বাংলা

গাজায় যুদ্ধের বিষয়ে, ভারতীয় স্তালিনবাদীরা মিথ্যা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্যের সাথে একত্রে মোদী এবং "চোরেদের রান্নাঘর" যা জাতিসংঘ তার কাছে আবেদন করেছে

গাজায় প্যালেস্তীনিদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি শাসকদের গণহত্যায় ২০,০০০ জনেরও বেশি মানুষের জীবন নিয়েছে এবং জনসংখ্যার অন্তত ৮৫ শতাংশকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আক্রমণে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্যালেস্তীনি পুরুষ, নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করার জন্য ইজরাইলকে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।

ইহুদিবাদী রাষ্ট্র কর্তৃক তার সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকদের পূর্ণ সমর্থনে প্রতিদিনের এই ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধের পরওয়ানা সারা বিশ্বে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি মহাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ গাজায় গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। এই প্রতিবাদগুলি ভারতেও হয়েছে, যেখানকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার হিন্দু- আধিপত্যবাদী বিজেপি সরকার ইজরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।

ভারতের প্রধান স্তালিনবাদী সংসদীয় দল, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিএম এবং এর বামফ্রন্ট, গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ডাকতে বাধ্য হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে, স্তালিনবাদী নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট দক্ষিণে কেরালার কোঝিকোড় এবং পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সহ বেশ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে।

স্তালিনবাদীরা, কয়েক দশক ধরে তাঁদের “বাম” ভূমিকা ধরে রেখেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠার পার্শ্বচর হিসাবে, পুঁজিবাদী রাজনীতির প্রতিক্রিয়াশীল কাঠামোর মধ্যে এবং বড়-ক্ষমতার কূটনীতির মধ্যে গাজার দরিদ্র ও বেদখল প্যালেস্তীনিদের হত্যার ব্যাপারে শ্রমিক ও যুবকদের বিরোধিতাকে আবদ্ধ করতে চাইছে। যখন তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, তারা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিরোধিতায় শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে গড়ে তোলার বিরোধিতা করে।

তারা ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করার জন্য ভারত সরকারকে চাপ দিতে চায়, এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় – যা একই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি দ্বারা আধিপত্যশীল একটি সংস্থা যারা গাজায় গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং যার পূর্বসূরি লিগ অফ নেশনস, লেনিন যাকে 'চোরেদের রান্নাঘর' হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, - যা মধ্যপ্রাচ্যে 'শান্তি' সুরক্ষিত করার জন্য একটি 'দুই-রাষ্ট্র সমাধান' কার্যকর করতে চাইছে।

ভারত-মার্কিন জোট এবং সিপিএম এর 'স্বাধীন বিদেশ নীতি' ও একটি 'বহুমাত্রিক-ক্ষমতা সম্পূর্ণ বিশ্বের' ডাক

৮ই নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত বামফ্রন্টের প্রতিবাদ সমাবেশে, স্তালিনবাদীরা মোদী সরকারকে 'সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী হওয়া বন্ধ করে আগের মতো একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার' আহ্বান জানায়। এটি শীতল যুদ্ধ-যুগে ভারতের 'নির্জোট' নীতির একটি উল্লেখ, যেখানে নয়াদিল্লি ইউএসএসআর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মধ্যে ভারসাম্য করেছিল। এই নীতিটি ১৯৯১ সালে ভারতীয় বুর্জোয়ারা তার ব্যর্থ রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে বাতিল করেছিল, কারণ সোভিয়েত স্টালিনবাদী আমলাতন্ত্র পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধার করছিল এবং ইউএসএসআর বিলুপ্ত করছিল।

সিপিএম এবং বামফ্রন্ট 8 নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত গাজায় ইজরায়েলি হামলার বিরোধিতা করে মিছিল করেছে [Photo: Newsclick]

গত তিন দশকে, ভারতীয় বুর্জোয়ারা ভারতকে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সামরিক-কৌশলগত ঘনিষ্ট মিত্রতে রূপান্তরিত করেছে, এবং নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে ভারতকে সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আধিপত্যকারী বিশ্ব অর্থনীতিতে একীভূত করছে এবং এর শ্রমিক, গ্রামীণ মেহনতি ও সম্পদকে বিশ্ব পুঁজির কাছে হস্তান্তর করছে।

