নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের শ্রেণীযুদ্ধের প্রবল আক্রমণের প্রতিবাদে বুধবার, ৯ই জুলাই, ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একদিনের সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দেন।
কজের সময় বৃদ্ধি করা, অনিশ্চিত চুক্তিভিত্তিক- চাকরির বিস্তার, বেসরকারীকরণ, সরকারি পরিষেবার উচ্ছেদ এবং বেশিরভাগ ধর্মঘটকে অবৈধ ঘোষণা এবং ইউনিয়ন সংগঠনের ক্ষেত্রে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরির আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে ধর্মঘটকারীরা তাদের বিরোধিতা প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম (JPCTUF)-এর নেতারা এই ধর্মঘট ডাকেন এবং কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলি এটিকে সমর্থন করে।
JPCTUF-তে ১০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংস্থা এবং বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের শ্রমিক ফেডারেশন এতে রয়েছে। এদের মধ্যে বৃহত্তম এবং রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি প্রধান স্ট্যালিনবাদী-নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ফেডারেশন এতে রয়েছে - ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর সাথে যুক্ত সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (CITU) এবং অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC), যা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত। কংগ্রেস পার্টির ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (INTUC)ও JPCTUF-এর একটি বিশিষ্ট সদস্য।
বুধবারের জাতীয় প্রতিবাদ ধর্মঘট মূলত ২০শে মে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু হিন্দু আধিপত্যবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের ৭ই মে পাকিস্তানের উপর উস্কানিমূলক এবং অবৈধ 'অপারেশন সিন্দুর' সামরিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় JPCTUF তা বাতিল করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রগুলিকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। পাকিস্তান-বিরোধী জাতীয়তাবাদী-সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের উত্তেজনার কাছে আত্মসমর্পণ করে, JPCTUF এবং তার রাজনৈতিক মিত্ররা মোদী সরকারের নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করে এবং তার লুণ্ঠনমূলক বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশীয়ভাবে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এবং বিদেশে তার কর্মসূচিকে সহায়তা করে।
শাসক শ্রেণী এবং তার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের দ্বারা ক্রমাগত প্রচারিত সাম্প্রদায়িক এবং বর্ণগত বিভাজনকে অতিক্রম করে এই ধর্মঘটে শ্রমিক শ্রেণীর একটি বড় অংশ জড়িত হয়েছিল। এতে সরকারি কর্মচারী, ও ভারতের এখনও বিস্তৃত সরকারি ক্ষেত্রের বিভিন্ন কর্মী, অটোমোবাইলের মতো বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উৎপাদন শিল্পে নিযুক্ত ব্যক্তিরা এবং কিছুটা হলেও তথাকথিত অনান্য ক্ষেত্রের শ্রমিকরা এতে অংশ নিয়েছিলেন।
কয়লা খনি, ইস্পাত তৈরি, ব্যাঙ্ক, ডাক পরিষেবা এবং পাবলিক পরিবহনের মতো শিল্পগুলি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। তামিলনাড়ুর হোসুরে অশোক লেল্যান্ড প্ল্যান্ট সহ কিছু গাড়ি কারখানা আংশিকভাবে বন্ধ করতে হয়েছিল; অন্যদিকে মারুতি সুজুকি এবং হুন্ডাই সহ অন্যান্য কারখানাগুলি দাবি করেছিল যে তারা লাইনের গতি কমিয়ে এবং পরিচালকদের নিয়োগ করে উচ্চ স্তরের 'অনুপস্থিতির' মোকাবেলা করেছে।
রেল পরিষেবাগুলি সাধারণত প্রভাবিত হয়নি, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং বিহারে – বিক্ষোভকারীরা কিছু জায়গায় রেললাইন দখল করেছিল।
ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ছিল।
কেরালায়, যেখানে রাজ্য সরকার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিএমের নেতৃত্বে, রাজ্য পরিবহন মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি যে কেরালা রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (কেএসআরটিসি) বাসগুলি স্বাভাবিকভাবে চলবে তা সত্ত্বেও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছিল ।
পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) ধর্মঘট ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানে একাধিক জেলায় ধর্মঘট সমর্থকদের সাথে পুলিশ এবং তৃণমূলের গুন্ডাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ সংঘর্ষ হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, এক হাজারেরও বেশি ধর্মঘট সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃণমূলের একজন মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ধর্মঘটকে 'প্রতিবাদের ছদ্মবেশে গুন্ডামি' বলে অভিহিত করেছেন।
- দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি উৎপাদন কেন্দ্র গুরগাঁওয়ে, গাড়ী, নির্মাণ, ব্যাঙ্ক, স্বাস্থ্য এবং শিশু যত্ন রক্ষার হাজার হাজার শ্রমিক দমলা নেহেরু পার্ক থেকে ডাকঘর পর্যন্ত মিছিল করে একটি সমাবেশ করেন।
- ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামে, চা বাগানের শ্রমিকরা রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
- বেঙ্গালুরুতে, প্রায় ৫,০০০ ধর্মঘটী শ্রমিক ফ্রিডম পার্কে জড়ো হয় স্লোগান তুলে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। কর্ণাটকের অন্যান্য স্থানেও, হাজার হাজার ধর্মঘটী শ্রমিক হুব্বলিতে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন।
- তামিলনাড়ুতে, বাস এবং অটো-রিকশা পরিষেবা ব্যাহত হয়, বিশেষ করে রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর চেন্নাইতে এবং কোয়েম্বাটোর এবং তিরুচিরাপল্লীর উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে। অসংখ্য ব্যাঙ্ক এবং বীমা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং গাড়ী উৎপাদন ব্যাহত হয়।
- ঝাড়খণ্ডে ধর্মঘটের ফলে সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস লিমিটেড এবং ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের সমস্ত কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। সাথে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সহ এর সমস্ত ৪৫০টি শাখা এবং আঞ্চলিক অফিসও বন্ধ করে দেয়, যার মধ্যে প্রতিবেশী রাজ্য বিহার এর শাখাগুলিও রয়েছে।
- ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য মহারাষ্ট্রে, অটো, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাগুলিতে শ্রমিকদের অনুপস্থিতি, উৎপাদনে ব্যাঘাত এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে উৎপাদন হ্রাসের কথা জানিয়েছে। রাজ্যের পশ্চিম অংশে, মহারাষ্ট্র রাজ্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির শ্রমিকদের পদযাত্রা শিল্প ক্লাস্টারগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত করে।
- বিহারে, যেখানে এই বছরের শেষের দিকে রাজ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, বিরোধী দলগুলি রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের সাথে একত্রে বিক্ষোভ করেছে।
- সারা দেশের মতো উত্তর প্রদেশে (ইউপি) বেসরকারিকরণের হুমকির সম্মুখীন শ্রমিকরা ধর্মঘটকে জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য জুড়ে ব্যাঙ্ক এবং বীমা অফিসগুলিতে পরিষেবা বন্ধ বা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়াও, উত্তর প্রদেশের দুটি সরকারি মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক বিতরণ কোম্পানি, পিভিভিএনএল এবং ডিভিভিএনএলের আসন্ন বেসরকারীকরণের প্রতিবাদে ২,৭০,০০০ বৈদ্যুতিক শ্রমিক কাজ ছেড়ে বেড়িয়ে যান।
কর্ণাটকের ক্যানাড়া ব্যাংকে কর্মরত ধর্মঘটরত ব্যাংক কর্মচারী চেতন ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদককে বলেন, “সরকারি ব্যাংক পরিষেবা লাভের জন্য নয়, সেবামূলক কাজের জন্য পরিচালিত হওয়ার কথা, কিন্তু সরকার এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করে। এখন, মোদী সরকার যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যাংকগুলিকে বেসরকারিকরণ করতে চায়।”
শ্রমিকদের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলে। এখানে এক কেজি আলুর দাম ৪০ টাকা ($০.৪৬ মার্কিন ডলার) এবং একটি আপেলের দাম ৪৫ টাকা। তারা কীভাবে বলে যে এটি নিয়ন্ত্রণে আছে? এগুলো সরকারের কেন্দ্রীয় মূল্য সূচক (সিপিআই) এর কারসাজি মাত্র।”
