গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তথাকথিত 'পারস্পরিক শুল্ক' বাস্তবায়নে ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা, দৃশ্যতই আলাপ আলোচনা চালানোর জন্য, যা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ এবং তার রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের আরেকটি প্রকাশ।
এই পদক্ষেপটি ক্রমবর্ধমান লক্ষণ যে সমগ্র আর্থিক ব্যবস্থা - বিশেষ করে মার্কিন ট্রেজারি বাজার - ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসের সংকটের মতো, অথবা সম্ভবত আরও বড় আকারের মন্দার থেকে মাত্র কয়েক দিন বা বলা চলে এমনকি কয়েক ঘন্টা দূরে ছিল।
সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিয়ে, ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি - চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ বাড়িয়ে তার শুল্ক বৃদ্ধির মূল বিষয় প্রকাশ করেছেন, যাকে মার্কিন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সকল গোষ্ঠী আমেরিকান বৈশ্বিক আধিপত্যের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, যেহেতু চীন মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে, তাই চীনা পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক যা 'অবিলম্বে কার্যকর' করা হবে।
আগের সময়কালে, এই ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধকে যুদ্ধের একটি পদক্ষেপ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হত।
অন্যান্য সকল দেশের উপর 'পারস্পরিক শুল্ক' সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী সকল পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকবে।
ঘোষণার আগে, বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে বিক্রি অব্যাহত ছিল। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল মার্কিন ট্রেজারি বাজারে বিক্রি, যা বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল, যা পতনকে তীব্রভাবে বৃদ্ধি করেছিল। এই ক্রমবর্ধমান আর্থিক অস্থিরতা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের একটি মূল কারণ।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস কর্তৃক উদ্ধৃত 'হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ' হিসাবে বর্ণিত একজন ব্যক্তির মতে:
ওয়াল স্ট্রিটের আঘাতে ট্রাম্প ঠিক আছেন, কিন্তু তিনি চান না যে পুরো হাউসটি ভেঙে পড়ুক।
ট্রেজারি বাজারে ক্রমবর্ধমান সংকটের কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছিল। হেজ ফান্ড এবং অন্যান্য প্রধান বিনিয়োগকারীরা, শত শত বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বাজারে ক্রমবর্ধমান ক্ষতির কারণে, ব্যাংকগুলি থেকে ঘাটতি মেটানোর জন্য চাপের সম্মুখীন হচ্ছিল - অর্থাৎ, তাদের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান বজায় রাখার জন্য জামানত হিসাবে অতিরিক্ত তহবিল সরবরাহের দাবিতে।
বাজার ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে, অতিরিক্ত নগদের একমাত্র উপলব্ধ উৎস ছিল ট্রেজারি হোল্ডিং বিক্রি। যদি এই অবস্থা চলতে থাকত, তাহলে ২০২০ সালের মার্চের মতো আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারত, যখন ট্রেজারি বাজার স্থবির হয়ে পড়ে এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ হস্তক্ষেপ করে, স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য কয়েক দিনের মধ্যেই স্থিতিবতা বজায় রাখতে একাধিক ট্রিলিয়ন ডলার ঢালে।
এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং সরকারগুলি - যাদের কাছে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রয়েছে - বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
এমন লক্ষণও দেখা গেছে যে হেজ ফান্ডগুলিকে তাদের তথাকথিত 'বেসিস ট্রেড' এর বেচাকেনা সম্পূর্ণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, এটি একটি কৌশল যা ট্রেজারি বন্ডের দাম এবং সংশ্লিষ্ট ভবিষ্যৎ এর দামের মধ্যে ছোট পার্থক্য থেকে লাভবান হয়। যেহেতু মূল্যের ব্যবধান ন্যূনতম, এই ট্রেডগুলি বিশাল ছাড়ের উপর নির্ভর করে, যার মোট পরিমাণ প্রায় $1 ট্রিলিয়ন।
