এই সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে ১,০০০-এরও বেশি ব্যক্তিগত বিমান সুইস স্কি রিসোর্ট শহর দাভোসে উড়ে গেছে, যেখানে বিশ্বের ব্যাংকগুলির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা, ইন্ধন নির্বাহীরা এবং রাষ্ট্রপ্রধানরা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিতে এসেছেন।
শীর্ষ সম্মেলনের আগে, দারিদ্র্যবিরোধী দাতব্য সংস্থা অক্সফাম তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্বের বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ গত এক বছরে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
এতে দেখা গেছে যে ২০২৪ সালে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদ প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে অক্সফাম আশা করেছিল যে দশকের শেষ নাগাদ কোনো একজন ট্রিলিয়নিয়ার হবে, এখন তারা আশা করছে যে পাঁচজন হবে।
অক্সফাম লিখেছে যে এই অভিজাতরা এখন 'কুলীন অভিজাত ধনী' নামে পরিচিত, মূলত উত্তরাধিকারের মাধ্যমে তাদের সম্পদ জমা করে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তা স্থানান্তর করে।
এটি সামাজিক বৈষম্যের বৃদ্ধিকে শিল্পের ক্রমবর্ধমান একচেটিয়াকরণের সাথে সম্পর্কিত করে। এটি লিখেছে
'একচেটিয়াভাবে শিল্পের উপর তাদের দমনপীড়ন শক্ত করার সাথে সাথে, বিলিয়নেয়াররা তাদের সম্পদকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছতে দেখে। একচেটিয়া ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী চরম সম্পদ এবং বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলছে।'
২০১৪ সালে, অক্সফাম বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের আগে বৈষম্যের উপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের ঐতিহ্য শুরু করে। সেই বছর, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটসের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭৬ বিলিয়ন ডলার। আজ, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ সেই পরিমাণের পাঁচ গুণেরও বেশি, যা দাঁড়িয়েছে ৪২৭.৫ বিলিয়ন ডলারে।
২০১৪ সালের প্রতিবেদনে, অক্সফাম সতর্ক করে বলেছিল, 'কম সংখ্যক মানুষের হাতে অর্থনৈতিক সম্পদের এই বিশাল কেন্দ্রীকরণ অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি উপস্থাপন করে।'
এক দশক পরে, এই সতর্কীকরণ ভবিষ্যতের জন্য নয় বরং বর্তমান সময়ের জন্য। ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যে, নব্য-ফ্যাসিবাদী দলগুলি বড় ধরনের নির্বাচনী লাভ করেছে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ২০২০ সালে ফ্যাসিবাদী অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন, আবারও আমেরিকার ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছে।
ট্রাম্প, যাকে তিনি আমেরিকান রাজ্যে 'বিপ্লব' বলে অভিহিত করেছিলেন তা তদারকি করতে ব্যস্ত ছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। পরিবর্তে, তিনি দূর থেকে উপস্থিত হয়ে ৮৫০ জনেরও বেশি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের সামনে একটি বিশাল পর্দায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ওয়াশিংটন পোস্টের ডেভিড ইগনেশিয়াস যেমন বর্ণনা করেছেন:
ট্রাম্পের ছবি সেই ঘরেএকাধিক পর্দায় প্রাধান্য পেয়েছিল। সিনেমা-থিয়েটার-আকারের বিশাল কেন্দ্রেস্থলের নীচে পাঁচজন ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক নেতাকে তাদের WEF-লোগো আসনে ক্ষুদ্র দেখাচ্ছিল। কোন একসময় তাঁরা তাদের 'মহাবিশ্বের প্রভু' বলতো, কিন্তু এখন তারা কেবল সুপারম্যান-এর কাছে নরম প্রশ্ন তোলার আবেদনকারী ছিল।
ট্রাম্প নামের তালিকার মধ্যে নিজেকে ব্যাংক এবং ইন্ধন নির্বাহীদের উপরে স্থান দিয়েছিলেন, যারা তাকে ভ্রকটিতে, তোষামোদিত এবং প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু প্রতিটি স্বৈরশাসকের মতো, তিনি কেবল নিজের পক্ষেই নয় বরং একটি সামাজিক শ্রেণীর পক্ষেও কথা বলেন। ট্রাম্প আমেরিকান আর্থিক অভিজাতদের সবচেয়ে লুণ্ঠনমূলক প্রবৃত্তির পক্ষে কথা বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এমন যেখানে কর্পোরেশনগুলি স্বাধীন দেশের শ্রমিকদের মৃত্যু পর্যন্ত শোষণ করতে, এর বাতাসকে বিষাক্ত করতে এবং এর জলে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলতে।
'আমার প্রশাসন ... ইতিহাসের বৃহত্তম নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ অভিযান শুরু করেছে, যা আমার গত মেয়াদের রেকর্ড-স্থাপনকারী প্রচেষ্টাকেও ছাড়িয়ে গেছে,' ট্রাম্প বলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে 'কারখানা তৈরি করতে বা একটি কোম্পানি গড়ে তোলার' জন্য 'যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পৃথিবীতে আর কোনও ভাল জায়গা হবে না'।
ট্রাম্প বলেছেন যে আমেরিকায় কর্পোরেট করের হার এখন ২১ শতাংশে, 'এবং এখন আমরা এটি ২১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনব।' তিনি আরও বলেন, '১৫ শতাংশ যতটা সম্ভব কম। এবং একটি বৃহৎ দেশের মধ্যে সর্বনিম্নতম।'
