দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান, কয়েক দশকের মধ্যে বৃহত্তম সামরিক সংঘর্ষে কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে টলমল।
পাকিস্তান বুধবার ঘোষণা করেছে যে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ মঙ্গলবার রাতে (৬-৭ মে) ভারতের বিমান হামলার জবাব দেওয়ার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে 'পূর্ণরূপে অনুমোদিত' করেছে 'তাদের পছন্দের সময়, স্থান এবং পদ্ধতি বেছে নিতে।'
এর পরপরই, নয়াদিল্লি জানিয়ে দেয় যে পাকিস্তান দ্বারা যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ ভারতকে একই রকম প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করবে, যা প্রতিপক্ষের আক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করে, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অন্যান্য বিদেশী সরকারকে যা জানিয়েছেন তার সংক্ষিপ্তসারে, একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন যে 'পাকিস্তান যদি উত্তেজনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় তবে ভারত দৃঢ়ভাবে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত।'
উভয় পক্ষের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের হুমকি এবং পাল্টা হুমকির ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কাকে উত্থাপন করেছেন। আসিফ জিও নিউজকে বলেন, 'যদি ভারত 'এই অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়' এবং যদি এমন বিপদ দেখা দেয় যেখানে অচলাবস্থা তৈরি হয়, তাহলে যে কোনও সময় পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে।'
বুধবার ভোরে, ভারত পাকিস্তানের গভীরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যাকে নয়াদিল্লি দাবি করেছে, ২২ এপ্রিল ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামের কাছে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসাবে, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছিল। পহেলগাম হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, ভারতের হিন্দু আধিপত্যবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানকে এর মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযুক্ত করে, যদিও আজ পর্যন্ত তারা তাদের দাবির সমর্থনে কোনও প্রমাণ সরবরাহ করেনি।
পরস্পরবিরোধী দাবি
৬-৭ মে রাতে সংঘটিত আক্রমণ সম্পর্কে ভারত ও পাকিস্তান এখন পরস্পরবিরোধী দাবি করছে, প্রতিটি পক্ষই তাদের সামরিক দক্ষতা নিয়ে গর্ব করছে।
এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ইসলামাবাদের মতে, ভারত ৭৫টিরও বেশি যুদ্ধবিমান নিয়ে একটি বড় আকারের আক্রমণ চালিয়েছে এবং কমপক্ষে ছয়টি এবং সম্ভবত নয়টি ভিন্ন ভিন্ন শহর ও গ্রামে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে - যার মধ্যে তিনটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এবং বাকিগুলি আজাদ বা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে।
ভারতের রক্তাক্ত হামলার পরপরই ভারত-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (জম্মু ও কাশ্মীর) এবং পাকিস্তান-অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে কামান এবং মর্টার হামলা শুরু হয়, যার ফলে ভারতীয় সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীরের কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে।
পাকিস্তান অভিযোগ করেছে যে ভারত 'সন্ত্রাসী শিবির' আক্রমণের নামে বেসামরিক এলাকাগুলিকে লক্ষ্য করে বিমান এবং ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা হামলা চালাচ্ছে। তারা বলেছে যে মঙ্গলবার রাতে ভারতের হামলায় একজন সাত বছর বয়সী শিশু সহ ৩১ জন বেসামরিক লোক নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে।
ইসলামাবাদ তিনটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করছে।
