ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েবসাইট, সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি পার্টি (ইউএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস ফর সোশ্যাল ইকুয়ালিটি অবিলম্বে মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবি করেছে। তার আটক গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণের একটি বিশাল বৃদ্ধি। ট্রাম্প প্রশাসন একটি স্বৈরশাসক হিসেবে এই কাজ করছে, যে কোনও আইন বা সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি উদাসীন এবং নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে।
কলম্বিয়ার স্নাতক এবং গত বছরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের বিশেষ পরামর্শদাতা খলিলকে গাজায় হওয়া গণহত্যার বিরোধিতা করার জন্য তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যা আইনের প্রথম সংশোধনীর স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা এবং একজন গ্রিন কার্ডধারী। তিনি আগে কখনো গ্রেপ্তার বা কোনও অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হননি।
শনিবার রাতে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) এজেন্টরা তাঁর ভবনের লবিতে খলিল এবং তার স্ত্রী, যিনি একজন আমেরিকান নাগরিক, তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। তারা তাকে ছিনিয়ে নেয়, স্ত্রী কে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয় এবং নিউ জার্সির এলিজাবেথের একটি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) হোল্ডিং সেলে নিয়ে যায়। এমনকি তার আইনজীবীরা ম্যানহাটনে হেবিয়াস কর্পাস মোশন দাখিল করার সময়, তাকে গোপনে ১,৩০০ মাইল দূরে লুইসিয়ানার একটি ব্যক্তিগত আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
রবিবারের বেশিরভাগ সময়, তার আইনজীবী বা তার স্ত্রী কেউই জানতেন না যে তিনি কোথায় আছেন। এটি একটি স্বৈরশাসকের পদ্ধতি—অপহরণ করা, যা ল্যাটিন আমেরিকার সামরিক বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত অবৈধ অপহরণের ধরণ।
এই লেখার সময়, নিউ ইয়র্কের দক্ষিণ জেলার একজন ফেডারেল বিচারক খলিলের যেকোনো বহিষ্কারের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন, বুধবার তার গ্রেপ্তার এবং আটক বৈধ কিনা তা নিয়ে শুনানি মুলতুবি রয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই রায় মেনে চলবে বলে বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই।
সোমবার পোস্ট করা একটি অসাধারণ বিবৃতিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিলের গ্রেপ্তারে তার ভূমিকা নিয়ে গর্ব করেছেন এবং আরও হাজার হাজার এর বিরুদ্ধে এই একই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সমগ্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রচারিত এই সাধারণ মিথ্যা ব্যবহার করে যে, গণহত্যার বিরোধিতা 'ইহুদি-বিদ্বেষী', ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, 'আমরা জানি কলম্বিয়া এবং সারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আরও বেশি ছাত্র রয়েছে যারা সন্ত্রাসবাদী, ইহুদি-বিদ্বেষী, আমেরিকা-বিদ্বেষী কার্যকলাপে জড়িত এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটি সহ্য করবে না।'
এরপর তিনি স্পষ্টভাবে গাজায় গণহত্যার বিরোধিতাকারী যে কারও বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তারের হুমকি দেন। 'এটিই প্রথম গ্রেফতার অনেক আরো গ্রেপ্তার এর মধ্যে। আমরা আমাদের দেশ থেকে এই সন্ত্রাসী সহানুভূতিশীলদের খুঁজে বের করব, গ্রেপ্তার করব এবং নির্বাসিত করব - যাতে কখনও ফিরে আসতে না পারে।'
আমেরিকান ইতিহাসে এই ধরণের বক্তব্যের কোনও নজির নেই। ট্রাম্প সমস্ত আইনি সীমাবদ্ধতার বাইরে কাজ করছেন, প্রকাশ্যে দাবি করছেন যে বৈধ বাসিন্দাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং বিচার ছাড়াই তাদের নির্বাসিত করা, যা সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ৫০ দিনে ট্রাম্প সংবিধানের বিরুদ্ধে এক নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ শুরু করেছেন। গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর অবিরাম আক্রমণ, রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেপ্তার, 'জরুরি অবস্থার' অজুহাতে নির্বাহী বিভাগের অসাধারণ ক্ষমতা প্রয়োগ - এই সবকিছুই হিটলারের জার্মানি, পিনোশেটের চিলি এবং আরও অনেক স্বৈরশাসনে আগেও দেখা গেছে। ট্রাম্প এবং তার নাৎসি প্রেমীদের দল আইন ভেঙে ফেলছে, প্রতিটি লঙ্ঘন পরবর্তী আইনের জন্য মঞ্চ তৈরি করছে।
কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একটি পুলিশ রাষ্ট্র আরোপ করা হচ্ছে, যেখানে গ্রেপ্তার বা নির্বাসনের হুমকি দিয়ে বিরোধী মনোভাবকে অপরাধী করা হচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সোমবার লিখেছে যে 'মার্কিন ক্যাম্পাসে চরম বামপন্থী মতাদর্শকে ভেঙে ফেলার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচারে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাউন্ড জিরোতে পরিণত হয়েছে।'
এটি উল্লেখ করেছে যে শিক্ষা বিভাগ 'ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা পূরণ না করলে সম্ভাব্য প্রয়োগমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ৬০টি স্কুলকে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই তালিকায় আইভি লীগ, রাজ্য এবং ছোট উদারনৈতিক-শিল্প কলেজগুলি অন্তর্ভুক্ত আছে।”