২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মী গুজরাটে বিজেপি সরকারের ১২ ঘন্টা কাজের সময়ের সাথে কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। “আট ঘন্টা কাজের জন্য, ৮ ঘন্টা ঘুমের জন্য এবং ৮ ঘন্টা আমাদের ব্যক্তিগত সুস্থতার জন্য। যখন তারা আমাদের আরও বেশি কাজ করার দাবি করে, তখন আমরা কীভাবে এতে রাজি হতে পারি?”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) কর্মী আলোচনায় অংশ নেন। “ধর্মঘট,” “এটা খুবই প্রয়োজনীয়। আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, আমাদের কাজের সময় ১২ ঘন্টা, এমনকি ১৪ ঘন্টা করার চাপ সহ।” তার সহকর্মী আরও উল্লেখ করেন যে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার, সেইসাথে রাজ্য সরকারগুলি—হিন্দু আধিপত্যবাদী ডানপন্থীদের নেতৃত্বে হোক বা কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুর মতো, বিরোধী দল, শ্রমিক শোষণ বাড়ানোর জন্য “শ্রমবিধি লঘু” করছে।
ক্যানাড়া ব্যাংকের দ্বিতীয় একজন কর্মচারী জোমাটো এবং সুইগির মত সরবরাহকারী কর্মী এবং “অনান্য ক্ষেত্রের” কম মজুরি এবং নৃশংস কর্মপরিবেশের মুখোমুখি হওয়া শ্রমিকদের বিষয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন, পাশাপাশি ব্যাংকগুলি, সেগুলি ব্যক্তিগত বা এখনও সরকারী মালিকানাধীন যাই হোক না কেন, যেভাবে চাকরি কমানোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করতে চায় সে সম্পর্কে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই কথোপকথনগুলি জোর দিয়েছিল যে শ্রমিকরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত, প্রকৃতপক্ষে আগ্রহী, যা সামাজিক বিরোধিতা দমন করার জন্য, হিন্দু আধিপত্যবাদী প্রতিক্রিয়া উস্কে দেওয়ার জন্য এবং শ্রমিক শ্রেণীকে বিভক্ত করার জন্য আরও নির্লজ্জভাবে রাষ্ট্রীয় দমন এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি প্রয়োগ করছে।
এটি এখন ৩৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সকলের উপর তাদের শ্রম কোড 'সংস্কার' বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে। বিজেপি-প্রণীত শ্রম আইনগুলি কেবল বৃহত্তর শিল্পে শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং সেগুলিকে বন্ধ করার হাত থেকে সুরক্ষা প্রদানে বাধাই দেয় না, অনিশ্চিত এবং কম বেতনের চুক্তিভিত্তিক চাকরির প্রচার করে এবং শৌচাগার এবং পানীয় জলের মতো মৌলিক বাধ্যতামূলক ব্যাবস্থার বিধানগুলিকে বাতিল করে। আইনগুলি বেশিরভাগ শ্রমিক বিক্ষোভ কর্মকাণ্ডকে অবৈধ করে তুলবে।
শ্রমিকদের অধিকারের উপর আক্রমণে শাসক শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপক সমর্থনের উপর জোর দিয়ে, তামিলনাড়ু হাইকোর্টের একজন বিচারক গত সপ্তাহে হুন্ডাই শ্রমিকদের ধর্মঘটের হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। 'যখন প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী শিল্পগুলিকে ব্যবসা শুরু করার জন্য এখানে আসার আমন্ত্রণ জানান, যদি আপনি প্রতিবাদ চালিয়ে যান, তাহলে কে বিনিয়োগ করতে আসবে? দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে?'
মোদী সরকার এবং সমগ্র ভারতীয় শাসন ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে তাদের স্বাধীন শ্রেণীগত স্বার্থ প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে বুধবারের একদিনের সাধারণ ধর্মঘটে শ্রমিকরা জড়ো হয়েছিল। তবে, পুঁজিবাদপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন এবং স্ট্যালিনবাদী দলগুলি - সিপিএম এবং সিপিআই, এবং তাদের মাওবাদী সহযোগী, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশন - এর জন্য এটি ছিল একটি জঘন্য রাজনৈতিক কৌশল, যার লক্ষ্য ছিল শ্রমিক শ্রেণীর উপর তাদের দ্রুত ক্ষয়িষ্ণু কর্তৃত্বকে টিকিয়ে রাখা।
স্ট্যালিনবাদীরা যেমন স্বীকার করেছেন, বুধবারের ধর্মঘট ছিল ১৯৯১ সালে ভারতীয় বুর্জোয়ারা 'নব্য-উদারনীতি' নীতিতে পরিণত হওয়ার পর থেকে CITU এবং AITUC-এর ২৩তম দেশব্যাপী 'সাধারণ ধর্মঘট'। অর্থাৎ, যখন থেকে তারা তাদের রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য প্রদান করে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পূর্ণভাবে একীভূত হয়।
এই বিক্ষোভগুলি - যার মধ্যে ২০টি একদিনের ধর্মঘট ছিল এবং তিনটি ২০১৩, ২০১৯ এবং ২০২২ সালে দুই দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল - কখনও শ্রমিক শ্রেণীর একটি স্বাধীন রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ভারতীয় পুঁজিবাদ, এর 'বিনিয়োগকারী-পন্থী' নীতি এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে 'বিশ্বব্যাপী কৌশলগত' অংশীদারিত্বের বিরুদ্ধে গ্রামীণ জনগণকে শ্রমিক শ্রেণীর পিছনে একত্রিত করার দিকে পরিচালিত হয়নি, ।