আশঙ্কা দেখা দিচ্ছিল যে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধারক চীন, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ডলার কে সম্পদ হিসাবে রাখা থেকে সরে যেতে শুরু করতে পারে।
মুদ্রা বাজারে ডলারের পতন ঘটছে, যা ক্রমবর্ধমান প্রশ্ন উত্থাপন করছে যে মার্কিন নীতি অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তার একটি প্রধান উৎস, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে এটি কতক্ষণ তার ভূমিকা বজায় রাখতে পারবে।
ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির সারসংক্ষেপে, দীর্ঘদিনের বিশ্লেষক এড ইয়ার্দেনি মন্তব্য করেছেন যে মার্কিন ট্রেজারিগুলির বিক্রি - যা সাধারণত আর্থিক চাপের সময় নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে বিবেচিত হয় – এটি একটি লক্ষণ যে 'ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো পরখ করার খেলায় মেতেছে।'
ক্লিনটনের অধীনে ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামারস গতকাল বলেছেন যে পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টার ঘটনাগুলি একটি সতর্কতা ছিল যে 'মার্কিন সরকারের শুল্ক নীতি দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর আর্থিক সংকট' আসন্ন হতে পারে।
ঘোষণার পর, ওয়াল স্ট্রিট উল্লাসে ফেটে পড়ে। NASDAQ প্রায় ১২ শতাংশ লাফিয়ে উঠে - ২০০৮ সালের পর এটি একদিনের বৃহত্তম লাভ - S&P 500 ৯.৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ডাউ ৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিটি পদক্ষেপের মতো, গতকালের ঘটনাগুলি দুর্নীতি এবং অপরাধে ডুবে ছিল। বাজার খোলার ঠিক আগে - এবং 'স্থগিত' ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগে - ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন যে 'কেনার জন্য একটি দুর্দান্ত সময়।' ট্রাম্প পরিবার এবং প্রশাসনের ভেতরে এবং আশেপাশে কর্মরত ফ্যাসিবাদীদের দল কত বিলিয়ন ডলার আয় করেছে তা উন্মোচন করার জন্য ভবিষ্যতের তদন্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা দাবি করবেন যে শুল্কের উপর আলোচনা করতে আগ্রহী দেশগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে - এবং তার অনিয়মিত, বারংবার পদ্ধতিগুলি - আমেরিকান পুঁজিবাদের জন্য লাভজনক চুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার কথিত দুর্দান্ত দক্ষতার প্রমাণ।
সত্য থেকে দূরে আর কিছুই হতে পারে না। ট্রাম্পের উচ্ছ্বাস শক্তির লক্ষণ নয় বরং আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ এবং তার রাষ্ট্রের গভীরতর সংকটের ব্যক্তিত্বপূর্ণ প্রকাশ, যার জন্য তার কাছে কোনও সমাধান নেই।
সরকারি ঋণের পরিমাণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার এবং প্রতিদিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সর্বজনীনভাবে 'অস্থিতিশীল' হিসেবে স্বীকৃত। শুধুমাত্র সুদের পরিমাণ বার্ষিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এবং দ্রুত মার্কিন বাজেটের একক বৃহত্তম ব্যয় হিসাবে পরিণত হচ্ছে।
বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে চলছে, যা গত ১২ মাসে ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভ্যন্তরীণভাবে, ভোক্তা ব্যয় এবং আস্থা উভয়ই হ্রাস পাচ্ছে, এবং শুল্ক বৃদ্ধির কারণে চীন থেকে আসা পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার মান আরও হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে - পরিবারের ব্যবহিত জিনিসের একটি বড় অংশ সেখান থেকে আসে।
প্রশাসনের নীতিমালার ফলে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়িক আস্থা ভেঙে পড়েছে। 'পারস্পরিক শুল্কর' নিশানায় থাকা কয়েক ডজন দেশের সাথে আলোচনার জন্য ৯০ দিনের বিরতি এই পতনকে ফিরিয়ে আনতে কিছুই করবে না। মন্দা খুব শীঘ্রই আসছে।