গাজা গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে বামফ্রন্টের একটি বিবৃতি 'প্যালেস্তীনিতে মার্কিন-ইজরায়েল দ্বারা গণহত্যাকে সমর্থন করা বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য বিশ্বব্যাপী আহ্বানে যোগ দেওয়ার জন্য মোদি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।'

এই আবেদনটি এমন পরিস্থিতিতে করা হয়েছে যেখানে মোদি ছিলেন বিশ্বনেতাদের মধ্যে একজন যিনি প্যালেস্তীনিদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের যুদ্ধের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েব সাইট যেমন পূর্বে ব্যাখ্যা করেছে, ইজরায়েলের প্রতি মোদি সরকারের দৃঢ় সমর্থন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারতীয় বুর্জোয়াদের জোট থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেটি ওয়াশিংটনের সাথে নয়াদিল্লির বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বে সংযোজিত হয়েছে। এটি গঠণ হয়েছে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার এবং জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের মধ্যে যখন এটি ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালাচ্ছিল, মোদির এক দশকের ক্ষমতায় ভারত-মার্কিন জোট বারবার উন্নত এবং প্রসারিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, বেজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সর্বতরফা কৌশলগত আক্রমণ এবং চীনের সাথে যুদ্ধের পরিকল্পনায় ভারত প্রথম সারিতে থাকা একটি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে।

পূর্ব ইউরোপে রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের অগ্রসরতা ক্রমবর্ধমান তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে সেই কারণে ভারতের সাথে তার মিত্রতাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ওয়াশিংটন।

ইজরায়েলি গণহত্যার প্রতি ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর সমর্থনকে এই প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সমর্থনকে তার নিজের মহান-শক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ভারতকে চীনের বিকল্প সস্তা-শ্রম উৎপাদন চেইন হাব করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।

ভারতীয় বুর্জোয়াদের একটি 'স্বাধীন' বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করার জন্য তাদের আহ্বানকে এগিয়ে নিয়ে, স্তালিনবাদীরা একটি উদ্ভট 'বহু-মেরুর ক্ষমতার' প্রচার করে যা মার্কিন আধিপত্যকারী 'একমাত্র ক্ষমতা' ব্যবস্থার একটি প্রগতিশীল বিকল্প গঠন করবে এবং ভারতের পুঁজিবাদী সরকারকে সক্ষম করবে বিশ্বব্যাপী বৃহত্তর প্রভাব বিস্তার করতে। এই লক্ষ্যে, স্তালিনবাদীরা ভারতীয় বুর্জোয়াদের ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী, রাশিয়ার পুঁজি-পুনরুদ্ধারকারী শাসনব্যবস্থা ও চীন এবং অন্যান্য ব্রিকস রাষ্ট্রগুলির সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।

যদিও তারা মার্কসবাদী শব্দ ব্যবহার করে, সিপিএম নেতারা সামাজিক বিপ্লবের প্রতি বিদ্বেষী এবং শ্রমিক শ্রেণীকে পুঁজিবাদের মধ্যে আটকে রাখার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যেটির পক্ষে তারা দাবি করে যে 'আন্তর্জাতিক সম্পর্কের' ভারসাম্য থাকলে তারা আরও সামাজিক অগ্রগতির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ দিতে পারে।

স্তালিনবাদীদের কাছে, গাজায় ইজরায়েলের আক্রমণ এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন-ন্যাটোর প্ররোচিত যুদ্ধ দ্রুত বিকাশমান বিশ্বযুদ্ধের অংশ নয়, গত শতাব্দীর দুটি বিশ্বযুদ্ধের মতো, যা পুঁজিবাদের মৌলিক দ্বন্দ্বের মধ্যে নিহিত - একটি পদ্ধতিগত সংকট যার একমাত্র প্রগতিশীল সমাধান হল মুনাফা ব্যবস্থা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পুঁজিবাদী জাতি-রাষ্ট্রের সেকেলে ব্যবস্থা যার মধ্যে এটি ঐতিহাসিকভাবে নিহিত রয়েছে তার অবসান ঘটাতে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি ।

বরং, পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং তার পূর্বসূরি প্রকাশ কারাতের মতে, এই যুদ্ধগুলি একটি অত্যধিক উচ্ছৃঙ্খল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ফসল, যেটিকে একটি পুনর্গঠিত বিশ্ব পুঁজিবাদী আন্তঃরাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে আরও ভালভাবে সীমাবদ্ধ করা দরকার।

