বাংলা

তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করতে মোদির ভরসা অসৎ উপায়, বিরোধীদের ডানপন্থী চরিত্র

ভারতীয়রা এই শুক্রবার সাত ধাপের জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১০০ টিরও বেশি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে, যার মধ্যে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর ৩৯ টি কেন্দ্রের সবকটি রয়েছে। ভোটিং শেষ হবে ১লা জুন, ৫৪৩-সদস্যের লোকসভা যা ভারতের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের নিম্ন এবং শক্তিশালী কক্ষ, এই নির্বাচনের ফলাফল ৪ই জুন প্রকাশ হবে।

নির্বাচনটি স্টালিনবাদী সংসদীয় দলগুলি এবং তাদের সহযোগী ট্রেড ইউনিয়নগুলি যা কয়েক দশক ধরে শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করেছে তারা সহ সমগ্র বুর্জোয়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার বিরোধিতায় শ্রমিক শ্রেণীর একটি নতুন রাজনৈতিক পথ উজ্জীবিত করার তাগিদকে তুলে ধরে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী চেন্নাইয়ে নির্বাচনী প্রচারে এক রোড শোতে বিজেপি পার্টির প্রতীক পদ্মফুল দেখাচ্ছেন, ৯ই এপ্রিল, ২০২৪ মঙ্গলবার, [AP Photo/AP Photo]

জনমত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অতি-ডানপন্থী, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং তার জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট টানা তৃতীয় বার পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ পাবে।

কংগ্রেস পার্টি, যা সম্প্রতিকাল পর্যন্ত ভারতীয় বুর্জোয়াদের জাতীয় সরকারের পছন্দের দল, ৩০ টিরও বেশি দলের একটি বিরোধী নির্বাচনী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে - যা ইন্ডিয়ান ন্যাশ্যানাল ডেভোলপমেন্ট ইনক্লুসিভ এলায়েন্স বা ইন্ডিয়া নামে পরিচিত।

কংগ্রেস নেতারা এবং স্ট্যালিনবাদীরা সহ তাদের সহযোগীরা দাবি করছে যে মোদী এবং হিন্দু আধিপত্যবাদী বিজেপিকে 'গণতন্ত্র ধ্বংস' থেকে বিরত রাখার একমাত্র উপায় হল ইন্ডিয়া জোটের সরকারকে নির্বাচন করা। একটি 'গণতান্ত্রিক উপায়' এর প্রতিনিধিত্ব করা থেকে দূরে, এই ইন্ডিয়া সরকার হবে একটি ডানপন্থী পুঁজিবাদী শাসন, যেটি ভারতের শাসক শ্রেণীর 'বিনিয়োগপন্থী' সংস্কারের কর্মসূচি এবং চীন-বিরোধী 'ইন্দো-মার্কিন গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ' কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ভারতের শ্রমিক এবং মেহনতকারীদের সাথে দীর্ঘ বিরোধে জড়িয়ে পড়বে।

বিজেপি সরকার এশিয়ার প্রথম এবং দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি যথাক্রমে মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানি এবং কর্পোরেট মিডিয়া সহ ভারতীয় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন উপভোগ করে। তারা মোদি সরকারকে, বেসরকারীকরণকে ত্বরান্বিত করার জন্য, শ্রম ও পরিবেশগত বিধিবিধানের অবশিষ্টাংশগুলিকে ছেঁটে ফেলা এবং ব্যাপক জনগণের বিরোধিতার মুখে অন্যান্য শ্রমিক-বিরোধী পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়নের জন্য এবং বিশ্ব মঞ্চে তাদের মহান-শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনুসরণ করার জন্য সেরা উপায় হিসাবে দেখে।

১০ বছর ধরে সরকারে থাকায়, মোদী সরকার আরও স্পষ্টভাবে কর্তৃত্ববাদী চরিত্র গ্রহণ করেছে। এটি ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে নিয়োজিত থাকে, যার উদ্দেশ্য তার ফ্যাসিবাদী কর্মীদের একত্রিত করার ভিত প্রস্তুত করা, ক্রমবর্ধমান বাড়তে থাকা সামাজিক ক্ষোভ এবং হতাশাকে প্রতিক্রিয়াশীল লাইনে ঠেলে দেওয়া এবং শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত করা। এটি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে আরো বেশী গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করা ক্ষেত্রে এগিয়েছে, মূলত সংসদকে এড়িয়ে, যেমন 2019 সালের সাংবিধানিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীর থেকে তার আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বামপন্থী রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে পাঠানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি নির্লজ্জ হয়ে উঠেছে। জানুয়ারিতে, একটি ঐতিহাসিক অপরাধ এর উপরে আরো একটি, এটি পূর্বতন বাবরি মসজিদের জায়গায় যেটি ১৬ শতকের একটি মসজিদ যা তিন দশক আগে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট আদেশ অমান্য করে বিজেপি-উস্কানিমূলক হিন্দু ধর্মান্ধদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল সেখানে মোদির দ্বারা একটি হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধনকে একটি জাতীয় চমক হিসাবে তুলে ধরে।

বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্র মোদিকে তুলে ধরার প্রচারের চারপাশে ঘোরা ফেরা করে - যিনি 2002 সালের মুসলিম বিরোধী গুজরাট হত্যাকাণ্ডের উস্কানিতে ভূমিকা রাখার কারণে প্রথম জাতীয় খ্যাতি পেয়েছিলেন - 'শক্তিশালী' হিন্দু এবং পৌরাণিক হিন্দু দেবতা ভগবান রাম এর ধার্মিক ভক্ত হিসাবে।

ভারতে’র চাকরির সংকট

বিরোধী দলগুলিকে বলা 'দুর্নীতিবাজ', 'দেশবিরোধী' এবং মুসলিম 'তুষ্টিকারী' হিসাবে বিশেষণগুলি কাজ না করায় মোদী, তার প্রধান অণূচর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তাদের পার্ষদরা ভারতের 'বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশী' অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী বর্ধিত মর্যাদার প্রচারে জোর লাগিয়েছে।

এর বেশিরভাগই জাতীয়তাবাদের ঢোল পেটানো। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারতের বৃদ্ধি মূলত বেসরকারি বিনিয়োগের পরিবর্তে, ঘাটতি-অর্থায়নকৃত রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে ব্যয় দ্বারা চালিত হয়েছে। ক্রয় ক্ষমতার শর্তে, ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, এটি অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে, বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উত্পাদন, আইটি, বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য আধুনিক সেক্টরগুলি ক্ষুদ্র উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে বিশাল 'অনানুষ্ঠানিক' অর্থনীতির পাশাপাশি বিদ্যমান দীর্ঘ-প্রাচীন প্রযুক্তি এর কারণ।

বিজেপি শাসনের বিগত দশকে এবং ভারতীয় বুর্জোয়ারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পূর্ণ একীকরণের পক্ষে স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন কৌশল প্রত্যাখ্যান করার পর থেকে ভারতের অর্থনীতি যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, এর ফল প্রায় পুরোটাই একচেটিয়াভাবে শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের আশেপাশে থাকা উচ্চ-মধ্যবিত্তের ঝুলিতে গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ের তুলনায় সমসাময়িক ভারতে সামাজিক বৈষম্য অনেক বেশি। 2022-23 সালে জনসংখ্যার শীর্ষ থাকা ১ শতাংশ ভারতীয় সমস্ত আয়ের ২২.৬ শতাংশ তাঁদের ঝুলিতে ভরেছে এবং সমস্ত সম্পদের ৪০.১ শতাংশ তারা দখল করে আছে। নীচে থাকা ৫০ শতাংশ ভারতীয়দের আয় মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ এবং মাত্র ৬.৪ শতাংশ সম্পদ তাঁদের অংশীদারিত্বে আছে, ভারতীয়দের অধিকাংশই দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এবং কোনও দুর্ভাগ্য (চাকরি হারানো, পরিবারে অসুস্থতা ইত্যাদি) এই ভয় নিয়ে বাস করে।) তাদেরকে অর্থনৈতিক অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করবে। যেমনটি আছে, কোটি কোটি ভারতীয় চরম দারিদ্র্যের কারণে অপুষ্টি ও ক্ষয়ের শিকার।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, 'বেকারদের বৃদ্ধি' সমস্যাটি যা আগের দশকে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল, কেবলমাত্র আরও তীব্র হয়েছে। সেন্টার ফর মনিটরিং অফ ইন্ডিয়ান ইকোনমির তথ্য অনুসারে, 2023 সালে ভারতের যুব বেকারত্বের হার ছিল ৪৫.৫ শতাংশ।