ভারতীয় সামরিক ক্ষয়ক্ষতির পাকিস্তানি দাবির ব্যাপারে নয়াদিল্লি এখনও পর্যন্ত নীরব রয়েছে, তবে হিন্দু এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা বিধ্বস্ত বিমানের প্রমাণ নিশ্চিত করেছে এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি উন্নত ফরাসি-নির্মিত রাফায়েল যুদ্ধবিমানের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে।
ভারত গর্ব করে বলছে যে পাকিস্তানের উপর তাদের আক্রমণ - যাকে তারা অপারেশন সিন্দুর নামে অভিহিত করেছে – যা আরও শক্তিশালী এবং সামরিকভাবে অনেক বেশি পরিশীলিত এবং যা ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে সীমান্ত পার হয়ে যে আক্রমণ চালিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বড়, যাতে উভয়ই উপমহাদেশকে বিপজ্জনকভাবে সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল।
কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথমবার, ভারত পাঞ্জাবের প্রধান শহরগুলির কাছে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে, পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে ছাড়া, অর্থাৎ সেই অঞ্চলে যেখানে নয়াদিল্লি দাবি করে যে কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের সাথে তার প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধের অংশ, যা ন্যায্যভাবে তার নিজস্ব। এবং এটি যুদ্ধবিমান এবং হোভার ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম না করেই করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লেখার সময়, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ শরণ দাবি করেছেন যে পাকিস্তানের উপর তাদের সর্বশেষ আক্রমণের মাধ্যমে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার তার ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে ভারতের কৌশলগত সংঘাতের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম পরিবর্তন করেছে।
সরণ লিখেছেন:
পাকিস্তানের সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকি, অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা এবং ব্যাপক প্রতিশোধ, অথবা আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, পারমাণবিক হুমকির প্রচারণায় ভারত আর প্রভাবিত নয়। ... অপারেশন সিন্দুর, এবং তার আগে, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে প্রতিক্রিয়াগুলি দেখিয়েছে যে ভারতের কাছে সামরিক এবং অন্যান্য বিকল্প রয়েছে।
ভারত দাবি করেছে যে তাদের আক্রমণ 'কেন্দ্রিক, পরিমাপিত এবং অ-উত্তেজক প্রকৃতির' ছিল, তবে এটি স্পষ্টতই একটি বৃহত্তর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই প্রথম, বুধবার ভারত সারা দেশে বেসামরিকভাবে প্রতিরক্ষা মহড়া পরিচালনা করেছে। ভারতের ৭৮০টি জেলার মধ্যে প্রায় ২৫০টিতে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে - যেগুলি সীমান্তের কাছাকাছি থাকার কারণে অথবা প্রধান সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক কেন্দ্র বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো থাকার কারণে আক্রমণের জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল বলে মনে করা হয়। মহড়ার অংশ হিসাবে, বিমান হামলা থেকে সুরক্ষা অনুশীলনের অংশ হিসাবে দিল্লি সহ প্রধান ভারতীয় শহরগুলিতে ১৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়েছিল।
ভারত সরকারের কেউই ইসলামাবাদের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বলে কোনও পরামর্শ দেয়নি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গৃহীত অন্যান্য 'প্রতিশোধমূলক' পদক্ষেপগুলি প্রত্যাহার করা তো দূরের কথা। এর মধ্যে রয়েছে সমস্ত বাণিজ্য স্থগিত করা এবং পাকিস্তানের সাথে প্রধান স্থলপথ বন্ধ করা, এবং সবচেয়ে উস্কানিমূলকভাবে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তিকে ভারতের স্থগিত করা।