একটি 'স্বাধীন বিদেশ নীতি' গ্রহণ করার জন্য নয়াদিল্লিকে চাপ দেওয়ার জন্য ভারতীয় স্তালিনবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে যাতে এটি বিশ্বের বিষয়ে একটি 'প্রগতিশীল' ভূমিকা পালন করতে পারে তাদের এই প্রতারণামূলক দাবির সাথে আবদ্ধ, যে ভারতীয় রাষ্ট্র রুপায়িত হয়, এমনকি অসম্পূর্ণভাবে হলেও , ব্যাপক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম যা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দক্ষিণ এশিয়াকে আন্দোলিত করেছিল তার থেকে। বাস্তবে, 'স্বাধীন ভারত' ছিল শ্রমিক শ্রেণী ও গ্রামীণ জনগণের গণতান্ত্রিক ও সামাজিক সংগ্রামের দমনের ফসল। একটি ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী ঝড়ের ভয়ে, গান্ধী-নেহেরুর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে একটি চুক্তি করেছিল, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়াকে সাম্প্রদায়িক লাইনে বিভক্ত করে একটি প্রধানত হিন্দু ভারত এবং একটি স্পষ্টভাবে মুসলিম পাকিস্তানে পরিণত করা হয়েছিল এবং ভারতীয় বুর্জোয়ারা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রীয় শাসনযন্ত্র এবং বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ পুঁজির অধিকার রক্ষার জন্য সরাসরি দায়িত্ব নেয়।

সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা 'দুটি-রাষ্ট্র সমাধান' এর পক্ষে ভারতীয় স্তালিনবাদীদের প্রতিক্রিয়াশীল প্রচার,

সাম্রাজ্যবাদীদের-সমর্থিত প্যালেস্তীনিদের নিধন এবং ক্রমাগত হতে থাকা তাঁদের অপসারণের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে, মোদি সরকার এবং পশ্চিমা শক্তির উপর চাপ দেবার সিপিএম এর নিরর্থক ও প্রতিক্রিয়াশীল প্রচেষ্টা, শ্রমিক শ্রেণীকে ভারতীয় বুর্জোয়া এবং তার রাষ্ট্রের অধীনস্থ করার প্রচেষ্টার একটি অংশ। কয়েক দশক ধরে, সিপিএম শ্রমিক শ্রেণীকে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারগুলির সাথে বেঁধেছে এবং সমর্থন করেছে, যারা এক দশক আগে পর্যন্ত জাতীয় সরকারে বুর্জোয়াদের পছন্দের দল ছিল, এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক বুর্জোয়া দলগুলিকে সমর্থন করেছে এই কারণে যে তারা হিন্দু-আধিপত্যবাদী বিজেপি’র বিকল্প হিসাবে একটি 'ধর্মনিরপেক্ষ' বিকল্প গঠন করেছে। বাস্তবে, ক্ষমতায় থাকাকালীন ডানপন্থী নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করার জন্য স্তালিনবাদী এবং স্তালিনবাদী-নিয়ন্ত্রিত ইউনিয়নের সাথে যোগসাজশ করে, কংগ্রেস এবং তার আঞ্চলিক মিত্ররা বিজেপির উত্থানের পথ প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ফলে ভারতীয় বুর্জোয়া রাজনীতিতে তারা প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠেছে।

ইন্ডিয়া নির্বাচনী জোটের প্রচারের মাধ্যমে, স্তালিনবাদীরা ২০২৪ সালের বসন্তে নির্ধারিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে একটি বিকল্প হিসাবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বুর্জোয়া সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চাইছে। কংগ্রেস এবং তার আঞ্চলিক মিত্রদের রাজনৈতিক রেকর্ড প্রমাণ করে যে এই ধরনের সরকার মোদির শাসনব্যাবস্থা থেকে মৌলিকভাবে আলাদা কিছু হবে না। এটি বিনিয়োগকারী-পন্থী অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে, চীনের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সহায়তা করবে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে আক্রমণ করবে।

সিপিএমের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি স্তালিনবাদের ফল। এটিই জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং সুবিধাপ্রাপ্ত আমলাতন্ত্রের আদর্শ যা সোভিয়েত শ্রমিক শ্রেণীর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল এবং বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল যার ভিত্তিতে লেনিন ও ট্রটস্কির নেতৃত্বে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। 'এক দেশে সমাজতন্ত্র' এর নামে, স্তালিনবাদী আমলাতন্ত্র অসদুপায়ে পাওয়া সুবিধা বজায় রেখেছিল বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামে নাশকতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে এবং ঐতিহাসিকভাবে সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্যে থাকা দেশগুলিতে জাতীয় বুর্জোয়াদের সাথে মিত্রতার প্রচেষ্টায়।