কেউ জানে না আলোচনা থেকে কী বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলি - সেইসাথে বেশ কয়েকটি দরিদ্র আফ্রিকান দেশ - মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি সমাধানে সক্ষম কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে এই ধারণাটি হাস্যকর।
জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বৃহৎ শক্তিগুলির কাছেও এর কোনও সমাধান নেই। এবং ট্রাম্প সহ কারও কোনও ধারণা নেই যে এই 'বিরতির' পরে কী হবে।
'সাময়িক স্থগিত' একটি দিক স্পষ্ট যুক্তি অনুসরণ করে। এটি চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাপী আক্রমণে দেশগুলিকে জড়িত করার একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষভাবে স্পষ্ট, যেখানে আঞ্চলিক দেশগুলির উপর পরিচালিত অর্থনৈতিক হুমকির লক্ষ্য হল বেজিংয়ের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য তাদের চাপ দেওয়া।
যে বার্তাটি দেওয়া হচ্ছে তা হলো: 'জাতীয় নিরাপত্তা'র মূল ইস্যুতে, অর্থাৎ চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে, আমেরিকার সাথে নিজেদের একত্রিত করো এবং কেবল অর্থনৈতিক বিষয়েই নয়, বিদেশনীতিতেও আমেরিকাকে বড় ধরনের ছাড় দাও, নইলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
চীনের বিরুদ্ধে ঊচ্চহারে শুল্ক আরোপ ঐতিহাসিকভাবে অভূতপূর্ব উচ্চতায় উন্নীত হওয়াই সেই ব্যাবস্থা যার মাধ্যমে নির্দেশে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল ট্রাম্পের পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সংকট থেকে ফিরিয়ে এনেছে যা সপ্তাহান্তের শুরুতেই শুরু হতে পারত। কিন্তু গতকাল যা ঘটেছে তা সংকটের সমাধান ছিল না বরং পরবর্তী সংকটের দিকে আর একটি ধাপ, যা আরও বিস্ফোরক রূপ নেবে।
কারণ ট্রাম্পের তথাকথিত 'মুক্তি দিবস', ২রা এপ্রিল, কোনও আলোচনার কৌশল ছিল না বরং যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার অবশিষ্টাংশের ধ্বংস ছিল। এটিকে আবার একত্রিত করা যাবে না। ১৯৩০-এর দশকে যে ধরণের সংকট দেখা দিয়েছিল এবং যা যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল, তা রোধ করার জন্য ১৯৪৫ সালের পরে স্থাপন করা সমস্ত তথাকথিত 'সুরক্ষা ব্যাবস্থা' আর বিদ্যমান নেই।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিতে উন্মাদনা আছে—কিন্তু এটা একটা বস্তুনিষ্ঠ উন্মাদনা যার ভিত্তি আছে। এক অর্থনৈতিক সংস্কার থেকে অন্য অর্থনৈতিক সংস্কার, এমন এক সংকটের মুখোমুখি হয় যার সমাধান তাদের কাছে নেই, প্রশাসন গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর এক পদ্ধতিগত আক্রমণ চালাচ্ছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একনায়কতন্ত্রের কাঠামো তৈরি করছে। এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে যতই দ্বন্দ্ব থাকুক না কেন, সমস্ত দলই বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ।
ট্রাম্প—আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের অদ্ভুত এবং অপরাধমূলক রূপ—প্রতিটি দেশের শাসক শ্রেণীর প্রতিনিধিদের সাথে, আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করার জন্য এবং নিজ দেশে শ্রমিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ধারালো করার জন্য এই 'বিরতি' কে ব্যবহার করবে, শ্রেণী সংগ্রামের বিস্ফোরণের প্রস্তুতিকে তারা সকলেই ভয় পায় এবং জানে যে তা আসছে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীকে গত সপ্তাহের ঘটনাবলী সাবধানতার সাথে পর্যালোচনা করতে হবে। এমন সবচেয়ে খারাপ ভুল যা এটি করতে পারে তা হল এটি ভাবা যে 'বিরতি' দিয়ে সংকটকে কোনো ভাবে কাটানো গেছে। তা এখনও হয়নি।
অতএব, পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণী যেমন ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমিক শ্রেণীকেও প্রস্তুতি নিতে হবে। এই প্রস্তুতির মধ্যে প্রধান কাজ হল সমাজতন্ত্রের কর্মসূচির জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম, যা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার গভীরতর সংকটের একমাত্র কার্যকর সমাধানে এত স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।