৬৫ বছর আগে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে, ভারত পাকিস্তানের সাথে দুটি ঘোষিত যুদ্ধ, বেশ কয়েকটি অঘোষিত যুদ্ধ এবং অসংখ্য সীমান্ত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তবে, এর আগে কখনও চুক্তিটি স্থগিত করেনি, যা ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু নদীর উৎসমুখ, যা পাকিস্তানের কৃষি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত সপ্তাহান্তে, ভারত সিন্ধু নদীর দুটি উপনদীর উপর বাঁধের মাধ্যমে জলপ্রবাহ সামঞ্জস্য করতে শুরু করেছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তানে পৌঁছানো ৯০ শতাংশ জল বন্ধ করে দেওয়া, যা পাকিস্তানের বর্তমান আবাদ মৌসুমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।
পাকিস্তানের জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিজেপি মন্ত্রীদের হুমকি আরও জোরদার করে, মোদী মঙ্গলবার, ভারতের সীমান্তবর্তী পাকিস্তান আক্রমণের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে ভারতের জল কেবল 'জাতীয় স্বার্থে' ব্যবহার করা হবে এবং 'আর বাইরে প্রবাহিত হবে না।'
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রতিদ্বন্দ্বী পুঁজিবাদী শক্তির মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধ। এর শিকড় ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মধ্যে নিহিত, যা স্পষ্টতই মুসলিম পাকিস্তান এবং হিন্দু ভারতে রূপান্তরিত হয়েছিল, যা নিজেই সেই প্রক্রিয়ার অংশ ছিল যেখানে স্ট্যালিনিজম সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিক দেশগুলির জাতীয় বুর্জোয়াদের সাথে যোগসাজশে সামাজিক বিপ্লব দমন এবং পুঁজিবাদকে স্থিতিশীল করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই কাজ করেছিল।
গত আট দশক ধরে, প্রতিদ্বন্দ্বী বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতা এবং সুবিধার জন্য তাদের লুণ্ঠনমূলক সংঘাত চালিয়ে অগণিত জীবন এবং সম্পদ নষ্ট করেছে। একই সাথে তারা সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়া উসকে দেওয়ার জন্য এবং ব্যাপক দারিদ্র্য এবং তীব্র সামাজিক বৈষম্য থেকে সৃষ্ট সামাজিক উত্তেজনাকে বাইরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই সংঘাতকে ব্যবহার করেছে।
ওয়াশিংটনের অগ্নিসংযোগকারী ভূমিকা
গত দুই দশক ধরে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চীনের মধ্যেকার কৌশলগত-সংঘাতের সাথে সাথে আরও বেশি জড়িত হয়ে উঠেছে, এতে একটি নতুন বিস্ফোরক মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের সূত্রপাতের সম্ভাবনা। জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে শুরু করে আজকের ট্রাম্প পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান উভয় রাষ্ট্রপতির অধীনে, ওয়াশিংটন ভারতকে আগ্রাসীভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ব্যবহার করার জন্য এবং চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করেছে।
ফলস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসময়ের তার প্রধান দক্ষিণ এশীয় মিত্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে হ্রাস করেছে, যার জন্য পাকিস্থানকে চীনের সাথে তার 'সর্বকালীন' অংশীদারিত্ব দ্বিগুণ করতে বাধ্য করেছে, যার ফলে ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লি উভয়ের সাথেই দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, এবং বিশেষ করে মঙ্গলবার রাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের পর থেকে, সমস্ত বৃহৎ শক্তি এবং ইরান, বাংলাদেশ এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি সহ বৃহত্তর অঞ্চলের সরকারগুলি থেকে অবিলম্বে উত্তেজনা হ্রাসের জন্য সতর্ক আহ্বান জানানো হয়েছে।
বরাবরের মতোই এই আহ্বানগুলো ভণ্ডামিপূর্ণ, কারণ প্রতিটি রাষ্ট্রই তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করে এবং তাদের কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করে।
সুতরাং, কোনও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই পাকিস্তানের উপর মোদী সরকারের স্পষ্টতই অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম আক্রমণ বা সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার নিন্দা করেনি বা পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্য ইসলামাবাদের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতার জন্য এর সমালোচনা করেনি।
