার্গের মতে, 'ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব' তার গবেষণা শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারত-কে প্রায়শই মার্কিন যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীরা চীনের 'নরম স্থান ' হিসাবে বর্ণনা করেছে - চীনের সাথে একটি দীর্ঘস্থায়ী সীমান্ত বিরোধ রয়েছে, যা ২০২০ সাল থেকে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে ওয়াশিংটনের নিজেকে বিভ্রান্তিকরভাবে জড়িয়ে নেওয়ার স্বার্থ রয়েছে।

গত তিন বছর ধরে, ভারত এবং চীন উভয়ই তাদের অনির্ধারিত হিমালয় সীমান্তে হাজার হাজার সৈন্য, ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধবিমানকে 'আগের দিকে মোতায়েন' করেছে, যখন দুর্গ, বিমান ঘাঁটি, পরিবহন সংযোগ এবং অন্যান্য যুদ্ধ-সম্পর্কিত পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ছোটো প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছে।

2020 সাল পর্যন্ত, ওয়াশিংটন ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধে নিরপেক্ষতার একটি দাবিদার অবস্থান ছিল। তারপর থেকে, এবং ট্রাম্পের অধীনে শুরু হওয়া চীনের বিরুদ্ধে সর্ব-তরফা কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক-কৌশলগত আক্রমণের অংশ হিসাবে এবং পরে বাইডেন দ্বারা উত্থাপিত, এটি নিজেকে আরও সরাসরি সংঘাতে ঢুকিয়েছে। মার্কিন সরকার এবং কংগ্রেস এখন নিয়মিতভাবে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধকে দক্ষিণ চীন সাগরে চীন এবং তার প্রতিবেশীদের মধ্যে মার্কিন-উদ্দীপিত আঞ্চলিক বিরোধের সাথে বেঁধে দেয়, এবং বলে যে এটাই বেজিংয়ের 'আগ্রাসন' এর প্রমাণ। ডিসেম্বরে, চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও কম দূরে ' উচ্চতর স্থানে যুদ্ধে' যৌথ ভারত-মার্কিন সামরিক মহড়ার সমাপ্তির পরপরই, ভারতীয় কর্মকর্তারা গর্ব করেছিলেন যে তারা পিপলস লিবারেশন আর্মিকে 'সীমান্ত অনুপ্রবেশ' করতে অবরুদ্ধ করেছে, ধন্যবাদ জানিয়েছে 'সঠিক -সময়' ওয়াশিংটন দ্বারা প্রদত্ত তথ্য দেবার জন্য।

'ফাঁস' হয়ে যাওয়া তথ্যের মাধ্যমে স্বীকার করা যে ভারতের সামরিক বাহিনী মার্কিন-চীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করছে তা কেবল বেজিংয়ের সাথে সম্পর্ককে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

ভারত-প্যাসিফিক নিরাপত্তা আলোচনা তাইওয়ান সরকার সমর্থিত কেতাগালান ফোরামে অংশ নিতে এবং তাইওয়ানের মূল প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত তিনজন ভারতীয় বাহিনীর প্রধান - সেনাপ্রধান মনোজ নারাভানে, নৌবাহিনী প্রধান করমবীর সিং এবং বিমান বাহিনীর প্রধান আরকেএস ভাদরিয়ার – তাইপেই সফরে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে মিলিত হবার পরই এটি আসে। তিনজনের অবসরপ্রাপ্ত পদমর্যাদা নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভান বজায় রাখতে সক্ষম করেছে যে তারা তাইওয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক চাইছে না বা এক-চীন নীতিতে তার আনুগত্য লঙ্ঘন করছে না। যাইহোক, মোদি সরকারের নির্দেশেই যে এই সফর করা হয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

ব্লুমবার্গ বা টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি যে, চীন ও ভারত উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর এবং নয়াদিল্লি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত পারমাণবিক ত্রয়ী তৈরির ন্যায্যতা প্রমাণ করেছে এবং দাবি করেছে যে চীন তার প্রধান কৌশলগত হুমকি।