ট্রাম্প বলেন, এই কর্মসূচিটি ছিল 'সাধারণ জ্ঞানের বিপ্লব।' প্রকৃতপক্ষে, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এই পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে এটি 'সাধারণ জ্ঞান' - যারা শেষবার কবে বাণিজ্যিক বিমানে ভ্রমণ করেছিলেন তা মনে করতে পারেন না এবং যারা বুঝতে পারেন না যে শ্রমিকরা কেন এত অযৌক্তিক দাবি করবে যাতে তাঁরা পর্যাপ্ত উপার্জন করতে পারে খাওয়ার জন্য এবং তাঁরা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবে না।
কিন্তু ট্রাম্প কেবল আমেরিকান জনগণকেই নয়, সমগ্র বিশ্ব থেকে আত্মসমর্পণ এর দাবি করেছেন। তিনি ধমক দিয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন এবং প্ররোচিত করেছিলেন। দণ্ডিত অপরাধী, রিয়েলিটি টিভি তারকা এবং রিয়েল এস্টেট প্রতারক ডোনাল্ড ট্রাম্প, একজন ক্যাপো ডি টুটি ক্যাপির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ইউরোপের পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর জন্য 'এমন একটি প্রস্তাব করেছেন যা তারা প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না'।
বিশ্বের প্রতিটি ব্যবসার প্রতি আমার বার্তা খুবই সহজ: আমেরিকায় আপনার পণ্য তৈরি করুন, এবং আমরা আপনাকে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন কর ব্যাবস্থা দেব। আমরা খুব উল্লেখযোগ্যভাবে কম করছি, এমনকি ট্রাম্পের আসল করের থেকেও। কিন্তু যদি আপনি আমেরিকায় আপনার পণ্য তৈরি না করেন, যা আপনার বিশেষাধিকার, তাহলে খুব সহজ কথা যে, আপনাকে একটি শুল্ক দিতে হবে।
এর পরে, ট্রাম্প কানাডাকে সংযুক্ত করার তার হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেন। “আমি বলছি তুমি সর্বদা একটা রাজ্য হতে পারো, আর যদি তুমি একটা রাজ্য হও, তাহলে আমাদের কোনও ঘাটতি থাকবে না।” পরের দিন, ট্রাম্প ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনকে ফোন করে আর্কটিক দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান। “উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট ছিল। তারা এটা চায়,” ফোনটি শুনেছেন এমন একজন কর্মকর্তা ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন। “ডেনস এখন সংকটের মুখে রয়েছে।”
ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টা এবং কানাডার অধিগ্রহণের ডাক থেকে শুরু করে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ানদের অধীনস্ত করার প্রচেষ্টার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে, ভ্লাদিমির লেনিন তার ১৯১৬ সালের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সাম্রাজ্যবাদ, যাকে 'পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর' হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
একচেটিয়া, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা পুঁজিবাদী গোষ্ঠী, স্বাধীনতার জন্য নয় বরং আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা, মুষ্টিমেয় ধনী বা সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের দ্বারা ক্রমবর্ধমানভাবে সংখ্যক ছোট বা দুর্বল দেশের শোষণ - এই সমস্ত সাম্রাজ্যবাদের সেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলির জন্ম দিয়েছে যা আমাদের এটিকে পরজীবী বা ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে বাধ্য করে।
লেনিনের সময়ের মতোই, সাম্রাজ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার সবচেয়ে মৌলিক এবং অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলি প্রাধান্য পাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, এটি একনায়কত্ব, একচেটিয়াতা এবং শ্রমিক শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান দুর্দশা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, এটি জলদস্যুতা, উপনিবেশবাদ এবং বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক নীতির মিশ্রণ। পুঁজিবাদী পচনের এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি ট্রাম্পের মধ্যে তাদের সম্মিলিত অভিব্যক্তি খুঁজে পায়: ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর ফুহরার।
ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগী ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর পুঁজির যে একনায়কত্ব গড়ে তুলছেন তা শ্রমিক শ্রেণীর খরচে, যাদের আবস্থা চরম শোচনীয় পরিণত করার আশা ট্রাম্প করছেন সেই পুঁজিবাদীদের জন্য তাঁর স্বর্গ গড়তে।
কিন্তু সমগ্র আধুনিক ইতিহাস শিক্ষা দেয় যে সম্পদ এবং ক্ষমতার এত বিশাল কেন্দ্রীভূতকরণ অনিবার্যভাবে বিপ্লবী উত্থানের পূর্বাভাস দেয়। শ্রমিক শ্রেণী, যারা সমাজের সমস্ত সম্পদ উৎপাদন করে এবং মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত সমাজকে স্থবির করে দিতে পারে, এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব মতামত থাকবে।