২০১৬ এবং ২০১৯ সালে, প্রথমে ওবামা এবং তারপরে ট্রাম্পের অধীনে, আমেরিকা জোর দিয়ে পাকিস্তানের উপর নয়াদিল্লির সীমান্ত অতিক্রম আক্রমণের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করে, দাবি করে যে তার মিত্রের 'আত্মরক্ষা' এবং 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই' করার নামে আন্তর্জাতিক আইন বাতিল করার 'অধিকার' রয়েছে যেমনটি তার এবং তার ইজরায়েলি আক্রমণকারী কুকুরের রয়েছে।
আজ অবধি, মার্কিন কর্মকর্তারা 'উত্তেজনা কমানোর' জন্য বিলম্বিত আহ্বানের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন, এবং এর বেশিরভাগ দায়িত্ব পাকিস্তানের উপর বর্তিয়েছে।
'এটা খুবই ভয়াবহ,' বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন। 'আমি দেখতে চাই তাঁরা থেমেছে। এবং আশা করি তারা এখন থামতে পারবে।'
সংঘাতের নয়াদিল্লির বর্ণনার প্রতিধ্বনি করে তিনি আরও বলেন। 'যেমন কর্ম তেমন ফল, তাই আশা করি তারা এখন থামতে পারবে,' অস্পষ্টভাবে 'সাহায্য করবেন', এই ইঙ্গিত করার আগে বলেন যে 'যদি আমি কিছু করতে পারি'।
ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতির নিজেকে শান্তির মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশীয় মঞ্চের মত অন্য সব ক্ষেত্রেই একটি প্রহসন।
নয়াদিল্লির সাথে চীন-বিরোধী 'বিশ্বব্যাপী কৌশলগত অংশীদারিত্ব' নিশ্চিত করার জন্য ওয়াশিংটন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা ভারতকে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টায় প্রচণ্ড উৎসাহিত করেছে।
২০১৬ এবং ২০১৯ সালে ভারতের হামলার বিষয়ে পূর্বোক্ত সবুজ সংকেত ছাড়াও, এর মধ্যে রয়েছে:
- উচ্চ প্রযুক্তির মার্কিন অস্ত্র দিয়ে ভারতকে সজ্জিত করা;
- বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তিতে বাণিজ্যের সুযোগ নিশ্চিত করা, এটিকে অস্ত্র উন্নয়নের উপর দেশীয় পারমাণবিক কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করতে সক্ষম করা;
- নৌবাহিনীর উন্নয়নে সহায়তা করা;
- এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপক্ষীয় এবং চতুর্মুখী সামরিক-নিরাপত্তা বিনিময়ের একটি ক্রমবর্ধমান জালে এটিকে একীভূত করা;
- এবং বিতর্কিত কাশ্মীরে মোদি সরকারের ২০১৯ সালের সাংবিধানিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করা, যা ভারতের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরকে তার বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নিয়ে এটিকে কেন্দ্রীয় সরকার-নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছিল।
ভারত এবং পাকিস্তানের শ্রমিকদের অবশ্যই তাদের নিজ নিজ সরকার এবং শাসক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধ-প্ররোচনা এবং দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা বিশ্বকে সংস্কার করার সংগ্রামের একটি কেন্দ্রীয় স্থান হিসাবে রূপান্তরের বিরোধিতা করতে হবে।
একটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জন্য এবং প্রকৃতপক্ষে সমগ্র পৃথিবীর জন্য এক বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনবে, যা উভয় পক্ষের শাসক শ্রেণীর মুখপাত্ররা দাম্ভিকভাবে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনার কথা বলছেন তার দ্বারা তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অধিকন্তু, বহিরাগত আগ্রাসন শ্রেণীযুদ্ধের তীব্রতার সাথে সাথেই এগিয়ে চলেছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতাকে জোরদার করে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, ভারত ও পাকিস্তানের সরকার বিশ্বব্যাপী পুঁজি আকর্ষণ করার জন্য শ্রমিক শোষণকে তীব্রতর করার প্রচেষ্টায় তাঁদের সমস্ত বিরোধীদের ভয় দেখানো এবং নীরব করার চেষ্টা করছে।
সারা বিশ্বের মতো দক্ষিণ এশিয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল একটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা যা যুদ্ধের বিরোধিতাকে সামাজিক সাম্যের লড়াই এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সাথে সংযুক্ত করে - অর্থাৎ, সমাজতন্ত্রের জন্য একটি রাজনৈতিক আক্রমণ।