একইভাবে, এই প্রতিবেদনগুলি চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধে প্রথম সারির রাষ্ট্র হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যে ভারতের ভূমিকার প্রভাবকে উপেক্ষা করেছে। পাকিস্তান, ভারতের ঐতিহাসিক কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী, গত দেড় দশকে চীনের সাথে আরও গভীর সামরিক-নিরাপত্তা সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ওয়াশিংটনের নয়াদিল্লিকে কৌশলগত সুবিধা দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। চীনকে কৌশলগতভাবে বিচ্ছিন্ন, ঘেরাও এবং পরাধীন করার অভিযানে ভারতকে আরও শক্তভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়া দিল্লিকে উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র এবং বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি পাবার সুবিধা দিয়েছে এবং পাকিস্তানের ভিতরে অবৈধ এবং উস্কানিমূলক 'সার্জিক্যাল' সামরিক হামলাকে সমর্থন করেছে।

চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের ঘটনা ঘটলে, এবং আরও বেশি করে ভারত যদি সরাসরি চীনকে আক্রমণ করে, পাকিস্তানের শাসক শ্রেণী তার সামরিক বাহিনীকে, যা পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত, তাকে এই ভারসাম্যের মধ্যে নিক্ষেপ করতে ব্যাপক ভূ-কৌশলগত বাধ্যবাধকতার সম্মুখীন হবে।

ভারতীয় সামরিক মতবাদ এটিকে চীন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি-ফ্রন্টেই যুদ্ধে সক্ষম হওয়ার দাবী জানায় এবং এর জেনারেলরা প্রায়শই গর্ব করে যে তাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র এবং তা করার মত ক্ষমতা রয়েছে।

তটস্থ ভাবে থাকা 'বিকল্পগুলি' যা নিয়ে ভারত চিন্তা করছে বলে মনে করা হয় সেগুলি নিয়ে তারা খুব কমই ক্লান্ত যার দ্বারা নয়াদিল্লি চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে এবং প্ররোচনা করতে পারে। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় বিমান ঘাঁটির সম্প্রসারিত নেটওয়ার্ক থেকে মার্কিন যুদ্ধবিমান চীনের গভীরে পৌঁছাতে পারে। ভারতের একটি বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান 'নীল জলের' নৌবাহিনী রয়েছে এবং ভারত মহাসাগরে 'নিরাপত্তা প্রদানে' একটি বড় ভূমিকা গ্রহণ করতে আগ্রহী, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথগুলি যায়, যেগুলি চীনের রপ্তানি বাণিজ্যের বেশিরভাগই বহন করে, জ্বালানী এবং অন্যান্য সম্পদ যা এর অর্থনীতিকে শক্তি দেয়। যদিও ভারত এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ নৌ টহল চালানো থেকে বিরত রয়েছে, তার জাহাজগুলি এখন সেখানে নিয়মিত 'টহল দিতে দেখা' যায়। এটি নিয়মিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর প্রধান এশিয়া-প্যাসিফিক মিত্র জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে অন্যত্র চতুর্ভুজ যৌথ নৌ মহড়া করে এবং সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইন উভয়ের সাথে তার সামরিক-নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করেছে।

মোদি সরকার COVID-19 মহামারী দ্বারা সৃষ্ট বৈশ্বিক পুঁজিবাদী সঙ্কটের তীব্রতায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গত তিন দশক ধরে ভারতীয় বুর্জোয়ারা যে শ্রেণী কৌশল অনুসরণ করেছে তার জোড়া স্তম্ভকে দ্বিগুণ করে। এগুলি হল শ্রমিক শ্রেণীর শোষণকে তীব্র করার লক্ষ্যে বিনিয়োগকারী-পন্থী সংস্কার যাতে বৈশ্বিক পুঁজিকে আকর্ষণ করা যায় এবং ভারত-মার্কিন 'বৈশ্বিক কৌশলগত' অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা যায়।