প্যালেস্তাইনের সাম্রাজ্যবাদী-সমর্থিত বিভাজন এবং ইজরায়েলি ইহুদীবাদী রাষ্ট্র গঠন ১৯৪৮ সালে সংঘটিত হয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাত্র এক বছর পরে, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান 'স্বাধীন' পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হবার।

প্যালেস্তাইনের ক্ষেত্রে, মস্কোর ক্রেমলিনের আমলাতন্ত্র— ও বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থন করেছিল, যার মধ্যে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) রয়েছে যেখান থেকে ১৯৬৪ সালে সিপিএমের উদ্ভব হয়েছিল—যারা ইজরায়েল এর গঠনকে সমর্থন করেছিল। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শ্রমিক শ্রেণীর বৈশ্বিক বিপ্লবী উত্থানকে দমনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে চূড়ান্ত নিষ্পতিতে পৌঁছানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এটি করেছিল।

ভারতে, স্তালিনবাদী সিপিআই, যুদ্ধের সময় 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনে নাশকতা করতে সহায়তা করে, পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক শ্রেণীকে কংগ্রেস পার্টি এবং মুসলিম লীগের অধীনস্থ করে এই ভিত্তিতে যে তারা, জাতীয় বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক প্রতিনিধি, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য সঠিক নেতৃত্ব। সিপিআই এতে সমর্থন করেছিল, এবং, যেখানে এটি ভারতের আইনসভায় প্রতিনিধি ছিল, ব্রিটেন, কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে 'ক্ষমতা হস্তান্তর চুক্তি' পক্ষে ভোট দেয়, এবং মহাদেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পক্ষে স্পষ্টভাবে মুসলিম পাকিস্তান এবং প্রধানত হিন্দু অধ্যুষিত ভারত, যাকে তারা 'আত্ম-নিয়ন্ত্রণের' উপলব্ধি হিসাবে ঘোষণা করেছিল।

গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী এবং ভারতীয় বুর্জোয়াদের প্রতি ভারতীয় স্তালিনবাদীদের করুণ ও প্রতিক্রিয়াশীল আবেদনের বিরোধিতা করে, ওর্‍্যাল্ড সোশ্যালিষ্ট ওয়েব সাইট এর উপর জোর দেয় যে এই কাজটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমিক শ্রণীকে সংঘবদ্ধ করার মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে।

আমরা সারা বিশ্বে বিক্ষোভে যোগদানকারী শ্রমিক ও যুবকদের সমর্থনের জন্য শ্রমিক শ্রেণীর দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। ইজরায়েলের জন্য নির্ধারিত সমস্ত অনুমানযোগ্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং উত্পাদন বন্ধ করার জন্য শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং অন্যান্য কর্মসূচি সংগঠিত করা উচিত। এটিকে অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সাধারণ ধর্মঘটের লড়াইয়ের সাথে এবং সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াইকে পুঁজিবাদী ব্যয় কঠোরতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের ক্রমবর্ধমান গণঅভ্যুত্থানের সাথে এবং তাদের সামাজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাথে যুক্ত হতে হবে।

সাম্রাজ্যবাদের বর্বরতার এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত বেড়েচলা ধ্বংসলীলা যার মধ্যে সংকটাপন্ন পুঁজিবাদ মানবতাকে নিক্ষেপ করতে চায় তার একমাত্র প্রগতিশীল উত্তর হল বিশ্বব্যাপী গাজা বিরোধী বিক্ষোভ এবং শ্রমিক শ্রেণীর উত্থানকে সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সশস্ত্র করা।

প্রতিক্রিয়াশীল দুই-রাষ্ট্র গঠণ এই সমাধানের বিরোধিতা করে, সাম্রাজ্যবাদ এবং সকল প্রকার জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব ও ইহুদি শ্রমিকদের অবশ্যই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, ইহুদিবাদী ও আরব উভয়ের, ও শ্রমিকদের ক্ষমতা দখলের পক্ষে ইউনাইটেড সোশ্যালিষ্ট স্টেটস অফ মিডিল ইষ্ট প্রতিষ্ঠার জন্য।

Loading