বরং, তাদের লক্ষ্য ছিল শ্রমিক শ্রেণীর বিরোধীতাকে বুর্জোয়া সংসদীয় রাজনীতি এবং ট্রেড ইউনিয়ন এর যৌথ দর কষাকষির সংগ্রামের কাঠামোর মধ্যে আটকে রাখা। কংগ্রেস পার্টি বা বিজেপির নেতৃত্বে ডানপন্থী সরকারগুলিকে 'জনগণ-পন্থী' কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য স্ট্যালিনবাদীদের আহ্বান বছরের পর বছর ধরে এটির প্রতিফলন ছিল।
সিআইটিইউ, এআইটিইউসি এবং জেপিসিটিইউএফ-এর একটি প্রধান অভিযোগ হল যে মোদী সরকার বছরের পর বছর ধরে 'শ্রমিক সম্পর্ক' পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ত্রিপক্ষীয় সরকার, ইউনিয়ন, বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় শ্রম সম্মেলন আহ্বান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, স্তালিনবাদীরা শ্রেণী সংগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে দমন করেছে। তারা নব্য উদারনীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও, সংসদে একের পর এক ইউনিয়ন সরকারকে সমর্থন করেছে, যখন তারা তা বাস্তবায়ন করেছে। তাছাড়া, যেসব রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতায় ছিল, সেখানে তারা নিজেই 'বিনিয়োগকারী-পন্থী' নীতি অনুসরণ করেছে।পশ্চিমবঙ্গে, সিপিএম-নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার 'রুগ্ন শিল্পকে' বেসরকারীকরণ করেছে অথবা বন্ধ করে দিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করেছে এবং বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রকল্পের জন্য জমি দখলের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিক্ষোভকে সহিংসভাবে দমন করেছে।
বিনিয়োগকারীদের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচারের জন্য উদ্বিগ্ন, কেরালার বর্তমান সিপিএম-নেতৃত্বাধীন সরকার বুধবারের ধর্মঘট থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে, প্রতিশোধের হুমকিতে সরকারি কর্মচারী, কেএসআরটিসি এবং কেরালা রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ডের কর্মীদের ধর্মঘটে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে।
স্তালিনবাদী দলগুলি এবং তাদের সহযোগী ইউনিয়নগুলি হিন্দু আধিপত্যবাদী মোদী সরকারের অপরাধের দিকে ইঙ্গিত করছে ভারতীয় পুঁজিবাদকে অভিযুক্ত না করে এবং শ্রমিক শ্রেণীকে সংগ্রামে ডেকে আনার পরিবর্তে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভের কাছে এটিকে শৃঙ্খলিত করেছে। যেটি বিজেপিকে একটি বিকল্প ডানপন্থী পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চায়, এবং যা শ্রমিক শোষণ বৃদ্ধি এবং চীন-বিরোধী ভারত-মার্কিন কৌশলগত জোটের প্রতি কম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।
সারা বিশ্বের মতো ভারতেও শ্রমিকরা যদি না তারা পুঁজিবাদপন্থী ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন এবং ভুয়া শ্রমিক-বিরোধী প্রতিষ্ঠান 'বাম' দলগুলির রাজনৈতিক বিরোধিতায় শ্রেণী সংগ্রামের নতুন সংগঠন গড়ে না তুলে তাঁরা তাদের শ্রেণী স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
এর মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্র অ্যাকশন কমিটির একটি নেটওয়ার্ক যা সমস্ত শ্রমিক, চুক্তিভিত্তিক এবং স্থায়ী, সমস্ত ক্ষেত্র এবং সাম্প্রদায়িক ও বর্ণভেদ ছাড়া একত্রিত হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমিকদের সাথে তাদের সংগ্রামকে একত্রিত করার চেষ্টা করবে, একই সাথে ভারতীয় বুর্জোয়াদের প্রতিক্রিয়াশীল মহাশক্তিধর হবার স্বার্থ এবং শ্রমিক শ্রেণী-বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করবে।
সর্বোপরি, শ্রমিক শ্রেণীর স্থায়ী বিপ্লবের ট্রটস্কিবাদী কর্মসূচির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি গণ-বিপ্লবী দল প্রয়োজন যা ভারতীয় পুঁজিবাদ এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদকে উৎখাত করার, বর্ণবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করার এবং দক্ষিণ এশিয়ার সংযুক্ত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক সমতা নিশ্চিত করার লড়াইয়ে গ্রামীণ শ্রমজীবীদের একত্রিত করবে।