তবে এই আক্রমণ কেবল ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ট্রাম্প সরকারের পদক্ষেপ এবং এর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক শ্রেণীর স্বার্থের বিরোধিতাকারী যে কেউ এর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। বিশেষ করে, যারা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানদণ্ডের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় এবং ধর্মঘট করে তাদের আটক করা হতে পারে।
খলিলের উপর আক্রমণ ট্রাম্প এবং এলন মাস্ক কর্তৃক হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীর গণ ছাঁটাই, কর্পোরেট শোষণের উপর সমস্ত বিধিনিষেধ অপসারণ এবং মেডিকেড এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো সামাজিক কর্মসূচির উপর সরাসরি আক্রমণের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণ অবিচ্ছেদ্যভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতির সাথে জড়িত - ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড এবং কানাডাকে সংযুক্ত করার আহ্বান থেকে শুরু করে প্যালেস্তিনি জনগণের উপর ইজরায়েল দ্বারা জাতিগতভাবে নির্মূল করার প্রতি সমর্থন পর্যন্ত।
একজনও শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটও খলিলের অবৈধ গ্রেপ্তারের এবং নির্বাসনের হুমকির বিরোধিতা করেননি। নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল কিছুই বলেননি এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই মাসের শুরুতে কলম্বিয়ায় ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে 'দ্রুত পদক্ষেপ' নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের একজন মুখপাত্র, যিনি ট্রাম্পের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং পূর্বে বিক্ষোভকারীদের 'বহিরাগত আন্দোলনকারী' বলে নিন্দা করেছেন, তিনি একটি অযৌক্তিক বিবৃতি জারি করেছেন যে শহর 'আইসিই-এর সাথে সহযোগিতা করে না।'
সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের শীর্ষ ডেমোক্র্যাটরা, 'স্বাধীন' সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সহ, সকলেই নীরব রয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে গভীরভাবে জড়িত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় খলিলের উপর আক্রমণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। গ্রেপ্তারের মাত্র কয়েকদিন আগে, খলিলকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং সতর্ক করেছিলেন যে তিনি কলম্বিয়ার অধ্যাপক শাই ডেভিডাই এবং অন্যদের নেতৃত্বে একটি সমন্বিত ডক্সিং অভিযানের শিকার হচ্ছেন, যারা তাকে 'নিরাপত্তার হুমকি' হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং তাকে নির্বাসন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
“আমি ঘুমাতে পারছি না, এই ভয়ে যে ICE অথবা কোনও বিপজ্জনক ব্যক্তি আমার বাড়িতে আসতে পারে,” তিনি একথা লিখেছিলেন, আইনি সহায়তা এবং সুরক্ষার জন্য আবেদন জানিয়ে। কলম্বিয়া তার আবেদনকে উপেক্ষা করেছে, ট্রাম্পের এজেন্টদের তাকে তার বাড়ি থেকে টেনে বের করে নিয়ে যাবার সুযোগ দিয়েছে।
খলিলের গ্রেপ্তার ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক শুরু হওয়া চিঠি লেখার প্রচারে ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তার মুক্তির দাবিতে আবেদনে পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছে।
কলম্বিয়ার অনুষদ এবং স্থানীয় রাব্বি সহ অন্যান্য সমর্থকদের একটি দল সোমবার বিকেলে খলিলের আটকের নিন্দা জানাতে কলম্বিয়ায় একটি সংবাদিক সম্মেলন করেছে, সেই সময় শত শত সমর্থক ম্যানহাটন ফেডারেল আদালতের বাইরে বিক্ষোভ করেছে।
এই পদক্ষেপগুলি আরও বিস্তৃত করা উচিত। কলম্বিয়া, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহর, রাজ্য এবং জাতীয়ভাবে অনান্য স্কুলগুলিতে গণসভা এবং বিক্ষোভের আয়োজন করা উচিত।
শিক্ষার্থীদের একা লড়াই করার জন্য ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এই লড়াই শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে নিয়ে যাওয়া উচিত। খলিল ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স (UAW) এর সদস্য, তবুও UAW নেতৃত্ব নীরব রয়েছেন। সাধারণ শ্রমিকদের অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। UAW-এর স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীদের, অটোকর্মী, শিক্ষাবিদ, অ্যামাজন কর্মী, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিটি অংশকে খলিলের স্বাধীনতার লড়াইয়ে নামতে হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য কর্মক্ষেত্র এবং কারখানাগুলিতে র্যাঙ্ক-অ্যান্ড-ফাইল কমিটি গঠন করতে হবে, এই সংগ্রামকে শ্রমিক শ্রেণীর উপর ট্রাম্পের আক্রমণের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইয়ের সাথে যুক্ত করতে হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর এই আক্রমণের মাত্রাকে কেউ যেন ছোটো করে না দেখে। এটিই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা পুঁজিবাদীদের শাসন।
সবচেয়ে বড় ভুল হবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা ট্রেড ইউনিয়ন ব্যাবস্থাপনার উপর বিশ্বাস করা। মাহমুদ খলিলকে মুক্ত করার লড়াই পুঁজিবাদী অলিগার্কিদের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য এবং যুদ্ধ ও একনায়কতন্ত্রের দিকে মোড় নেওয়ার বিরোধিতায় শ্রমিক শ্রেণীকে অবশ্যই নিজস্ব স্বাধীন শক্তি দিয়ে এতে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