ভারতের বেকার সংকটের আরও একটি ইঙ্গিত হল কৃষিতে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি। কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিক যারা COVID-19 মহামারীর শুরুতে মোদি সরকারের কোনো সতর্কতা ছাড়াই লকডাউনের কারণে ভারতের শহর ছেড়ে পালিয়েছিল নিজেদের রক্ষা করার জন্য, তাদের বেশীরভাগ ফিরে আসেনি, যদিও কৃষির আয় মূলত স্থবির। একটি উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত পুঁজিবাদী বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে যা আশা করা যায় তার বিপরীতে, গত পাঁচ বছরে কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির শতাংশ ৩.৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ২০১৮-১৯ সালে ৪২.৫ শতাংশ থেকে ২০২২-২৩ সালে ৪৫.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালালি যখন এটি চীনের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি সম্পর্কে মোদি এবং বিজেপির দাবির ক্ষেত্রে, বিশ্ব ভূরাজনীতিতে নয়াদিল্লি যে সম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করছে সেই ব্যাপারে তারা কিছুই বলে না। কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন পূর্বসূরি সরকার দ্বারা গঠিত ভারত-মার্কিন জোটের উপর ভিত্তি করে, বিজেপি সরকার চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বেপরোয়া, সর্বতরফা সামরিক-কৌশলগত আক্রমণে ভারতকে প্রথম সারিতে থাকা একটি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনা প্রভাব মোকাবেলায় ওয়াশিংটনের সাথে একত্রে কাজ করা; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মিত্র জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপক্ষীয় এবং চতুর্ভুজ সামরিক-নিরাপত্তা সম্পর্কের একটি বিস্তৃতিতে ভারতকে একীভূত করা; ভারতকে মার্কিন অস্ত্র উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত করা; এবং মার্কিন-চীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের সামরিক বাহিনী কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করবে সে সম্পর্কে ওয়াশিংটনের দাবি মত পরিকল্পনা তৈরি করা।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সহচর্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত করার আশা সহ ভারতের নতুন 'মর্যাদা' মেনে, নয়াদিল্লি প্যলেস্তীনির বিরুদ্ধে ইজরাইল যে গণহত্যামূলক যুদ্ধ চালাচ্ছে তাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে যোগ দিয়েছে। কয়েক মাস ধরে হত্যা কান্ড চলার পরই মোদি সরকার জাতিসংঘে অর্থহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

শ্রমিক শ্রেণী এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে ব্যাপক সামাজিক অসন্তোষের অসংখ্য সূচক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বহু দীর্ঘ ধর্মঘটের সংগ্রাম, যেমন 2022-23 সালে মহারাষ্ট্র রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন শ্রমিকদের ধর্মঘট।

বিজেপির জনসমর্থনের শক্তি সম্পর্কে তাদের সমস্ত ঘোষণার জন্য, মোদি, শাহ এবং বিজেপি স্পষ্টতই ব্যাপক বিরোধিতার আকস্মিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনায় আতঙ্কিত। তাই, তাদের হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীকে একত্রিত করা এবং ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কৃষকদের দিল্লিতে মিছিল করা থেকে বিরত রাখতে পুলিশ রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে।

তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অর্থ, পেশী, একটি চটকদার মিডিয়া, এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং অন্যান্য ধরণের বস্তা পচা বক্তব্য এবং কারসাজির উপর তাদের নির্ভরতা সম্পর্কে তাদের সচেতনতার কারণেই বিজেপি তার বুর্জোয়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তির জন্য সমস্ত উপায় ব্যবহার করার এত নিরলস প্রচেষ্টা চালায়। একটি ঘটনা যা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ব্যাপারে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আম আদমি পার্টির (এএপি, কমন ম্যানস পার্টি) প্রধান নেতা ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম প্রধান অংশীদার, কেজরিওয়াল যাকে ২১ শে মার্চ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে ভরা হয়েছে।

দ্য ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স: শ্রমিক শ্রেণীর জন্য একটি ডানপন্থী ফাঁদ

বিরোধী দলগুলি ভারতের মেহনতি জনগণের প্রতি মোদি সরকারের ভয় এবং গণতান্ত্রিক ও সামাজিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি তার শত্রুতার কথা তুলে ধরে।

সরকারে থাকাকালীন, জাতীয় বা রাজ্য স্তরে, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমস্ত দল- যার মধ্যে স্টালিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) বা সিপিএম, এবং এর ছোট, বড় সহযোগী পার্টিগুলি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, বা CPI - 'বিনিয়োগকারী পন্থী' নীতি বাস্তবায়ন করেছে। এবং একইভাবে, তারা সকলেই ভারতের ওয়াশিংটনের আলিঙ্গনে এবং চীন-বিরোধী ভারত-মার্কিন জোটকে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিপ্রস্তর করে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে।

কংগ্রেস পার্টি, যেটি বংশানুক্রমিকভাবে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে রয়েছে, 2014 সালে রাষ্ট্র ক্ষমতা হারাবার পর থেকে একের পর এক নির্বাচনী পরাজয়ের দিকে চলে গেছে। ক্ষমতায় এসে, বিজেপি কংগ্রেসের উপর জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল - বড় ব্যবসায়িক দুর্নীতির কারণে। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এটি ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের উপর ক্ষোভ থেকে উপকৃত হয়েছে এবং কংগ্রেসের এই দাবির স্পষ্ট ব্যর্থতা থেকে যে এটি নব্য-উদারবাদী 'সংস্কার'কে একটি মানবিক মুখ দিতে পারে।