বিগত সাড়ে তিন বছরে, নয়াদিল্লি চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের অভিযানে নাটকীয়ভাবে তার একীকরণ বাড়িয়েছে, দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপক্ষীয় এবং চতুর্পাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করেছে— উধাহরণ হিসাবে যেমনটি কোয়াড নামে পরিচিত আধা সামরিক-নিরাপত্তা জোট-, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া রয়েছে।

তা সত্ত্বেও, নয়াদিল্লি ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার সাথে তার কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ সামরিক-কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্রদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সস্তা রাশিয়ান তেল ভারতীয় অর্থনীতির উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে সাহায্য করেছে, এবং নয়াদিল্লি তার সামরিক বাহিনীকে সজ্জিত করতে, তার বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা করতে এবং পশ্চিমা শক্তির কাছ থেকে কিছু 'কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন' রাখতে মস্কোর সাথে তার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে চলেছে।

বিভিন্ন পেটি বুর্জোয়া ছদ্ম-বাম শক্তি বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচির ভিত্তিতে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক শ্রমিক শ্রেণীকে একত্রিত করার সংগ্রামের বিরোধিতা করে - যেমন ভারতীয় স্টালিনবাদী মার্কিন-ভিত্তিক শিক্ষাবিদ বিজয় প্রসাদ – যিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন-ন্যাটো যুদ্ধের পিছনে মোদি সরকারের যোগদান না করার ব্যর্থতাকে উদযাপন করেছে। তারা দাবি করে যে এটি 'একটি নতুন জোটনিরপেক্ষতার উত্থান' এবং একটি 'বহু-মেরু বিশ্বের' অংশ যা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং 'গ্লোবাল সাউথ' এর পুঁজিবাদী শাসনের পারস্পরিক স্বার্থকে মিটমাট করার ভিত্তি প্রদান করতে পারে।

এরা সবাই ইচ্ছাকৃত অন্ধ। নিষ্ঠুর হিন্দু আধিপত্যবাদী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক নেতৃত্বে এবং এমন পরিস্থিতিতে যেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো যুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিগুলি তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের তাগিদে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নেওয়ার প্রস্তুতির প্রমাণ দিয়েছে, ভারতীয় বুর্জোয়ারা নিজেকে আরও সম্পূর্ণরূপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একীভূত করছে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভিযানে।

এটি তার নিজস্ব প্রতিক্রিয়াশীল উদ্দেশ্য সাধনে তা করছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতকে বৈশ্বিক পুঁজির প্রধান বিকল্প সস্তা-শ্রম উৎপাদন চেইন হাব চীন থেকে স্থানান্তরিত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সেইসাথে রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে ওয়াশিংটনের চাপ কমানোর জন্যও।

ভারতের “কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন”-এর বহুমুখী নীতির জন্য, এটি সম্পর্কে “প্রগতিশীল”, “সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী” বলে কিছু নেই। এর উদ্দেশ্য হল ভারতীয় শাসক শ্রেণীকে তাদের নিজেদের হিংস্র স্বার্থগুলি আরও ভালভাবে অনুসরণ করতে সক্ষম করা। তাদের মধ্যে প্রধান হল চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন ষড়যন্ত্রে তার ভূমিকার কারণে উচ্চ মূল্যের জন্য দরাদরি, এবং চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধাভিযানে এটি কতটা সহযোগী এবং জড়িত সেই ব্যাপারে ভারতের শ্রমিক ও নিপীড়িত মানুষদের চোখে ধূলো দেওয়া।

গত শতাব্দীতে দুইবার, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী ভাঙ্গন বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বকে বিভক্ত করার সাম্রাজ্যবাদী চালনার দিকে নিয়ে গেছে। কিন্তু একই সংকট বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর গণ-অভ্যুত্থানে ইন্ধন জোগাচ্ছে এবং এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ভিত্তিক পুঁজিবাদী চক্র এবং তাদের সরকারের সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে একটি গণ-যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যমূলক ভিত্তি তৈরি করছে, এবং মুনাফা ব্যবস্থা উৎখাত করার, যা সমস্ত যুদ্ধের উৎস, সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়ন এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণ।

Loading