INDIA জোট জনগণের ক্ষোভের জন্য একটি সংশোধন ক্রমের আবেদন করছে, বিশেষ করে চাকরির সংকটের জন্য, এর সদস্য দলগুলি চাকরি সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং মজুরি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অঙ্গীকার করে (কোনও ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স প্ল্যাটফর্ম নেই।)

ভারতের সাংবিধানিক দলগুলির ডানপন্থী রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এই আবেদনগুলি জনপ্রিয় আকর্ষণ অর্জনে ব্যর্থ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তারা আসলে সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক এবং স্পষ্টতই তাই। কংগ্রেস পার্টির ইস্তেহারই ধরুন। এটিতে অনেকগুলি অঙ্গীকার করা হয়েছে যেমন পাবলিক সেক্টরে এবং সরকারি মালিকানাধীন উদ্যোগ গুলিতে (পিএসইউ) চুক্তি ভিত্তিক চাকরি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি, বিজেপির ডানপন্থী শ্রম 'সংস্কার' প্রত্যাহার করা এবং কৃষকদের ফসলের জন্য একটি ন্যূনতম সমর্থন মূল্য নিশ্চিত করা সহ আনেক প্রতিশ্রুতি বড় ব্যবসাদারদের সমর্থন সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে। এর মধ্যে রয়েছে বিজেপির অত্যধিক 'নিয়ন্ত্রণ' দূর করে ব্যবসার জন্য 'স্বাস্থ্যকর, নির্ভীক এবং বিশ্বস্ত বাতাবরণ পুনরুদ্ধার করা; সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি; এবং তাদের বিতর্কিত সীমান্তে চীনা চাপের কাছে নতি স্বীকার করার মোদির কথিত নীতির অবসান ঘটানো।

ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য ইন্ডিয়া জোটের দাবিগুলিও কম নকল নয়। কংগ্রেস পার্টি কয়েক দশক ধরে হিন্দু অধিকারের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং তার সাথে মিশেছে, যার ফল স্বরূপ এমনকি মিডিয়ার একটি অংশ তার নীতিগুলিকে 'হিন্দুত্ব-লাইট' হিসাবে চিহ্নিত করছে। কিন্তু এটি শিবসেনা (ইউবিটি), একটি ফ্যাসিস্টিক, স্পষ্টতই হিন্দুত্ব-পন্থী এবং তৎকালীন বিজেপির মিত্র, ইন্ডিয়া জোটের প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্বদানকারী দলগুলির মূল গোষ্ঠীর মধ্যে উপস্থিতি যা সর্বতভাবে তার 'ধর্মনিরপেক্ষ' হবার দাবিকে মিথ্যা বলে তুলে ধরে।

ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশন সহ স্ট্যালিনবাদী সিপিএম এবং সিপিআই প্রতিক্রিয়াশীল ইন্ডিয়া জোটকে একটি 'প্রগতিশীল' মুখ দেওয়ার প্রচেষ্টায় মূল ভূমিকা পালন করে। কয়েক দশক ধরে, স্তালিনবাদী এবং তাদের বামফ্রন্ট শ্রেণী সংগ্রামকে দমন করেছে এবং শ্রমিক শ্রেণীকে বৃহৎ ব্যবসায়ী কংগ্রেস পার্টি এবং দক্ষিণপন্থী বর্ণবাদী এবং জাতিগত-সাম্প্রদায়িক দলগুলির সাথে যুক্ত করেছে। যার ফলে বিজেপি এবং তার হিন্দু ফ্যাসিবাদী মিত্ররা আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী।

বৈশ্বিক পুঁজিবাদী সংকটের পরিস্থিতিতে, শ্রমজীবী মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার একমাত্র কার্যকর কৌশল হল শ্রেণী সংগ্রাম এবং ট্রটস্কির কৌশল এবং স্থায়ী বিপ্লবের কর্মসূচির উপর ভিত্তি রাখা। ভারতীয় শ্রমিকদের অবশ্যই তাদের সংগ্রামকে একত্রিত করতে হবে বুর্জোয়াদের সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিরোধিতা করে, সারা বিশ্বের শ্রমিকদের সাথে একত্রে একটি শ্রমিক সরকারের গঠন এবং ভারতীয় ও বিশ্ব অর্থনীতির সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠনের লড়াইয়ে তাদের পিছনে গ্রামীণ শ্রমজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

Loading